টানা চার জয়ে সেমির দৌড়ে এখন অস্ট্রেলিয়া

ক্রীড়া প্রতিবেদক | রবিবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

এবারের বিশ্বকাপে দু দলের শুরুটা দু’রকমের। নিউজিল্যান্ড যেখানে একের পর এক জিতেই যাচ্ছিল তখন অস্ট্রেলিয়া হেরে বসে প্রথম দুই ম্যাচে। কিন্তু এরপর আর পেছনে ফিরে তাকায়নি পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। অপরদিকে টানা চার ম্যাচে জিতে উড়তে থাকা নিউজিল্যান্ডকে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ দেয় স্বাগতিক ভারত। এরপর প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়া দিল দ্বিতীয় পরাজয়ের স্বাদ। ভারত এবং দক্ষিন আফ্রিকার কাছে হারের পর শ্রীলংকা, পাকিস্তান এবং নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে যে ছন্দে ফিরেছিল অসিরা সেটা ধরে রাখল গতকালও। তবে আগুন ঝরানো এক ম্যাচে ধর্মশালায় নিউজিল্যান্ডকে ৫ রানে হারিয়ে টানা চতুর্থ জয় তুলে নিল অস্ট্রেলিয়া। সে সাথে নিজেদেরকে সেমিফাইনালের অন্যতম দাবিদার হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করল ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখা অস্ট্রেলিয়া। অপরদিকে টানা চার ম্যাচে জেতা নিউজিল্যান্ডকে পরপর দুই ম্যাচে হেরে পড়তে হচ্ছে শংকায়। রান বন্যার এই ম্যাচটি শেষ বল পর্যন্ত উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। যদিও এক সময় নিউজিল্যান্ডের হাতে থাকা ম্যাচটি চলে যায় অস্ট্রেরিয়ার কাছে। আবার চলে আসে নিউজিল্যান্ডের হাতে। কিন্তু জিমি নিশাম শেষ রক্ষা করতে পারেননি দলকে। তীরে এসে তরী ডুবিয়ে ফিরেন নিশাম। ফলে টানা চার ম্যাচে জয়ের পর টানা দুই ম্যাচে হারতে হলো তাদের। এই জয়ের ফলে অস্ট্রেলিয়া উঠে গেছে পয়েন্ট তালিকার চার নম্বরে। দু দলেরই পয়েন্ট সমান ৮। কিন্তু রান রেটে এগিয়ে থাকায় তিন নম্বরে নিউজ্যিলান্ড। ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এবং ট্রেভিস হেড মিলে যোগ করেছিলেন ১৭৫ রান। আর তাতেই যেন অস্ট্রেলিয়ার রানের পাহাড়ে চড়ার পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। ট্রেভিস হেড সেঞ্চুরি তুলে নিলেও ওয়ার্নার পারেননি আরেকটি সেঞ্চুরি তুলে নিতে। আগের দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ওয়ার্নার পারলেন না টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নিতে। ফিরেছেন ৮১ রান করে। ফিলিপসের হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৬৫ বলের ইনিংসে ৫টি চার এবং ৬টি ছক্কা মেরেছেন ওয়ার্নার। সঙ্গীকে হারিয়ে বেশিক্ষন থাকতে পারেননি ট্রেভিস হেডও। ফিরেছেন ফিলিপসের বলে বোল্ড হয়ে। তবে ফেরার আগে তুলে নিয়েছেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি। ৬৭ বলে ১০৯ রানের ঝড়ো ইনিংসটিতে ১০টি চার এবং ৭টি ছক্কা মেরেছেন। এই দুই অসি ওপেনারের গড়ে দেওয়া ভিত্তির উপর দাড়িয়ে পরের ব্যাটাররা সবাই খেলেছেন ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ন ইনিংস। আর তাতেই ৩৮৮ রানের পাহাড়ে চড়ে অস্ট্রেলিয়া। মিচেল মার্শের সাথে তৃতীয় উইকেটে ২৮ রান যোগ করেন স্মিথ। ১৭ বলে ১৮ রান করে ফিরেছেন স্মিথ। এরপর বড় কোন জুটি গড়ে উঠেনি অস্ট্রেলিয়ার। তবে সবাই ছোট ছোট অবদান রেখেছেন। একমাত্র মার্শ ছাড়া বাকি সব ব্যাটার কম বলে বেশি রান করেছেন। মার্শ ৫১ বলে করেছেন ৩৬ রান। এরপর আগের ম্যাচে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরি করা ম্যাঙওয়েল গতকাল করেছেন ২৪ বলে ৪১ রান। এছাড়া জস ইংলিশ ২৮ বলে ৩৮ এবং প্যাট কামিন্সের ১৪ বলে ৩৭ রানের সুবাধে ৩৮৮ রানের পাহাড়ে চড়ে অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট এবং ফিলিপস।

৩৮৯ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার কনওয়ে এবং ইয়ং ৬১ রান যোগ করেছিলেণ। জস হ্যাজেলউড ফেরান দুজনকে। শুরুটা করেন ১৭ বলে ২৮ রান করা কনওয়েকে ফিরিয়ে। এরপর ৩৭ বলে ৩২ রান করা ইয়ংকেও ফেরান হ্যাজেলউড । দুজনের ক্যাচই নেন মিচেল স্টার্ক। ৭২ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন রাচিন রবীন্দ্র এবং ড্যারিল মিচেল। দুজন মিলে ৯৬ রান যোগ করেন। নিজের হাফ সেঞ্চুরি পুরন করে ফিরেন ড্যারিল মিচেল। তাকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙেন এডাম জাম্পা। ৫১ বলে ৬টি চার এবং একটি ছক্কায় ৫৪ রান করেন মিচেল। টম লেথামকে নিয়ে আরো ৫৪ রান যোগ করেন রাচিন রবীন্দ্র চতুর্থ উইকেটে। এজুটিও ভাঙ্গেন জাম্পা। ২২ বলে ২১ রান করে ফিরেন লেথাম। এরপর গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে আরো ৪৩ রান যোগ করেন রাচিন রবীন্দ্র। ১২ রান করে ফিলিপস ফিরলেও নিজের সেঞ্চুরি তুলে নেন রবীন্দ্র। এবারের বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেণ রবীন্দ্র। অবশেষে লড়াই করতে করতে রনে ভঙ্গ দিলেন রাচিন রবীন্দ্র। প্যাট কামিন্স ভাঙ্গেন এই কিউই প্রতিরোধের দেওয়াল। মাত্র্র ৮৯ বলে ৯টি চার এবং ৫টি ছক্কায় ১১৬ রান করে আসেন রবীন্দ্র। রাচিন আউট হওয়ার পর বলতে গেলে শেষ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ডের জয়ের আশা। এরপর মিচেল স্যান্টনারকেও থামিয়ে দেন জাম্পা। এরপর ম্যাচে হঠাৎ প্রাণ ফেরান জিমি নিশাম। একপ্রান্তে একাই লড়াই করে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন জযের দ্বার প্রান্তে। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারেননি। শেষ ওভারে ১৯ রান দরকার হলে ১৩ রান তুলতে পারেন নিশাম। ওভারের পঞ্চম বলে নিশাম আউট হন ৩৯ বলে ৫৮ রান করে। আর তাতেই নিউজিল্যান্ড থামে ৩৮৩ রানে। যার পরিনতি ৫ রানের হার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকলকাতাতো নয় যেন এক খণ্ড বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধচসিকের জয়ে প্রথম হার দেখলো কিষোয়ান