একজন বহুমাত্রিক সংস্কৃতজন বলতে যা বোঝায়–দেশের বরেণ্য অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর ঠিক তা–ই। তিনি একাধারে অভিনেতা, আবৃত্তিকার, চলচ্চিত্র অভিনেতা, নাট্যজন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পুরোধা পুরুষের মধ্যে অন্যতম। নন্দিত অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর যে অঙ্গনেই পদচারণা করেছেন, সে অঙ্গনের প্রান্তসীমা ছুঁয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। হয়েছেন সবার প্রিয়জন, সবার মধ্যমণি হিসেবে। অনেক গুণের অধিকারী আসাদুজ্জামান নূর তার একাধিক পরিচয় ছাপিয়ে অভিনেতা হিসেবেই বুঝি পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করেন। তাছাড়া আসাদুজ্জামান নূর নামটি উচ্চারণের সঙ্গে তার অনুরাগীদের মানসপটে অভিনেতা হিসেবেই চিত্রিত হন।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সদস্য, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সদস্য ও বাংলাদেশ রাশিয়া মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নব্বইয়ের দশকে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে ‘বাকের ভাই’ চরিত্রে রূপ দান করে দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন নূর। দেশ টিভিতে প্রচারিত ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্বও পালন করেন তিনি। নূরের অভিনয় জীবনের সূচনা থিয়েটার থেকে। ১৯৭২ সাল থেকে তিনি নাগরিক নাট্য সমপ্রদায়ের সঙ্গে জড়িত হন। সে সময়ে তিনি ‘চিত্রালী’র অভ্যর্থনাকারী ছিলেন এবং বিখ্যাত অভিনেতাদের সাক্ষাৎকার নিতে যেতেন। এভাবেই তিনি আলী জাকেরের সঙ্গে দেখা করেন, যিনি ছিলেন নাগরিক সমপ্রদায়ের। নিজের পরিচালনায় নূর ৫০টিরও বেশি বিজ্ঞাপনচিত্র ও ভিডিও ছবি নির্মাণ করেন। টেলিভিশনে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ‘এইসব দিনরাত্রি (১৯৮৫)’, ‘অয়োময় (১৯৮৮)’, ‘কোথাও কেউ নেই (১৯৯০)’, ‘আজ রবিবার (১৯৯৯)’ ও ‘সমুদ্র বিলাস প্রাইভেট লিমিটেড (১৯৯৯)’।