বিএনপির ডাকা অবরোধে আর্থিক ক্ষতির মুখে পরেছে খাগড়াছড়ির পেঁপে চাষিরা। যানচলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অর্ধেক মূল্যে পেঁপে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক চাষি। আবার কোন কোন বাগানেই পেঁপে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
দেশের অন্যতম পেঁপে উৎপাদনকারী জেলা খাগড়াছড়ি। চলতি মৌসুমে ৫৭১ হেক্টর জমিতে পেঁেপ চাষ হয়েছে। জেলার ৯ উপজেলা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পেঁপে সরবরাহ করা হয়। চলতি মৌসুমে উৎপাদন ভালো হলেও অবরোধের কারণে যানচলাচল বন্ধ থাকায় পেঁপে বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পরেছে চাষিরা। স্বাভাবিক সময়ে ৪০ টাকা কেজি দরে পেঁপে বিক্রি হলেও এখন ২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার অনেক বাগান মালিক পেঁপে বিক্রি করতে না পারায় তা বাগানেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে কয়েকটি বাগানে গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়। জেলা দীঘিনালার ভৈরফা এলাকায় পেঁপে চাষ করেছে কৃপাময় চাকমা। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে তিন কানি জমিতে (১২০ শতক) পেঁপে চাষ করেছি। খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। চলতি মৌসুমে দেড় মাস আগে থেকেই পেঁপে বিক্রি শুরু করি। মূলত ঢাকায় এসব পেঁপে পাঠানো হয়। কয়েকদিন পর পর ৬শ থেকে ৭শ কেজি পেঁপে পেতাম। কিন্ত অবরোধের পর আর পাঠাতে পারছি না। আমরা সাধারণত যাত্রীবাহী গাড়ির ছাদে বা বাক্সে করে পেঁপে সরবরাহ করতাম। এখন এসব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখন বিক্রি করতে না পেরে বেশ কিছু পেঁপে নষ্ট হয়ে গেছে।
একই এলাকার কৃষক হাসান আলী বলেন, পাহাড়ের ঢালু অংশে পেঁপের চাষ করেছি। পেঁপে প্রায় পরিপক্ক হয়ে গেছে। এখন হরতাল–অবরোধ শুরু হয়ে গেছে। এখন পেঁপেগুলো বিক্রি করতে পারছি না। আমাদের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
আরেক পেঁপে চাষি রূপায়ন চাকমা বলেন, আপনারা আমাদের বাগানের অবস্থা দেখেন। স্বাভাবিক সময়ে পেঁপে বিক্রি করতাম কেজি প্রতি ৪০ টাকায় এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০ টাকায়। অবরোধ তুলে নিলে আমরা কৃষকরা উপকৃত হতাম।
অবরোধের কারণে প্রায় লক্ষাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। চাষিরা যাতে নিবিঘ্নে পেঁপে বিক্রি করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের সহায়তা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছে খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে চলতি মৌসুমে ১০ হাজার ৮৬২ মেট্রিক টন পেঁপে উৎপাদিত হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। কৃষক যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা পুষিয়ে উঠা খুব কঠিন। এখন ২০ থেকে ২৫ টাকায় পেঁপে বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রশাসন যদি সহায়তা করে সেক্ষেত্রে চাষিরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য যদি নিবিঘ্নে পরিবহন করা যায় তাহলে কৃষক লাভবান হবেন।
এদিকে সংকট নিরসনে পেঁপেসহ সকল ধরনের পণ্য পরিবহনের জন্য পুলিশি স্কটের ব্যবস্থা করা হবে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, রোববার সকালে আমরা বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পরিবহন সংগঠনের সাথে মিটিং করেছে। এখানে যাতে সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত না হয় সেজন্য পুলিশি স্কটের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।