সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বাসস | শুক্রবার , ৩ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশের নামে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এগুলো আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরে তাদের আসল চেহারা সামনে নিয়ে আসতে সাংবাদিক সমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের বলবো, এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং দায়িত্ব পালনকালে আপনাদের ওপর যারা আক্রমণ করেছে তাদের আসল চরিত্র আন্তর্জাতিকভাবে আপনাদের তুলে ধরা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের মাটিতে ফেলে পিটানোআমার মনে হয় বাংলাদেশে এধরনের ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা আর দেখা যায়নি। এর জবাব বিএনপিকে দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর আক্রমনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, কোনো কোনো পত্রিকা এটাকে আবার কভার দেয়ারও চেষ্টা করেছে। তাদের ধিক্কার জানাই। সেদিন গায়ের জ্যাকেটে ‘প্রেস’ স্টিকার লাগিয়ে যুবদল কর্মীর সন্ত্রাস ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে যারা এ ধরনের অপকর্ম করেছে তারা ধরা পড়ে গেছে। সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার শাস্তি এদেরকে পেতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী নির্যাতিত ও ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের পাশে থাকার বিষয়ও সকলকে আশ্বস্ত করেন।

তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দীপ আজাদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি ও মহাসচিবদের অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনসংগ্রাম আমরাও করেছি। আন্দোলনের নামে এধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি ও আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল, আমরা বাধা দেইনি। তারা কথা দিয়েছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। দেখা গেল তারা সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। সাংবাদিকদের টার্গেট করে তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন চালানো হয়েছে, এটা অমানবিক। সাংবাদিকদের মাটিতে ফেলে পেটানো হয়। এটা কেন করা হলোসে প্রশ্নের জাবাব বিএনপিকে দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের ওপর অত্যাচার হলো, যা এর আগেও আমরা দেখেছি। পুলিশকেও মাটিতে ফেলে পেটানো হয়, অচেতন হয়ে যাওয়ার পরও মারা হয়। তাদেরকে কোপানো হয় এবং ঢিল মারা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে তারা শান্তি সমাবেশ করতে এসে এই ইট পাথর, অস্ত্র্ত্র কোথায় পেল? তারা যে কোপাল, সেটা (ধারাল অস্ত্র) কোথায় পেল? তারমানে তাদের উদ্দেশটাই আগাগোড়া খুব খারাপ ছিল। অগ্নিসন্ত্রাস এবং জ্বালাও পোড়াও এটাই এদের চরিত্র। নির্বাচন ঠোকানোর নামে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এবং অগ্নিসন্ত্রাস তারা করেছিল। সেখানে নির্বাচন তারা ঠেকাতে পারেনি নিজেরাও অংশগ্রহণ করেনি। হত্যা, খুন, গুম এগুলোই তারা খুব ভাল পারে।

সেদিনের নৈরাজ্যের বর্ননা দিতে গিয়ে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনের সঙ্গে এর তুলনা করে তিনি পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে হামলা, অত্যাচারনির্যাতন, অ্যাম্বুলেন্স পোড়ানো, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে ধাওয়া করা ও হামলার কথা উল্লেখ করেন। এতটা অমানবিক আচরণ কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারে না। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি আমলে পুলিশ দিয়ে সাংবাদিকর ওপর বর্বর নির্যাতনের কথাও এ সময় স্মরণ করিয়ে দেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এদের কোনো অধিকার নেই। যারা সন্ত্রাসজঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে তাদের কোনো অধিকার নেই। তারা এদেশের মানুষের কল্যাণ চায় না। এদেশের মানুষের তারা শত্রু, এটাই আমি মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ, সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্তর্জাতিক সংগঠন এমনকি মানবাধিকার সংস্থাগুলো যারা সামান্য ঘটনা ঘটলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে তাদের বিষয়টি নিয়ে চুপ করে থাকার এবং কোনো কথা না বলার কঠোর সমালোচনা করেন।

সাংবাদিকদের জমি সংক্রান্ত তার নিকট আবেদন দেয়ার বিষয়ে বলেন, একটা জমির আবেদন দিয়েছেন আমি দেখবো। জেলাভিত্তিক আবাসন প্রকল্প তৈরি করে দেবো। সেখান থেকে আপনারা আবাসন যাতে পান, সে ব্যবস্থা করবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা নিজেও সাংবাদিক ছিলেন। যার কারণে আপনাদের মাঝে এলে আমি দাবি করি, আমি আপনাদেরই পরিবারের একজন। সাংবাদিক কলাকুশলীদের যাতে কর্মসংস্থান হয় সেজন্য সব কিছু বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তথ্য অধিকার আইন, তথ্য কমিশন ও জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭, জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা ২০১৪ করেছি।

তাঁর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছে, যেখানে রেলসংযোগও দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মেট্রোরেল, এলিভেটেড এঙপ্রেসওয়ে, কর্ণফ’লী টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট১ উৎক্ষেপনসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে এধারা অব্যাহত রাখতে তাঁদের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’য় ভোট দেয়র জন্য ও সকলের প্রতি অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজেল হত্যা দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধধ্বংসস্তূপ নাকি উন্নত দেশ, কোনটা চান