গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে না আনসার বাহিনী : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

নিবন্ধনহীন জামায়াত সমাবেশের অনুমতি পাবে না

| বৃহস্পতিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৩ at ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ

অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে কাউকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা আনসার বাহিনীকে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে মন্তব্য করে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, এটা একটা মিস ইনফরমেশন, আপনাদের ভুল ধারণা। এই প্রশ্নটা ভুল ধারণার প্রেক্ষিতে করছেন। আনসার বাহিনীকে গ্রেপ্তার করার পারমিশন কখনও দেওয়া হয়নি, আজকেও দেওয়া হয়নি এবং কোনো আইন দ্বারা সেটা দেওয়ার কোনো ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধির আওতার ভেতরে থেকে সমস্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করতে হবে, এ হল মূল কথা। বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জামায়াত সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিবন্ধনহীন জামায়াত ২৮ অক্টোবর সমাবেশের অনুমতি পাবে না। খবর বিডিনিউজের।

আনসার ব্যাটালিয়ন বিল ২০২৩ সংসদে তোলা হয় সোমবার। বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধীকে ‘আটক, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা’ পাচ্ছে আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা। পাশাপাশি বাহিনীতে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বিলটি উত্থাপন করলে তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সেটিকে সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। আনসার বাহিনীকে ‘গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়ার বিধান’ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন।

তবে প্রস্তাবিত বিলের কোনোকিছু নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তার ঠিক করবেন জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভায় পাস হওয়া আইনের খসড়ায় কোনো শব্দ বা বাক্যের কারণে এমন প্রশ্ন উঠলে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তা পরিশুদ্ধ করবেন। তাদের যে আইনটি আসছে, সেটি পরীক্ষানিরীক্ষার শেষ পর্যায়ে এখানে (সংসদে) এসেছে। এটা আমাদের স্থায়ী কমিটিতে গেছে, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এটি পরীক্ষানিরীক্ষা করবেন। সেখানে কোনো শব্দ, বাক্য যদি এ ধরনের প্রশ্নের অবতারণা করে, তবে সেগুলো কারেকশন হবে। এখানে প্রচলিত আইনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো বাক্য যদি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় তাহলে সেটি তারা পরিশুদ্ধ করবেন।

বিষয়টি নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ নেই মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, যে কোনো বাহিনীকে প্রচলিত ফৌজদারি আইন মেনে কাজ করতে হয়। আমি একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছি এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। এখানে আমি শুনতে পাচ্ছি অনেক জায়গায় প্রচারিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে আনসার পুলিশের ক্ষমতা নিয়ে যাচ্ছে, পুলিশের ক্ষমতা আনসার নিয়ে যাচ্ছে। এগুলো প্রপাগান্ডা, সমস্ত মিস ইনফরমেশন। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা সবসময় বলি আমাদের দুটো ফোর্সই আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।

এদিকে জামায়াতে ইসলাম ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পাবে কিনা, এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা পারমিশন দিইনি, আমরা তাদের কোনো পারমিশন দিই না। জামায়াতে ইসলাম নিবন্ধিত দল নয় এখন পর্যন্ত। কাজেই তারা জামায়াতে ইসলামের ব্যানারে যদি আসে, তাহলে তাদের পারমিশন দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে কিনা, তা ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে জিজ্ঞাসা করার পরামর্শ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার কাছে কেউ পারমিশন চান না।

আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলকেই ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করার অনুমতি এখনো দেওয়া হয়নি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সমাবেশের যে অনুরোধ করেছে, কীভাবে করেছেন সেটা পুলিশ কমিশনার জানেন। ঢাকায় কোন জায়গায় সমাবেশ করলে, এত লোক আনবেন বলে তারা ঘোষণা দিয়েছেনতারা নাকি সারা বাংলাদেশ থেকে যারাই বিএনপি করে তাদের নাকি নিয়ে আসবে। কোনো সদস্যই নাকি বাদ থাকবে না, এরকমই আমরা শুনছি। সে রকমই যদি হয়, এত লোক ঢাকায় এলে অন্য ধরনের একটা পরিস্থিতি হতে পারে। সেজন্যই আমাদের কমিশনার সাহেব তাদেরকে কোথায় সমাবেশটা করতে দেবেন সেটা তিনি বুঝবেন, সেভাবেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। কমিশনার সাহেব এখন পর্যন্ত কাউকে সমাবেশের অনুমোদন দেননি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি সব সময়ই বলি, সব রাজনৈতিক দলের রাইট রয়েছে গণতান্ত্রিক চর্চা করা। তাদের সবকিছু প্রচারপ্রচারণার নিয়মকানুন রয়েছে। নিয়ম বহির্ভূত কিছু করলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের মানা করবেন, বলবেন যে আইন ভাঙছেন। কাজেই আমাদের কথা স্পষ্ট, তারা (বিএনপি) যদি কমিশনারের কাছে যদি আবেদন করেন এবং বলেন আমরা ভাঙচুর করব, অবরোধ করব, তাহলে তো কমিশনার সাহেব (অনুমতি) দেবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে তারা যদি অবস্থান করে, আমাদের কমিশনার সাহেব নিশ্চয় তাদের অনুমতি দেবেন।

একই দিনে দুটি রাজনৈতিক দলকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নে কামাল বলেন, আইন সংগতভাবে আরও যদি ১০টি দল চায় যে তারা ওই দিনই সমাবেশ করবে, আমরা বলব নিয়মশৃঙ্খলা মেনে, শান্তি রক্ষা করে যদি করতে পার, তাহলে করবা। আইনশৃঙ্খলা মেনে চললে বিশৃঙ্খলা হবে না।

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ঢাকার প্রবেশ পথ বন্ধ করা হবে কিনা, সেই প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবর সরকার ঢাকার প্রবেশ পথ কেন বন্ধ করবে? মানুষ ঢাকায় আসবে ব্যবসার কাজে, চাকরির কাজে। অনেকে ঢাকার বাইরে থেকে এসে ঢাকায় অফিস করেন। কাজেই ঢাকার পথ আমরা কেন বন্ধ করব? আমরা ঢাকার কোনো পথ বন্ধ করব না। তারা যদি শান্তিপূর্ণভাবে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে চলে যায় আমরা বাধা দেব না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৪৫ কোটি টাকায় চার লেন হচ্ছে শেখ হাসিনা সড়ক
পরবর্তী নিবন্ধযুদ্ধ বন্ধ করে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ফেরাতে হবে