ভারতের ক্রিকেটটা ধর্মের মত। যেখানে তাদের ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকার। আর পশ্চিমবঙ্গে ক্রিকেটের চাইতে ফুটবলটা বেশি জনপ্রিয়। তবুও ওপার বাংলায় প্রিন্স অব কলকাতা সৌরভ গাঙ্গুলীর জনপ্রিয়তা যেন আকাশচুম্বি। সৌরভ ক্রিকেট এসোসিয়েশন অব বেঙ্গল এবং ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বও পালণ করেছেন। এখন ক্রিকেট এসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সভাপতি সৌরভেরই বড় ভাই স্নেহাশিষ গাঙ্গুলী। তাই পশ্চিমবঙ্গে ক্রিকেট যতটানা জনপ্রিয় তার চাইতে বেশি জনপ্রিয় সৌরভ গাঙ্গুলী। তাইতো কলকাতার ইডেন গার্ডেনে সৌরভকে ঘিরে উম্মাদনা থাকেই। যেমনটি গত কয়দিন ধরে চলছে। সৌরভকে ইডেনে আসতে দেখলেই দর্শকরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে। সেটা এপার আর ওপার দু’বাংলার দর্শকরাই। এবারের বিশ্বকাপে মোটেও ভাল খেলছে না বাংলাদেশ। তা নিয়ে অবশ্য কোন মন্তব্য করেনি সৌরভ। তবে কলকাতার বাঙ্গালীরা ঠিকই নানা মন্তব্য করছে। নানা টিপ্পনি কাটছে। আগের ম্যাচে নেদারল্যান্ডের কাছে হারের পর বাংলাদেশের দর্শকদের যেখানে দেখেছে সেখানেই তীর্যক মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছে কলকাতার দর্শকরা। আবার সমবেদনাও জানিয়েছে অনেকেই। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে সে ম্যাচে ইডেনে হাজার বিশেক যে দর্শক ছিল তার প্রায় সবই বাংলাদেশের। তবে গতকাল অবস্থাটা পাল্টে গিয়েছিল। গতকাল ৬৬ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ইডেনের প্রায় পুরোটাই ভরে গিয়েছিল। তবে তারা সবাই বাঙ্গালী। যদিও এই ম্যাচে দর্শকদের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গের। তার একটি বিশেষ কারনও রয়েছে। তা হচ্ছে এই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। তাই পশ্চিম দর্শকরা বেশি এসেছিল গতকাল মাঠে। আবার পশ্চিম বঙ্গের দর্শকদের বেশিরভাগই পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছে। আগেরদিন পাকিস্তান দল অনুশীলন করেছে উডেনে। আর তখনই দেখা গেছে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা কতটা জনপ্রিয় ভারতে। আবার উল্টো চিত্রও দেখা গেছে। একদল ভারতীয় সমর্থক বিক্ষোভ দেখিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের সামনে।
তবে গতকাল মাঠে দেখা গেছে পাকিস্তান দলকে সমর্থন করছে অনেক কলকাতার দর্শক। আবার বাংলাদেশের সমর্থকও কম ছিল না। খেলা শুরুর আগে বাংলাদেশের দর্শকরা যখন দলের টি শার্ট পড়ে মাঠেল দিকে যাচ্ছিল তখন রাস্তায় তাদেরকে শুভ কামনা জানিয়েছে কলকাতার দর্শকরা। মাঠেও বিপুল সংখ্যক পশ্চিম বঙ্গের মানুষ বাংলাদেশকে সমর্থন করেছে। বাংলাদেশ যখনই ভাল খেলেছে তখনই করতালিতে মুখরিত করেছে ইডেনকে। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি দেখতে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী দর্শক এসেছিল কলকাতায়। কারণ সবার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল সে ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতবে। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে তাদের। বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিল সাকিবরা। সে ম্যাচ শেষে অনেকেই ফিরে গিয়েছিলেন দেশে। সংগত কারনে ধারনা করা হচ্ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ইডেনে বাংলাদেশের দর্শক থাকবে না। কিন্তু গতকাল দেখা গেল আরো বেশি দর্শক এসেছে বাংলাদেশ থেকে। দেশে অবরোধ চলছে। তারপরও নানা ঝুঁকি নিয়ে গতকালও ইডেন গার্ডেন ভরিয়ে দিয়েছিল বাংলার সন্তানরা। কারন তাদের একটাই কথা, জিতলেও বাংলাদেশ, হারলেও বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যেখানে সেখানে তারা।
ক্রিকেট বাংলাদেশে এখন একটি আবেগের নাম। তাইতো দল মাঠে খারাপ করলেই সংবাদ মাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সর্বত্রই চলে কঠিন সমালোচনা। আবার ঠিখই দলের পাশে এসে দাড়ায়। দলকে সমর্থন করে। দলের জণ্য গলা ফাটায়। ক্রিকেটটাই আসলে এমন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ মানে বাংলাদেশের জন্য মর্যাদার এক লড়াই। যে দলটির বিপক্ষে জিততে পারলে বাংলাদেশের সব মানুষ খুশি। আবার ভৌগলিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে ভারতের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কটা একেবারেই সাপে–নেউলে। তাইতো কলকাতার দর্শকদের বড় একটা অংশ সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশকে। গলা ফাটিয়েছে টাইগারদের জন্য। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য গলা ফাটাতে তেমন কেউ ছিলনা ইডেনে। তবে গতকাল যেন দুই বাংলা দিলে একাকার হয়ে যায় ক্রিকেটের নন্দন কানন খ্যাত ইডেন গার্ডেনে। দুই বাংলার সন্তানরা মিলে যেন ভরিয়ে দিল ইডেনের গ্যালারী। যেখানে দুই বাংলার সন্তানরা মিলে মিশে একাকার।
এই মাঠে ভারতের একটি ম্যাচ রয়েছে দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে। আর সেটি হবে ৫ নভেম্বর। সে ম্যাচের টিকিটের জন্য গত দুই দিন ধরে লাইন দিয়ে আছে দর্শকরা কলকাতা মোহামেডানের মাঠে স্থাপিত টিকিট কাউন্টারে। তবে তার আগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান ম্যাচে যেন একটা রিহার্সাল দিয়ে দিল কলকাতার দর্শকরা। যেখানে বাংলাদেশের পক্ষে যেমন গলা ফাটিয়েছে তেমনি পাকিস্তানের পক্ষেও চিৎকার করেছে কলকাতার দর্শকরা। তবে একটা জায়গায় দুই বাংলার সন্তানরা যেন এক বিন্দুতে মিশেছে, তা হচ্ছে ভাষা। কারন দুই বঙ্গের ভাষা যে এক। দুই বঙ্গের কৃষ্টি, কালচার এক। হয়তো ভৌগলিক, রাজনৈতিক আর ভারত–পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় শত্রুতার কারন ভুলে অনেকেই গতকাল পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। তবে বাংলাদেশের পক্ষেও ছিল অনেকেই। সমর্থন, চিন্তা, চেতনা আর পছন্দের ভিন্নতা থাকলেও গতকাল ইডেন গার্ডেন ভরিয়ে রেখেছিল বঙ্গ সন্তানরা।