বনভূমি দখলে নিতে উখিয়ায় ভূমিদস্যুদের তাণ্ডব

শিক্ষার্থীসহ আহত ৮

উখিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৩ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

উখিয়ায় সরকারি বনভূমি দখলে নিতে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। কয়েক যুগ ধরে বসবাস করা লোকজনদের মারধর করে তাদের রোপিত কয়েকশত গাছপালা কেটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপর থেকে বিকাল পর্যন্ত উখিয়া ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন গুচ্ছগ্রাম এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ও এর আগেরদিন বুধবার বনবিভাগ ঘটনাস্থল থেকে গাছগুলো জব্দ করে নিয়ে গেছে। জানা যায়, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের উখিয়া বন রেঞ্জের আওতাধীন উখিয়া বন বিটের গুচ্ছগ্রাম এলাকায় পতিত বনভূমিতে গত ৩২ বছর ধরে বসবাসকারী ২১ পরিবারকে ভিটেমাটি ছাড়া করে তাদের বসতভিটা দখলের অপচেষ্টা চালিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র। যার জের ধরে প্রায় ৫ একর পতিত বন ভূমিতে রোপিত ৩ হাজারের অধিক ফলদ ও বনজ গাছ কেটে সাবাড় করে দেয়া হয়েছে। এসময় গাছ কাটতে ও বসতভিটার ঘেরা বেড়া ভাঙচুরে বাধা দিলে মারধরে কলেজ শিক্ষার্থী সহ ৮ জন আহত হয়েছে। পরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে গেলে ভূমিদস্যুরা পালিয়ে যায়। প্রকাশ্যে দিবালোকে সন্ত্রাসী কায়দায় ভূমিদস্যুরা ৬/৭ ঘন্টাব্যাপী তাণ্ডব চালালেও বন বিভাগের ভূমিকা ছিল রহস্যাবৃত। ঘটনার দিন গাছ ও বসতভিটার ঘেরা বেড়া ভাঙচুরে বাধা দিতে গেলে ভূমিদস্যুদের হামলায় আহত হন উখিয়া ডিগ্রি কলেজ শিক্ষার্থী কুলসুমা আকতার, ইয়াছিন আকতার রেখা, উম্মে সালমা, কামাল হোসেন। তাদেরকে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। গতকাল সকালে দেখা গেছে, এলোমেলোভাবে যত্রতত্রভাবে পড়ে আছে অসংখ্য কাটা গাছ। আম, কাঁঠাল, লেবু, বরই, সুপারী, তেতুঁলসহ ফলদ ও বনজ গাছগুলো বিভিন্ন আকারের।

বসবাসরত পরিবারগুলোর প্রধান আবদুল মজিদ, শাহেদুল হক, মাহামুদুল হক, কামাল উদ্দিন, আবদুল সালাম, সাদ্দাম হোসেন, আবুল কাসেম, জুনাইদ, আমির হামজা, কামাল উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, মো. শাহেদ, মো. বেলাল, মাহবুব আলম, রফিক উদ্দিন, সৈয়দ হামজা, রোজিনা আকতার, বেলাল উদ্দিন, জাফর আলম, আবদুল জব্বার, মাহামুদুল হাসান। যারা পেশায় ইজিবাইক (টমটম) চালক, শ্রমিকমজুর। গত ৩২ বছর ধরে সরকারি এই জমিতে বসবাস করে আসছে এ ২১ টি পরিবার।

ভুক্তভোগীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে ৪০/৪৫ জন আকস্মিকভাবে বেপরোয়াভাবে গাছ কাটতে থাকে। এসময় এসব পরিবারের সদস্যরা বাধা দিলে কয়েক দফা হামলায় ৮ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব বিকাল ৪ টার দিকে ঘটনাস্থলে গেলে গাছ কাটারত প্রভাবশালীরা পালিয়ে যায়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বনবিভাগ গাছগুলো জব্দ করে।

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে ভূক্তভোগী পরিবারের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) ইকবাল বাহার তা অস্বীকার করেন। তবে তিনি ওই এলাকায় একাধিক বসতভিটায় গাছ কাটা হয়েছে বলে জানান। গাছ কাটার খবর পেয়ে অন্যান্যদের মতো তিনিও ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। কারা এবং কেন এই গাছ কেটেছেন তিনি জানেন না বলে জানান।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গাছগুলো জব্দ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ পিকআপ গাছ অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনাস্থলে আরও গাছ রয়েছে। এ ব্যাপারে উখিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালেহ আহমেদ জানান, উক্ত জমি সংলগ্ন ৬০ একরের বেশি সরকারি খাস জমি রয়েছে। যেখানে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম নির্মাণের একটি প্রকল্প সরকারিভাবে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে এখনও সরকারিভাবে জমি অধিগ্রহণের কোনো প্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি। প্রক্রিয়া শুরু হলে নোটিশ প্রদান করে বসবাসকারীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার গাছ কেটে সাবাড় করা এবং বসবাসরতদের মারধরের সত্যতা পাওয়া গেছে। কারা এ ঘটনা সংঘটিত করেছে এখনও নিশ্চিত না। এ ব্যাপারে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশ্বশুর বাড়িতে রোহিঙ্গা যুবকের ঝুলন্ত মরদেহ
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে নির্বাচনের আগে নির্বিচার গ্রেপ্তার-সহিংসতা চায় না জাতিসংঘ