যথাসময়ে নির্বাচন, খুনিদের সঙ্গে সংলাপ নয়

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে জানালেন যেদিন ট্রাম্প-বাইডেন সংলাপ করবেন, সেদিন আমিও করব

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং কেউ তা ঠেকাতে পারবে না। আন্দোলনের নামে বিএনপিজামায়াত চক্রের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, খুনিদের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না। খুনিদের সঙ্গে কোনো সংলাপ বা আলোচনা হবে না এবং বাংলাদেশের জনগণও তা চায় না।

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে সব সংশয় আর অনিশ্চয়তার কথা উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথাই বলতে পারি, নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে। ব্রাসেলসে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে তার এ বক্তব্য আসে। গত কিছুদিনে প্রধানমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে তার কাছে একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, কোন বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে? নির্বাচন আদৌ হবে কিনা, সময়মতো হবে কিনা, আবার জরুরি অবস্থা আসবে কিনাএসব প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। খবর বাসস, বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

নির্বাচন সময়মতোই হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তা উত্তরে বলেন, কে চোখ রাঙালো, আর কে ব্যাঁকালো, আমরা ওটার পরোয়া করি না। অনেক সংগ্রাম করেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। গণতন্ত্র থাকলে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ থাকলে দেশের উন্নতি হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন তো শুধু মেট্রো রেল আর টানেল দিয়ে না, যান না গ্রামে ঘুরে আসুন না। উন্নয়নটা আমি তৃণমূল থেকে করে দিয়েছি।

কোন বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছেএই প্রশ্ন যিনি রেখেছিলেন তাকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন, আপনাকে আমার বলতে হবে কেন? আপনারা বোঝেন না? ডায়লগ করতে হবে! ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন কি ডায়লগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন ডায়লগ করবে, সেদিন আমি করব।

নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে জানালেন : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের মধ্যে আগামী দ্বাদশ সংসদের ভোটের আগে নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে তা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনা করা হয়েছিল এবারও একই রকম পরিকল্পনার কথা বলেছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও কানাডার মতো সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে যেভাবে নির্বাচনকালীন সরকার থাকে, সেভাবে চলবে। অর্থাৎ সে সময় আমরা যারা থাকব, আমরাই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে আমাদের রুটিন ওয়ার্ক দায়িত্ব পালন, দৈনন্দিন কাজকর্ম করব, যাতে সরকার অচল হয়ে না যায়, সেটা আমরা করব, সেভাবে চলবে।

২০১৮ সালের নভেম্বরে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন টেকনোক্র্যাট চার মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলা হয় এবং তারা পদত্যাগপত্র জমাও দেন। বাকি মন্ত্রীরা সবাই রুটিন কাজ করে গেছেন। সে সময় যেসব মন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন, তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয় এক মাস পর অর্থাৎ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর ঠিক আগের দিন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আরপিও অনুযায়ী যখন নির্বাচনের সময় ঘোষণা হবে, মনোনয়নপত্র দাখিল হবে, তখন থেকে আর সরকারি কোনো সুযোগসুবিধা মন্ত্রীরা ব্যবহার করতে পারবে না, পতাকা বা কোনো সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে না। তখন একজন প্রার্থী হিসেবেই তাদেরকে ভোট চাইতে হবে।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা ছোট করা হলেও এবার তেমন পরিকল্পনা না থাকার কথা বলেছেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ১৪তে আমি কিছু মন্ত্রী অন্যান্য দল থেকে নিয়োগ করেছিলাম, এরপর ১৮তে সেই পদ্ধতি করি নাই, যেটা অন্যান্য দেশে হয়, এইবারও সেভাবে হবে।

এবারও প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা শুরু হলে মন্ত্রীরা আর সরকারি সুযোগসুবিধা ব্যবহার করবেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ। এই নির্বাচনী প্রচারণার সময় কোনো মন্ত্রী কোনো ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে না আর কোনো রকম সরকারি সুযোগসুবিধা ব্যবহার করতে পারবে না, এটাই নিয়ম। কিন্তু সরকার থেমে থাকবে না, সরকারি দৈনন্দিন যে কাজগুলো, রুটিন ওয়ার্ক যাকে বলে, সেটা কিন্তু করত হবে। নইলে তো স্থবির হয়ে যাবে, দেশ তো চলবে না।

তিনি বলেন, কাজে এখন ওই নির্বাচনকালীন সরকার কে হবে, সেদিকে আমরা আর যাচ্ছি না। আমরা যেভাবে চলার ওইভাবেইঅন্যান্য দেশ, আমি এটা ইংল্যান্ডেও আলাপ করেছি, তাদেরও, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, অর্থাৎ যেসব দেশের সংসদীয় গণতন্ত্র আছে, সেভাবে যারা চলে সেইভাবেই করা হবে।

সরকারের আকার কী রকম হবে, সে বিষয়ে কোনো ঘোষণা না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আকার ছোট করলে যেটা সমস্যা হয়, ওইটা ১৪তে দেখেছি, অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ আর হয় না, কাজগুলি যাতে বাধাগ্রস্ত হয়ে যায়। কাজগুলি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, আমাদের উন্নয়নের ধারাটা যাতে অব্যাহত থাকে, আমাদের সেটাই প্রচেষ্টা। সেজন্য বলছি, যেভাবে আছে সেভাবে।

২০১৮ সালের মতো এবারও নিজের জন্য পৃথক কার্যালয়ের ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি নিজেও যখন প্রার্থী হব, তখন এখানে বসে ভিডিও কনফারেন্সিং করব না। আমি আমার অফিস আলাদা, যেমন গতবারও করেছিলাম ৫ নম্বরে, এবার আলাদা একটা অফিসের ব্যবস্থা করেছি।

যেদিন ট্রাম্পবাইডেন সংলাপ করবেন, সেদিন আমিও করব : নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হবে না জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন সংলাপ করবেন সেদিন তিনিও বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করবেন। তিনি বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলটা কে? বিরোধী দল হচ্ছে, যাদের সংসদে আসন আছে। বাইরের দলগুলোকে আমেরিকায়ও বিরোধী দল হিসেবে দেখে না। ট্রাম্পকে তারা কী বলবে? তারা তো তাদের বিরোধী দল। যদিও আমরা তাদের পদ্ধতিতে না। তিনি বলেন, ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে কি বাইডেন ডায়ালগ করছেন? যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ, খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ, কিসের আলোচনা? খুনিদের সঙ্গে সংলাপ, এটা বাংলাদেশের জনগণও চায় না। সে (পিটার হাস) বসে ডিনার করুক, আলোচনা করুক।

২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই যে মানুষগুলো হত্যা করা হলো, তখন তাকে (পিটার হাস) প্রশ্ন করা হলো না কেন? যখন একটা উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছে, তখন তারা বিচার দাবি করেছে। এখন যখন পুলিশ হত্যা করল, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করল তখন বিচার দাবি করল না কেন?

এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার লিখিত ভাষণে ব্রাসেলস সফরকে অত্যন্ত সফল উল্লেখ করে বলেন, এই সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে অংশীদারিত্ব একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। সংবাদ সম্মেলন শেষে ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বিএনপির সন্ত্রাসনৈরাজ্য ও প্রকাশ্যে পিটিয়ে পুলিশ হত্যার ভিডিও ফুটেজও প্রদর্শিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযেমন আচরণ করছে, তেমন শিক্ষাই বিএনপি পাবে : শেখ হাসিনা
পরবর্তী নিবন্ধ২৮ কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৮,৫৫৬ কোটি টাকা