আটক বা তল্লাশির ক্ষমতা না দিয়েই সংসদে পাস হয়েছে আলোচিত ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল, ২০২৩’। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বৃহস্পতিবার বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন এবং পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই–বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। গত ২৩ অক্টোবর সংসদে বিলটি তোলা হয়েছিল। সেখানে আনসার ব্যাটালিয়নকে আটক ও তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি বিলটির এ সংক্রান্ত ধারা সংশোধনের সুপারিশ করে।
এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের ২৫তম ও শেষ অধিবেশনে বিল পাস হয়েছে ২৫টি। অধিবেশনটি ছিল নয় কার্যদিবসের। তবে অধিবেশনের প্রথম দিন তিন সংসদ সদস্যের মৃত্যুজনিত কারণে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার পর ওই দিনের সব কাজ স্থগিত রেখে অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। পরদিন থেকে এ অধিবেশনের আট কার্যদিনে মোট ২৫টি বিল পাস করা হয় এর মধ্যে শেষ দিনেই (বৃহস্পতিবার) সাতটি বিল পাস করে বিল পাসের রেকর্ড তৈরি করল জাতীয় সংসদ। এর আগে একাদশ সংসদের ২৪তম অধিবেশনে আট দিনে ১৮টি বিল পাস হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত বিল ছিল ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন বিল–২০২৩।’
২৩ অক্টোবর সংসদে উত্থাপিত বিলের ৮ ধারায় বলা হয়েছিল, ‘কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যের সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধীকে আটক করে অবিলম্বে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে এবং ক্ষেত্রমতো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আটক ব্যক্তির দেহ তল্লাশি; কোনো স্থানে প্রবেশ ও তল্লাশি এবং মালামাল জব্দ করতে পারবে।’
আনসার বাহিনীকে ‘আটকের ক্ষমতা দেওয়ার বিধান’ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ‘আপত্তি’ জানানো হয় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এছাড়া বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানান। খবর বিডিনিউজের।
এ প্রস্তাবকে ‘ভয়াবহ দুশ্চিন্তার ও আতঙ্কের বিষয়’ হিসেবে বর্ণনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘পুলিশিং কিন্তু আলাদা জিনিস; এখানে সব কিছু কোড অব কনডাক্ট আলাদা, আইন আলাদা সবকিছু আলাদাভাবে পরিচালিত হয়। আনসারের কাজটা এমন না; তারা একটা ভিন্ন প্রতিষ্ঠান।’ পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, আনসার বাহিনীকে গ্রেপ্তার করার পারমিশন কখনও দেওয়া হয়নি, আজকেও দেওয়া হয়নি এবং কোনো আইন দ্বারা সেটা দেওয়ার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধির আওতার ভেতরে থেকে সমস্ত আইনশৃক্সখলা বাহিনীকে কাজ করতে হবে, এ হল মূল কথা। পরে বিলের ওই ধারায় সংশোধনী আনার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। বৃহস্পতিবার পাস হওয়া বিলে ব্যাটালিয়ন সদস্যদের এখতিয়ার ও ক্ষমতা সম্পর্কিত এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্য তার সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যের সংঘটিত অপরাধের বিচার করার জন্য সংক্ষিপ্ত আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত গঠন করা যাবে এবং বিদ্রোহের মত অপরাধের বিচার করার জন্য বিশেষ আনসার ব্যাটালিয়ন আদালত গঠন করা যাবে।
এই বিশেষ আনসার ব্যাটালিয়ন আদালতে বিদ্রোহের মত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড বা অন্যূন ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া যাবে।
বিলে এও বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে করতে হবে। কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যের ৯০ দিনের বেশি কারাদণ্ড হলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত হবেন।
বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, ১৯৯৫ সালে ব্যাটালিয়ন আনসার আইন (১৯৯৫ সালের ৪ নম্বর আইন) প্রণয়ন করা হয়। বিদ্যমান ব্যাটালিয়ন আনসার আইন, ১৯৯৫ এ বিদ্রোহ ও তদসংশ্লিষ্ট গুরুতর অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান নেই। দেশের অভ্যন্তরীণ জননিরাপত্তা, আইনশৃক্সখলা রক্ষা, আর্থ–সামাজিক উন্নয়ন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সহায়তার মতো কাজের জন্য আনসার ব্যাটালিয়নকে আরও দক্ষ করার প্রয়োজন রয়েছে। এ ছাড়াও বিদ্রোহ সংঘটন সংক্রান্ত অপরাধ বিচারের বিধান অন্তর্ভুক্তকরণ এবং কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাটালিয়ন আনসার আইন, ১৯৯৫–এর অধিক সংশোধনকল্পে যুগোপযোগী একটি নতুন আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা থাকায় আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩ প্রণয়ন করা হচ্ছে।
বিল পাসের প্রক্রিয়ায় আলোচনায় অংশ নেন সংসদে বিরোধী দলের সদস্য মুজিবুল হক, কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, রওশন আরা মান্নান, পীর ফজলুর রহমান, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, রুস্তম আলী ফরাজী ও স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবলু।