কয়েক ঘণ্টা পরই খুলবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। বাংলাদেশ দেখিয়ে দেবে সাগরের মোহনায় নদীর তলে টানেল বানিয়ে এপার–ওপার চলতে পারে তারা। স্বপ্ন ছোঁয়ার আনন্দে আনোয়ারা–কর্ণফুলীর মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে গতকাল। এ যেন ঈদের আনন্দ।
উৎসবের শুরু বৃহস্পতিবার থেকেই। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে এক কিলোমিটার দীর্ঘ মোটর শোভাযাত্রাটি প্রদক্ষিণ করে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নির্বাচনী এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের নেতারা ব্যস্ত ছিলেন জনসভায় জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়ে। সন্ধ্যার পর রাত নামলেও কালাবিবির দীঘি এলাকার টানেল চত্বর, কাফকো সেন্টার, চাতরী চৌমুহনী, মইজ্যারটেক এলাকায় দেখা গেছে দিনের চেয়েও বেশি ব্যস্ততা। নির্ঘুম রাতকে আনন্দময় করতে বসানো হয় গানের আসর। লাল–সবুজের নৌকা আর ব্যানার–পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা।
কেইপিজেড জনসভা মাঠেও ছিল সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ততা। শনিবার সকালে জনসভা হওয়ায় শুক্রবার বিকাল থেকে নেতাকর্মীরা রওনা হয়েছেন জনসভায় হাজির থাকার লক্ষ্য নিয়ে। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা তাঁদের আপ্যায়নের জন্য বিরিয়ানি ও খিচুড়ি বিতরণ করেছেন। তাঁদের বিনোদন দিতে গানের আসরের ব্যবস্থাও ছিল।
কক্সবাজার থেকে টানেল উদ্বোধন দেখতে এসেছেন তারেকুল ইসলাম। তিনি সন্ধ্যা ৬টার দিকে জনসভা মাঠে পৌঁছেছেন। তারেকুল ইসলাম বলেন, ‘টানেল আমাদের গর্বের প্রতীক। সেই টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এমন একটি দিনে থাকব না, তা কি হয়! তাই তো নির্ঘুম রাত কাটিয়ে কালের সাক্ষী হতে কর্ণফুলীর তীরে এসেছি।’
টানেল দেখতে সাড়ে ৩শ’ কিলোমিটার দূরের বরগুনা থেকে মিনি ট্রাক বহরে নৌকা নিয়ে হাজির হয়েছেন বঙ্গবন্ধু পাগল নৌকার মাঝি ষাটোর্ধ্ব হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, টানেল আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখব বলে এতদূর থেকে ছুটে এসেছি।
আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, শনিবার আমাদের কাছে বিজয়ের উৎসব। তাই তো উৎসবের প্রস্তুতিতে চোখে ঘুম নেই। হাজার হাজার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। কেইপিজেড, কাফকো, সিইউএফএল গেস্ট হাউস ও আশপাশের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যে যার মত নেতাকর্মীদের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
টানেল উদ্বোধন উপলক্ষে আসা লোকজনের বিনোদন দেওয়ার জন্য কেইপিজেড মাঠে জনসভা মঞ্চে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে কনসার্ট। নেতাকর্মীদের নির্ঘুম রাতের কষ্ট লাঘবে এই আয়োজন। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্মীদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়।
ভূমিমন্ত্রী ও আনোয়ারা–কর্ণফুলী আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, ‘সকাল আটটার মধ্যেই কর্ণফুলীর দক্ষিণ তীরের কেইপিজেড মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। অনেকে রাতে এসে গেছেন। যারা আগেভাগে এসেছেন তাদের যাতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য আমরা সব ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা এখন মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় আছি। এই টানেল দুই বা পাঁচ বছর নয়, শত বছরের জন্য এই এলাকার মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে থাকবে। পুরো অঞ্চলের জীবনমান বদলে দেবে।’
টানেল উদ্বোধন ও জনসভা উপলক্ষে আজ শনিবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কেইপিজেডের সবগুলো কারখানা। তাদের ৩০ হাজারের বেশি কর্মী যোগ দেবেন টানেল উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে। কেইপিজেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্নেল (অব.) প্রকৌশলী মো. শাহজাহান বলেন, ১৯৯৯ সালের ৩০ অক্টোবর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরিয়ান ইপিজেডের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। দুই যুগ পর প্রায় একই সময়ে একই স্থানে দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের প্রথম টানেলের উদ্বোধনী জনসভায় উপস্থিত হবেন তিনি। এটা নিঃসন্দেহে মাইলফলক ও কেইপিজেডের জন্য গর্বের।