হরতাল–অবরোধের মধ্যে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ প্রশংসাযোগ্য। দৈনিক আজাদীতে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক রাখার জন্য বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সবাই মতামত পেশ করেছেন। সভায় জেলা প্রশাসক বলেছেন, যেকোনো মূল্যে চট্টগ্রামের পণ্য পরিবহন ও সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা হবে। গত মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত খাতুনগঞ্জ ও বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখা ও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে এ বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক বলেন, ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যের কয়েকটি টিম টহল শুরু করেছে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রামের প্রতিটি মোড়ে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যেকোনো মূল্যে গাড়ি চালানোর কথা বলেছেন বাস পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা।
এদিকে, অসাধু চক্রের কাছে ভোক্তারা জিম্মি হয়ে আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে একেক সময় একক পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে অতিরিক্ত দামে। যা ৭ দিন আগেও ছিল ৪০–৫০ টাকা। যদিও দেড় মাস আগে সরকার কেজিপ্রতি আলুর দাম বেঁধে দিয়েছিল ৩৫ টাকা। এখন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। যা ৭ দিন আগেও ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকার নির্ধারিত দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখের সামনে করা হচ্ছে। এমনকি কার কারণে বাজারে এমন পরিস্থিতি তা চিহ্নিত করেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা না করে পণ্য আমদানির ঘোষণা করে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। ফলে অসাধু সেই চক্র আরও বেশি সুযোগ পেয়ে ভোক্তার পকেট কেটে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা।
এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে। তাঁরা বলেন, ‘এই দাম বেঁধে দেয়াকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তবে এটা কার্যকর করতে হলে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। এই দাম বেঁধে দেয়ার অর্থ হলো কিছু পণ্য নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা সমাধানের চেষ্টা করা। কিন্তু সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। সংকটের সময় পণ্যগুলোর আমদানি উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এমনভাবে উন্মুক্ত করতে হবে, যাতে কোনো সিন্ডিকেট এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। ভোজ্য তেলের আমদানি যেমন হাতে গোণা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে, সেটা হলে চলবে না।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান পত্রিকান্তরে বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে ক্রেতারা জিম্মি। এমনকি তারা সরকারের আদেশও মানছে না। দেখা গেছে, দেশে যতবার পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, বিক্রেতারা সেটা কার্যকর না করে ক্রেতার কাছে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করেছে। কিন্তু যেসব তদারকি সংস্থা এই মূল্য কার্যকর করবে তারাও অসাধুদের কাছে এক প্রকার অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। ফলে ক্রেতারা কোনো প্রকার সুফল পাচ্ছে না। তাই তদারকি সংস্থার কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে হচ্ছে। এদিকে সোমবার সচিবালয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আলুর কেজি কোনোভাবেই ৪০ থেকে ৪৫ টাকার বেশি হতে পারে না। ৬০, ৭০ ও ৮০ টাকা আলুর কেজি হবে কেন? মানুষের ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করে আমরা আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছি। আমার মনে হয়, এটা তাদের জন্য সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পণ্যের দামের সঙ্গে উৎপাদন খরচ এবং সরবরাহ দুটিই যুক্ত। সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হলেও পণ্যের দাম বাড়তে পারে। পর্যাপ্ত পণ্য থাকার পরও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্য মজুত বা সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লোটার অভিযোগ আছে। সুতারং পণ্য সরবরাহ যাতে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য সংকট দেখা দিলে আমদানির মধ্যমে সেটা ঠিক করা যায়। এর আগে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হবে এমন খবরে ডিমের দাম কমে গিয়েছিল। তাই পণ্যের সরবরাহ চেইন যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।