চট্টগ্রাম–কক্সবাজার চার লেনের জাতীয় মহাসড়ক করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। টানেল ঘিরে বৃহত্তর অর্থনৈতিক জোন গড়তে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ পরিকল্পনা গ্রহণ হয়েছে। গত ২ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী পরিষদের (একনেক) বৈঠকে প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পে পটিয়া, দোহাজারী, লোহাগাড়া ও চকরিয়ায় বাইপাস এবং কেরানিহাটে ফ্লাইওভারসহ পাঁচ পয়েন্টে ২৬ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে আর মাত্র দুই মাস পর ১ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরুর কথা রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০৩০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।
বলা বাহুল্য, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রথম দরকার একটি উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরকার সে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েই বিগত একযুগে যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তৈরি করেছে নতুন এক মাইলফলক। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল দিয়ে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটন শিল্পকে মাথায় রেখে তিন উন্নয়নবঞ্চিত পার্বত্য জেলায় যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে সরকার। পাহাড়ের প্রতিটি জনগণকে যোগাযোগ নেটওয়ার্কে আনা হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের মানুষও মেট্রোরেলে চড়বে। কিছুদিন আগেও এটি ছিল স্বপ্ন। কিন্তু হাসিনা সরকার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মাটির তলদেশ থেকে আকাশ পর্যন্ত সর্বত্র চলছে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। বিশ্বমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য নেয়া হয়েছে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে নিয়ে সাউথ এশিয়া সাব–রিজিওনাল ইকোনমিক কো–অপারেশন (সাসেক) আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় একটি সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ এগিয়ে চলছে। ‘প্রেক্ষিত পরিকল্পনা–২০৪১’ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব মহাসড়ক ছয় লেন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে আট লেনে উন্নীত ও দেশের প্রতিটি জেলার সঙ্গে রেল পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌ–পথকে সমান গুরুত্ব দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ চলছে।
আজাদীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়নে পাঁচ পয়েন্টে ২৬ কিলোমিটার চার লেন সড়ক উন্নয়নে ৮ হাজার ৫০০ শত কোটি টাকার পরিকল্পনায় ৮০.৭৪৯ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ কাজে ব্যয় হবে ১৫২২ কোটি ৭৫ লাখ ১১ হাজার টাকা, পুনর্বাসনে ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা, মাটির কাজে ব্যয় হবে ১৮০ কোটি ৮৮ লাখ ৮২ হাজার টাকা, ২২.০৭২ কিলোমিটার পেভমেন্টে ব্যয় হবে ৭০১ কোটি টাকা, ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজে ব্যয় হবে ২০৮৮ কোটি টাকা, ১৩টি ব্রিজ নির্মাণ কাজে ব্যয় হবে ১২৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা, কালভার্ট নির্মাণ কাজে ২৫৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ১২১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, রক্ষাপ্রদ কাজে ব্যয় হবে ১৩৮ কোটি টাকা, রোড সেফটি ফ্যাসিলিটিজ কাজে ব্যয় হবে ১৯৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা, সফট সয়েল ট্রিটম্যান্ট কাজে ১৭৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, ইউটিলিটি স্থানান্তর কাজে ব্যয় হবে ৮০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, ডিজাইন এবং সুপারভিশন পরামর্শ কাজে ২৭৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা, প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট কাজে ৬২৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা ও সিকিউরিটি সার্ভিস কাজে ৩৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কটি হবে জাতীয় মহাসড়ক। আর এই সড়কে ঢাকা চট্টগ্রাম বঙ্গবন্ধু টানেল হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সহজ যানজট মুক্ত যাতায়াত ব্যবস্থা তৈরি হবে। এতে চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজার হয়ে এই অঞ্চলে তৈরি হবে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন। সেই সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষার মান উন্নয়ন, নাগরিক জীবন ও উন্নত সমাজ ব্যবস্থায় আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
বাংলাদেশের অগ্রগতি মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা যখনই নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন, তখনই জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন। সমগ্র বাংলাদেশকে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনাই ছিল তার সরকারের প্রচেষ্টা। যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতিতে সরকারের সাফল্যকে জনগণ উপভোগ করার মধ্যেই আনন্দ নিহিত।