ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ গত রোববার নগরের আগ্রাবাদে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনকালে তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল চট্টগ্রামবাসীর অবদানে তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষ এ হাসপাতালের গর্বিত অংশীদার। আমি চিকিৎসক এবং পরিচালকদের অনুরোধ করব চিকিৎসাসেবার মান আরও উন্নত করতে এবং রোগীদের যত্ন নিতে। কারণ আমাদের দেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রায়ই বাইরের দেশে চলে যাচ্ছে। কিন্তু আপনারা যদি এখানে ভালো চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে মানুষ আর বিদেশ যাবে না। মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের বাইরে অনেক প্রবাসী ভাই বোন আছেন যারা অনকোলজি বিশেষজ্ঞ। তাঁরা যদি মাঝে মাঝে এসে এখানে রোগীদের সময় এবং পরামর্শ দেন তাহলে হাসপাতালের সুনাম বাড়বে। এখানে রোগীদের স্বল্পব্যয়ে চিকিৎসাসেবার মান নিশ্চিত করতে হবে। কারণ যাদের পয়সা অনেক তারা চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারে কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে যারা একটু পিছিয়ে তারা যেন পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা এখান থেকে পায় সে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বদৌলতে চট্টগ্রাম সবদিকে এগিয়ে। এখানে কিছুদিন আগে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করা হয়েছে যা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় প্রথম। ফ্লাইওভারের কাজও শেষ পর্যায়ে। আবার ক্যান্সার হসপিটাল ও রিসার্চ সেন্টার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে চিকিৎসাসেবার দিকদিয়েও এগিয়ে গেছে।
আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, চট্টগ্রামে ক্যানসার চিকিৎসার অবস্থা বেহাল। সরকারি–বেসরকারি কোনো পর্যায়েই নেই পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা।এই রোগের রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে অপারেশন এবং কেমোথেরাপির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের। রেডিওথেরাপির অবস্থাও শোচনীয়। অবশেষে চট্টগ্রামে পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসার সব ধরনের সুবিধা নিয়ে আজ চালু হতে যাচ্ছে ক্যানসার হাসপাতালটি।
ক্যান্সার রোগীদের জন্য অত্যাধুনিক লিনিয়ার এঙিলেরাটর মেশিনসহ ক্যান্সারের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। রোগীদের জন্য এখানে সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ আইসিইউ, কেবিন, সাধারণ শয্যাসহ ১১ তলা ভবনের ১০০ শয্যার ব্যবস্থা থাকবে। ১০০ বেডের এই হাসপাতালে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ জন রোগীকে রেডিওথেরাপি দেওয়া যাবে বলে গেছে।
দেশে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা কত, তা জানা না গেলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা তথ্য অনেকের জানা আছে। ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে দ্য গ্লোবাল ক্যানসার অবজারভেটরি ক্যানসার বিষয়ে এই তথ্যটি প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, দেশে প্রতিবছর দেড় লাখ মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আর ক্যানসারে প্রতিবছর মারা যায় ১ লাখ ৮ হাজারের বেশি মানুষ। নিজস্ব কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় জনস্বাস্থ্যবিদেরা এই তথ্যই ব্যবহার করছেন। অন্যদিকে গত বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম অসংক্রামক ব্যাধিবিষয়ক জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, দেশে ক্যানসারে ভুগছে প্রায় ২০ লাখ মানুষ। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ‘দেশের ক্যানসার রোগীর তুলনায় চিকিৎসার আয়োজন অনেক সীমিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার কেন্দ্র বা হাসপাতাল থাকা প্রয়োজন। এসব কেন্দ্রে ক্যানসার শনাক্তসহ ক্যানসার চিকিৎসার তিন ধরনের (কেমোথেরাপি, সার্জারি ও বিকিরণ চিকিৎসা) পদ্ধতি থাকতে হবে। দেশে মানুষ ১৭ কোটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী ১৭০টি ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা দরকার। সরকারি ও বেসরকারি সূত্র বলছে, দেশে ক্যানসার কেন্দ্র আছে ৩৩টি। এর মধ্যে বিকিরণ যন্ত্র আছে ১৯টিতে। ক্যানসার চিকিৎসকদের একটি সংগঠন জানিয়েছে, ক্যানসারের চিকিৎসায় দেশে কমপক্ষে ২২০টি বিকিরণ যন্ত্র দরকার। সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে আছে ৫৭টি যন্ত্র। এর মধ্যে চালু আছে ৪৩টি। বেসরকারি হাসপাতালগুলো এখন বেশি মানুষকে বিকিরণ চিকিৎসা দিচ্ছে।’ বলা যায়, ক্যানসার রোগের চিকিৎসা সেবা অত্যন্ত সীমিত।
চট্টগ্রামে এ ক্যানসার হাসপাতাল চালুর মাধ্যমে অল্প খরচে মিলতে পারে দুরারোগ্য এই ব্যাধির চিকিৎসাসেবা। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রামে নেই কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল। হার্ট, কিডনি, লিভার, বার্ন চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সেবার জন্য রাজধানীতে আলাদা আলাদা হাসপাতাল থাকলেও সরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র অবলম্বন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সকল ধরনের রোগীকে সেখানেই ছুটতে হয়। এতে সীমিত সক্ষমতার হাসপাতালটির ওপর চাপও বেশি। জটিল বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য পৃথক পৃথক বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলা চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। আশা করছি, ক্যানসার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের এ দাবি পূরণে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হবে।