সাতকানিয়ায় বিধ্বস্ত চালের নিচে পড়ে নারীর মৃত্যু

হামুনের তাণ্ডবে দুই শতাধিক বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ২৫ অক্টোবর, ২০২৩ at ৯:২৯ অপরাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর আঘাতে সাতকানিয়ায় গাছ উপড়ে পড়ে বিধ্বস্ত হওয়া বসতঘরের চালের নিচে চাপা পড়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম বকুমা খাতুন (৬৫)। তিনি উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মাঝের পাড়ার মৃত নুর আহমদের স্ত্রী।

এছাড়া, ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দুই শতাধিক বসতঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে যাওয়ায় এবং সঞ্চালন লাইনের উপর গাছ ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।

আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) বিকাল থেকে কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চালু হলেও এখনো বেশির ভাগ এলাকা অন্ধকারে রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঘূর্ণিঝড় হামুন’ এর আঘাতে এসব ঘটনা ঘটে।

এদিকে, বকুমা খাতুনের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।

সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস উপস্থিত থেকে বকুমার পরিবারের সদস্যদের হাতে এ টাকা তুলে দেন। এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ কামরুল হোসাইন ও সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইয়াসির আরাফাত উপস্থিত ছিলেন।

আজ বুধবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ে অনেক কাঁচা বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। কিছু বসতঘর ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। আবার কিছু আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কোথাও সড়কের উপর পড়ে আছে উপড়ে যাওয়া গাছ। অনেক স্থানে ভেঙে গেছে বিদ্যুতের খুঁটি। কোথাও উপড়ে গেছে। আবার কিছু কিছু স্থানে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের উপর পড়ে আছে বিশালাকৃতির গাছ।

খাগরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আখতার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড়ে গাছ উপড়ে পড়ে ভেঙে যাওয়া বসতঘরের চালের নিচে চাপা পড়ে এক নারী মারা গেছে। এছাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ৪-৫টি বসতঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০-১২টি বসতঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আরো জানান, ঘরের চালের নিচে চাপা পড়ে মারা যাওয়া বকুমা’র পরিবারের সদস্যদের তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।

পুরানগড় ইউপি চেয়ারম্যান আ ফ ম মাহবুবুল হক সিকদার জানান, ঘূর্ণিঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ১৫টি বসতঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ভেঙে গেছে ৬টি বৈদ্যুতিক খুঁটি।

পল্লী বিদ্যুতের সাতকানিয়া জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. সাইফুল আলম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ খাতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাতকানিয়া জোনাল অফিসের অওতাধীন এলাকায় ৩৬ বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। উপড়ে গেছে ২৩টি। এছাড়া ২৭০টি স্থানে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের উপর গাছ ভেঙে পড়েছে। এজন্য ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন খুঁটি থেকে খুঁটি এভাবে লাইন চেক করে বিদ্যুৎ চালু করা হচ্ছে। বর্তমানে কিছু এলাকায় লাইন চালু করা হয়েছে। অন্যান্য এলাকায় এখনো বন্ধ রয়েছে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সাতকানিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোহাম্মদ কামরুল হোসাইন জানান, ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অসংখ্য গাছ ভেঙে পড়েছে। অনেক স্থানে গাছ পড়ে কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। পুরো উপজেলার মধ্যে অন্তত ২ শত বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাগরিয়ায় গাছ উপড়ে পড়ে বিধ্বস্ত হওয়া ঘরের চালের নিচে চাপা পড়ে এক নারী মারা গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই নারীর পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘূর্ণিঝড় হামুন : বান্দরবানে ১৬ ঘন্টা পর বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু
পরবর্তী নিবন্ধপেকুয়ায় হামুনের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত দুই হাজার ঘরবাড়ি, বিদ্যুৎহীন পুরো উপজেলা