বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নগরীর প্রবর্তক এলাকায় বেলভিউ হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক অংশের যাত্রা শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার বিকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, জ্ঞান এবং দক্ষতা এই দুইটার মধ্যে যদি কোনো বিনিময় না হয়, তাহলে সফলতা আসবে না। তাই আমি বেলভিউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাব, আপনাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। এই হাসপাতালের সুন্দর একটি অবকাঠামো আছে। অবকাঠামোগত দিক থেকে এই হাসপাতালের লবি আমার মতে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথের লবির চেয়েও বড়। তবে আমি মনে করি, এখানে ল্যাব অ্যাসিসটেন্ট, নার্স, রিসেপশনিস্ট এবং যারা অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে কাজ করবেন তাদেরকে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যসেবা কেবল চিকিৎসক দিয়ে চলবে না। এটি একটি টোটাল ইকো সিস্টেম। সবার দক্ষতা ও মান উন্নত হলে রোগীর সেবাটা নিশ্চিত হয়। চিকিৎসকের একার পক্ষে মান উন্নত করা কঠিন। আমাদের দেশের মেডিকেল চিকিৎসা অনেক উন্নত মানের। কিন্তু চিকিৎসা সেবাটা বাড়ছে না। কারণ এখানে শুধু চিকিৎসকরাই সেবা দিচ্ছেন না, সেবা দেওয়ার সাথে নার্স, ল্যাব অ্যাসিসটেন্টসহ সকলেই জড়িত। তবে আমাদের চিকিৎসকদের কমিউনিকেশন স্কিলের প্রতি জোর দেওয়ার দরকার আছে। ক্লিনিক্যাল নলেজের বাইরে তো তারাও মানুষ।
উদ্বোধকের বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, রবীন্দ্রনাথ একটি সুন্দর কথা বলেছেন, আমরা আরম্ভ করি, কিন্তু শেষ করি না। কথা দিয়ে কথা রাখি না। আমরা আশা করব, বেলভিউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশ্বমানের সেবা দেওয়ার যে কথা দিয়েছেন, তা রাখবেন। একজন চিকিৎসক উনার বক্তব্যে বলেছেন, কোনো এক ল্যাবে পুরুষের ইউরিনে প্রেগনেন্সি পাওয়া গেছে। সুতরাং এই ধরনের সেবা কেউ আশা করে না। অনেক হাসপাতাল–ক্লিনিকে দেখা যায়, মুমূর্ষু রোগী যখন যায়, তখন সাথে সাথে তাকে সিসিইউ কিংবা আইসিইউতে ভর্তি দেওয়া হয়। আমার কথা হচ্ছে, যদি প্রয়োজন হয় অবশ্যই দিবেন। কিন্তু সেটি যেন বিল বাড়ানোর জন্য না হয়। আসলে ডাক্তারি পেশাটা এমন একটি পেশা, আপনি সেবাও দিবেন, আবার নিজেও আয় করবেন। অন্য কোনো পেশাতে কিন্তু সেটি নেই।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অনেকে বলছেন, বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু বিএমএ আবার বিদেশ থেকে ডাক্তার আনতে দেয় না। এখন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রোগী যায় একজন, তার সাথে যায় আরো চারজন। তাহলে কত টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে? আপনারা এ ব্যাপারে একটু সদয় হোন। কারণ এটি বর্তমান সময়ের ট্রান্সফরমেশন অব টেকনোলজি। তবে ডাক্তারদের একটি বিষয়ে বাহবা দিতে হয়। বিশেষ করে কোভিডের প্রথম বছর একজন লোকও দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য যায়নি। তবে কি একজনেরও রোগ হয়নি? নিশ্চয়ই রোগ হয়েছে। আপনারা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। সে আস্থাটা আবারও ফিরিয়ে আনতে হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষের কাছে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়াটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর দেশ থেকে প্রচুর রোগী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা নিতে যান। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। করোনাকালে দেশের চিকিৎসকরা নিজের জীবন বাজি রেখে রোগীদের সেবা দিয়েছেন।
চিটাগাং বেলভিউ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামবাসীকে উন্নত সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেলভিউ হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক অংশের যাত্রা শুরু হয়েছে। উদ্বোধন উপলক্ষে সব ধরনের সেবার ওপর আমরা মাসব্যাপী ২৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে এই সময়সীমা আরো বাড়তে পারে। এছাড়া সমাজের দরিদ্র শ্রেণীর ৫ শতাংশ মানুষকে বিনামূল্যে সেবা দেওয়া হবে।
চিটাগাং বেলভিউ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল কৈয়ূম চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মো. মুজিবুল হক খান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শামীম আহসান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন, প্রবর্তক সংঘ (বাংলাদেশ) চট্টগ্রামের সম্পাদক ডা. শ্রীপ্রকাশ বিশ্বাস, ডা. মোহাম্মদ শরীফ ও চিটাগাং বেলভিউ লিমিটেডের পরিচালক জি কে লালা।