মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই কৃতজ্ঞতা। আপনি অভাবনীয় কাজ সম্পন্ন করছেন। আপনার নির্দেশনায় চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম টানেল ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’। এ টানেল নিয়ে দেশজুড়ে সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। এ টানেল নির্মাণ হওয়ার পর থেকে সকলের মাঝে চলে আসছে ক্ষণগণনা। অবশেষে অবসান হলো অপেক্ষার। আজ খুলে যাবে দেশের প্রথম টানেল।
আজাদীসহ নানা পত্রপত্রিকায় উল্লেখ করা হয়েছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞতায়, বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের লালদিঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বন্দরনগরী ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা এসেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনতে। সেখানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা হাত তুলে বীর চট্টলার জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘চট্টগ্রামে উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিলাম’। ঘোষণা দেন কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করার কথা। স্বপ্ন বাস্তবায়নের যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটারের বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ। দক্ষিণ এশিয়ায়ও নদীর তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ। যার ফলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মতো সারাদেশের মানুষ যেমন গৌরবান্বিত ও আনন্দিত।
দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তিসহ ৭ গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কর্ণফুলির তলদেশ দিয়ে ৪ লেন বিশিষ্ট সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয় বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়। ৭ গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম শহরে নিরবচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন; এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন; কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে যুক্ত করা এবং উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিতকরণ; চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধিকরণ এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণকাজ ত্বরান্বিতকরণ; ঢাকা–চট্টগ্রাম–কক্সবাজার এর মধ্যে নতুন একটি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা; কর্ণফুলি টানেল নির্মিত হলে চীনের সাংহাই শহরের ন্যায় চট্টগ্রাম শহরকে ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলে গড়ে তোলা; কর্ণফুলি নদীর ওপর বিদ্যমান দুটি সেতুর ওপর হতে যানবাহনের বাড়তি চাপ কমানো।
বলা জরুরি যে, বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে বৃহত্তর চট্টগ্রামে এখন হাজারও সম্ভাবনার হাতছানি। বন্দর সমপ্রসারণ, নতুন শিল্প কারখানা, কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের বিকাশ, মাতারবাড়ি পাওয়ার হাব, মহেশখালী গভীর সমুদ্র বন্দর ও টেকনাফ স্থল বন্দরকে যুক্ত করে বিশাল অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক গড়তে শুরু হয়েছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। এই টানেল উদ্বোধনের পর ব্যবসা–বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) এবং হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অভি অরূপ অ্যান্ড পার্টনারস হংকং লিমিটেড যৌথভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রতিবেদন জমা দেয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে। এর ওপর ভিত্তি করেই চীন ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, টানেল উদ্বোধন হলে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এক ধাপ এগিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে সংযোগ সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠছে ছোট–বড় অসংখ্য শিল্প–কারখানা। টানেলকে ঘিরে পর্যটন, শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। টানেল চালু হলে কর্ণফুলি নদী পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিট। সময় বেঁচে যাওয়ায় অর্থনীতি গতি পাবে।
প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এই টানেল চালুর পর কর্ণফুলি নদীর দুই পাড়ের অর্থনৈতিক চিত্র বদলে যাবে, যা দেশের প্রবৃদ্ধিতে অনন্য অবদান রাখবে। চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলের কর্ণফুলি নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল যুক্ত করেছে দুই সিটি দক্ষিণ চট্টগ্রাম আর বন্দর নগরীকে। টানেলকে ঘিরে পর্যটন, শিল্পায়নসহ অর্থনীতিতে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা, প্রবৃদ্ধি অর্জনে খুলবে নতুন দিগন্ত। এই টানেল ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করবে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ককে। একইভাবে চট্টগ্রামের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও সহজ এবং চট্টগ্রাম শহর–বন্দর ও বিমানবন্দরের সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। মোট কথা, টানেলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।