চট্টগ্রামের ফুটবলের উন্নতির বড় অন্তরায় হিসেবে ধরা হয় চট্টগ্রামের রেফারীকে। যদিও মাঝখানে কিছুটা উন্নতি হচ্ছিল এই রেফারিংয়ে। কিন্তু বিচারকের দায়িত্ব আর কর্তব্যের কথা ভুলে গিয়ে রেফারী সমিতিতে যখন জুয়ার আসর বসানো হলো, নানা অপকর্মের আখড়া বানানো হলো, মদ, গাজার আসর বসানো হলো, যে সব রেফারী এসবের প্রতিবাদ করল তাদেরকে নানাভাবে হেনস্তা করে বের করে দেওয়া হলো। গৃহপালিত কিছু রেফারী দিয়ে চট্টগ্রামের ফুটবল পরিচালনার চেষ্টা করা হলো। তখন তার প্রভাব পড়তে লাগল বারবার খেলার মাঠে। একের পর এক ম্যাচে ভুল সিদ্ধান্ত, খেলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়া, কারো কারো মতে পরিষ্কারভাবে পক্ষপাতিত্ব করা, সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের ফুটবল লিগে প্রায় প্রতিদিনই ঘঠে নানা অঘটন। আর সে সবই কেবলই অযোগ্য রেফারীর কারণে বলে বহুবার জানিয়েছেন বিভিন্ন দলের কর্মকর্তারা। এমনকি খোদ জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কর্মকর্তারাও। কিন্তু রেফারীর বিপক্ষে কোন ধরনের শাস্তি বা তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি। রেফারীর একটি সিদ্ধান্তের কারণে একটি দলের স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে। অথচ তার প্রতিবাদ করা যাচ্ছে না। কোন প্রতিকার মিলছে না।
গতকাল ছিল লিগের শেষ দিন। আর সে শেষ দিনে বেশ কিছুক্ষণ মাঠে বসে প্রত্যক্ষ করলেন সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক এবং রেফারী সমিতির সভাপতি আ.জ.ম নাছির উদ্দিন। তিনি মাঠে বসে দেখলেন তার রেফারীর যোগ্যতা। তাইতো খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনি একহাত নিলেন রেফারীকে। রেফারী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে তিনি পরিষ্কার বললেন তার রেফারীর কারণেই চট্টগ্রামের ফুটবলের সৌন্দর্য ব্যবহত হচ্ছে। তার কাছে কোন যোগ্য রেফারী নেই। যেসব রেফারী রয়েছে তাদের দিয়ে এই লিগ চালানো সম্ভব নয়। প্রতিনিয়ত ভুল করেছে আর উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ম্যাচ পরিচালনা করেছে রেফারীরা। যার প্রমাণও তার কাছে রয়েছে বলে পরিস্কার জানিয়ে দিলেন আ.জ.ম নাছির উদ্দিন। তিনি এসব রেফারীদের তার কাছে নিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দেন রেফারী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে। তিনি প্রয়োজনে রেফারীদের শস্তির ব্যবস্থাও করবেন বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। গতকাল পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের শুরুতে তার এমন বক্তব্য অনেককেই হতবাক করেছে। কারন এই রেফারী নিয়ে নানা সময় অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মেলেনি। তাই অনেকেই বলেছেন নাছির সাহেব রেফারীদের মানটা একটু দেরিতে টের পেলেন। আরেকটু আগে টের পেলে হয়তো চট্টগ্রামের ফুটবলের এই দৈন্য দশা কিছুটা কমতো। এই রেফারীর সমিতির অবশ্য শক্তির প্রধান উৎস তাদের সভাপতি। এতদিনে সভাপতি সাহেব বুঝলেন তার রেফারীরা কোন জায়গায় রয়েছে। তাইতো তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ভবিষ্যতে প্রয়োজনে ঢাকা থেকে রেফারী এনে কেরা চালাবেন। তবুও এই রেফারী দিয়ে আর খেলা চালানো হবে না।
গতকাল বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি মাঠে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী ক্লাব কর্মকর্তাদেরও একহাত নিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা মাঠে নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেননা তারা মাঠে আসবেননা। প্রয়োজনে দূরে থেকে খবর নেবেন। আপনার দলের খেলার কি অবস্থা। কিন্তু মাঠে এসে বিশৃংখলা করবেন না। এ ধরনের বিশৃংখলা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে মাঠে আসবেন, না হয় আসবেননা। পাশাপাশি তিনি জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনেরও সমালোচনা করেন তার বক্তব্যে। লিগের খেলার মান একেবারেই পছন্দ হয়নি তার। চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার লিগের মান আরো উন্নত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। আর সে জন্য যারা নীতি নির্ধারণী ফোরামে রয়েছেন তাদের আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন প্রিমিয়ার লিগ থেকে কোন খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে না। খেলোয়াড় সৃষ্টি হবে তৃতীয় বিভাগ থেকে। কাজেই প্রিমিয়ার লিগে সবকিচু উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত। তিনি ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতির দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।