কোহলির রেকর্ড ছোঁয়া শতকের পর রবীন্দ্র জাদেজার স্পিনে ভারতের কাছে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে টানা চার ম্যাচ জিতে উড়তে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে গতকাল রোববার ভারতের জয় এসেছে ২৪৩ রানে। ৩২৬ রানের পুঁজি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ৮৩ রানে গুটিয়ে দিয়েছে স্বাগতিকরা।
ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর এটি। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুবার ৮৩ রানে অল আউট হয়েছিল তারা ২০০৮ ও ২০২২ সালে। আর ১৯৯৩ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৯ রান প্রোটিয়াদের সর্বনিম্ন। দুই দলেরই সেমি–ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত হয়েছে আগেই। আট ম্যাচের সবগুলো জিতে প্রথম রাউন্ডে শীর্ষে থাকা নিশ্চিত করে ফেলেছে ভারত।
এবারের বিশ্বকাপে রানের বন্যা বইয়ে দিচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তিনশ, সাড়ে তিনশ কিংবা চারশর নিচে যেন কোন রানই করে না দলটি। আর দলটির ওপেনার কুইন্টন ডি কক যেন রান মেশিনে পরিণত হয়েছেন এবারের বিশ্বকাপে। চারটি সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন এই ব্যাটার এরই মধ্যে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা বড় বড় যেসব রান সংগ্রহ করেছে তার সবগুলোই আগে ব্যাট করে। পরে ব্যাট করতে গিয়ে প্রোটিয়াদের যে কী দৈন্য দশা সেটা প্রমাণিত হয়েছিল নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। সে ম্যাচে ২৪৫ রান তাড়া করতে গিয়ে ২০৭ রানে অল আউট হয়ে হেরে গিয়েছিল। এরপর নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৭০ রান টপকাতে গিয়ে ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল প্রোটিয়ারা। আর গতকাল ভারত তাদের সামনে ৩২৬ রানের পাহাড় দাঁড় করিয়েছিল। সে পাহাড় ডিঙ্গানোতো অসম্ভব। তবে পাহাড়ে উঠতে গিয়ে এত তাড়াতাড়ি মাত্র ৮৩ রানে ধসে পড়বে দক্ষিণ আফ্রিকা সেটা বোধহয় ভাবেনি ভারতও। পরে ব্যাট করে ম্যাচ জেতাটা যেন দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য হিমালয় পাড়ি দেওয়ার মত। অন্তত তিনটি ম্যাচে পরে ব্যাট করতে গিয়ে সেটাই প্রমাণিত হলো। তাই পয়েন্ট তালিকায় প্রথম স্থানটায় বসা হলো না দক্ষিণ আফ্রিকার। টানা আট ম্যাচে জিতে অজেয় থাকার পাশাপাশি প্রথম স্থানটা নিজেদের দখলেই রাখল ভারত। এরই মধ্যে সেমি ফাইনাল নিশ্চিত করা দু’দলের টেবিলের শীর্ষ স্থান দখল করার লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৪৩ রানের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে শীর্ষেই থাকল ভারত।
কলকাতার ইডেনে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শুভমান গিল শুরু থেকেই ঝড় তুলতে থাকেন। প্রথম ৫ ওভারেই তুলে নেন ৬০ রান। ৬২ রানের মাথায় ফিরেন রোহিত শর্মা। রাবাদার বলে ভাবুমার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে মাত্র ২৪ বলে ৪০ রান করে আসেন রোহিত শর্মা। মেরেছেন ৬টি চার ২টি ছক্কা। ৯৩ রানের মাথায় ফিরেন আরেক ওপেনার শুভমান গিল। তিনি করেন ২৪ বলে ২৩ রান। এরপর ভারতকে টানতে শুরু করেন ভিরাট কোহলি এবং শ্রেয়াস আইয়ার। দু’জন মিলে গড়েন ১৩৪ রানের বিশাল জুটি। ৮৭ বলে ৭৭ রান করে লুঙ্গি এনগিদির বলে এইডেন মার্করামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন শ্রেয়াশ আয়ার। লোকেশ রাহুল খুব বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি কোহলির সাথে। তিনি ফিরেন ৮ রান করে। সুর্যকুমার যাদব ১৪ বলে ২২ রান করে ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে দলকে টানেন কোহলি। ধীরে ধীরে নিজেকে নিয়ে যান ক্যারিয়ারের ৪৯ তম সেঞ্চুরির দিকে। যেখানে আগে থেকেই অপেক্ষা করছেন শচীন টেন্ডুলকার। তাকে স্পর্শ করতে ছুটছেন কোহলি নিজের ৩৫ তম জন্মদিনে। তবে ভারতের রানের চাকা শুরুর দিকে যে গতিতে ছুটছিল মাঝখানে সেটা অনেকটাই ধীর গতির হয়ে যায়। ষষ্ঠ উইকেটে রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে ৪১ রান যোগ করেন কোহলি অবিচ্ছিন্নভাবে। আর তখনই ইনিংসের একেবারে শেষ ওভারে নিজের ৪৯ তম সেঞ্চুরিটা তুলে নেন কোহলি। ১১৯ বলে ১০টি চারের সাহায্যে সেঞ্চুরি পুরুন করা কোহলি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১২১ বলে ১০১ রান করে। আর তাতেই ভারত জড়ো করে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান। রবীন্দ্র জাদেজা অপরাজিত ছিলেন ১৫ বলে ২৯ রান করে। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ১টি করে উইকেট নেন লুঙ্গি এনগিদি, মার্কো জানসেন, কাগিসো রাবাদা, কেশভ মাহারাজ এবং তাবরিজ শামসি।
৩২৭ রানের পাহাড়সম টার্গেটে ছুটতে গিয়ে শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকা হারায় কুইন্টন ডি কককে। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন নিয়ে উপরে আসা অধিনায়ক টেম্বা ভাবুমার স্টাম্প উপড়ে ফেলেন রবীন্দ্র জাদেজা। এরপর মোহাম্মদ সামি আর রবীন্দ্র জাদেজার আঘাতে ফিরেন ডুসেন, মার্করাম এবং ক্লাসেন। ১৫ ওভারের আগেই ৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের দিকে এগুতে থাকে দক্ষিন আফ্রিকা। দলের ব্যাটিংয়ে শেষ ভরসা কিলার মিলার খ্যাত ডেভিড মিলারকেও কাবু হতে হয় জাদেজার ঘুর্নির সামনে। ১১ রান আসে মিলারের ব্যাট থেকে। ক্রমশ হন্তারক হয়ে উঠা জাদেজা চতুর্থ শিকার হিসেবে ধরেন কেশভ মাহারাজকে। কেশভকে ৭ রানে বোল্ড করে দেন তিনি। দলীয় ৭৯ রানে ৮ম ও ৯ম উইকেটের পতন ঘটে। প্রথমে ফিরেন মার্কো জানসেন। কুলদীপ যাদবের বলে রবীন্দ্র জাদেজার হাতে ধরা পড়েন তিনি নিজের ১৪ রানে। এরপর বিদায় নেন রাবাদা রবীন্দ্র জাদেজার পঞ্চম শিকারে পরিণত হয়ে। মাত্র ৬ রান করেন রাবাদা। এনগিদিকে শূন্য রানে বোল্ড করে দেন কুলদীপ। দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় মাত্র ৮৩ রানে ২৭.১ ওভারে। তাবরেইজ শামসী ৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। ভারতের হয়ে মোহাম্মদ শামি এবং কুলদীপ যাদব ২টি করে উইকেট নেন। ১টি উইকেট পান মোহাম্মদ সিরাজ। রবীন্দ্র জাদেজা ৩৩ রানে তুলে নেন ৫ উইকেট। তবে ম্যাচ সেরা হন ভিরাট কোহলি।