বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল ধর্মশালা থেকে। এরপর চেন্নাই, পুনে ঘুরে বাংলাদেশ দল এখন মুম্বাইয়ে। এখানে আগামীকাল দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে টাইগাররা। এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা এমন একটি দলে পরিণত হয়েছে যারা কোনো প্রতিপক্ষকেই দাঁড়াতে দিচ্ছে না। আবার মুদ্রার অপর পিটটাও দেখেছে প্রোটিয়ারা। নেদারল্যান্ডসের মতো দলের কাছেও হেরেছে তারা। তবে গত শনিবার ইংল্যান্ডকে যেভাবে উড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সেটা যেকোন দলকেই শঙ্কিত করে তুলতে বাধ্য। নেদারল্যান্ডসের কাছে হারটা কতটা তাতিয়ে দিয়ছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেটা ভালই টের পেয়েছে ইংল্যান্ড। কারণ ক্ষোভটা যে তাদের উপর দিয়েই গেছে। তাই ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড এবং ভারতের পর আরেক কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে। পুনে থেকে মুম্বাইতে আসার পর দুই দিন বিশ্রামে ছিল বাংলাদেশ দল। গতকাল অনুীশলনে নেমেছে প্রথমবারের মতো। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের সেন্টার উইকেটের দুপাশে তিনটি নেটে প্রায় তিন ঘণ্টা অনুশীলন করে বাংলাদেশ দল। পুনেতেও দেখেছি সেন্টার উইকেটের দু পাশে দুটি করে চারটি উইকেট তৈরি করা হয়েছিল অনুশীলনের জন্য। মুম্বাইতেও তাই করা হলো। আর সেখানেই টাইগাররা অনুশীলন করলেন একেবারে ঘাম ঝরিয়ে। এমনিতে মুম্বাইতে এখন প্রচন্ড গরম। আর সে গরমে এক রকম পুড়ে যাওয়ার অবস্থা। গতকাল ৩৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় অনুশীলন করেছে টাইগাররা। আগামীকাল ম্যাচও খেলতে হবে তেমনই গরমে। তাই বাড়তি শ্রম দিয়েই খেলতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। যদিও সব দলের জন্যই একই অবস্থা। এমনিতেই ভারতের এক এক প্রদেশের আবহাওয়া এক এক রকম। আর সে সব পরিবেশের সাথে মানিয়েও নিতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের।
গতকালের অনুশীলনেও ঘুরে ফিরে আসে সাকিব প্রসঙ্গ। প্রায ৯ দিনের বিশ্রামের পর সাকিবের ইনজুরির অবস্থা কি তা নিয়ে সুস্পষ্ট কোন তথ্য জানা যায়নি। তাই গতকাল অনুশীলনেও সবার চোখ ছিল সেই সাকিবের দিকেই। তবে সাকিব গতকালও অনুশীলন করেছেন। একেবারে শুরুতেই সাকিব এক নাম্বার নেটে অনুশীলন করেন থ্রোয়ার এবং স্পিনারদের বিপক্ষে। তবে সেটা প্রায় আধ ঘণ্টার মতো। তবে অন্যরা অনুশীলন করেছেন একেবারে সিরিয়াস ভঙ্গিতে। বিশেষ করে ব্যাটাররা চেষ্টা করছিল লম্বা লম্বা ছক্কা মারার। যদিও সে চেষ্টা তারা পুনেতেও করেছিল। কিন্তু ম্যাচে তার সুফল পাওয়া যায়নি। কারো কারো বল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে গিয়ে পড়ছিল। এখন ম্যাচের দিন তেমন মারতে পারলেই হয়।
গতকাল অনুশীলনেও খানিকটা বৈচিত্র্য এনেছে বাংলাদেশ দল। দেশ থেকে মুম্বাইতে উড়িয়ে আনা হয়েছে লেগ স্পিনার ওয়াসি সিদ্দিকীকে। অনূর্ধ্ব–১৯ দলের এই ক্রিকেটারের সহায়তা নিচ্ছে বাংলাদেশ দল অনুশীলনে। সে সাথে স্থানীয় একাধিক লেগ স্পিারকেও ব্যবহার করা হচ্ছে অনুশীলনে। যাতে দক্ষিণ আফ্রিকার লেগ স্পিানরদের ভালোভাবে মোকাবেলা করা যায়। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটাররা মোটেও ভালো করতে পারছে না। অন্য দল গুলো যেখানে সাড়ে তিনশ/ চারশ রান করছে সেখানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ২৫৬। গত শনিবার এই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯৯ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারতের প্রতিটি মাঠই যেন রানের খনি। ব্যাটাররা আউট হতে না চাইলে যেন আউটই করতে পারছে না বোলাররা। কিন্তু বাংলাদেশ দল হাঁটছে উল্টো পথে। তাইতো গতকালের অনুশীলনে ব্যাটাররা নিজেদের প্রস্তুত করে নেওয়ার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। বিশেষ করে টপ অর্ডারের ব্যাটাররা যাদের কাজ বড় রানের ভিত্তি গড়ে দেওয়া। লিটন দাশ, তানজিদ তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা চেষ্টা করেছেন নিজেদের ঝালাই করে নিতে। পুনের মতো মুম্বাইয়ের মাঠও খানকিটা ছোট। তাই এই মাঠে ছক্কা মারাটা সহজ হয়। তাই সে ছক্কা মারার অনুশীলনটা বেশি করেছে গতকাল বাংলাদেশের ব্যাটাররা। যদিও অনুশীলন আর ম্যাচ এক না।
এরই মধ্যে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক পরাজয় সঙ্গী হয়ে গেছে বাংলাদেশের। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। কিন্তু প্রতিপক্ষটা যখন দক্ষিণ আফ্রিকা, যারা এবারের বিশ্বকাপে অন্য রকম ক্রিকেট খেলছে তখন আগের ম্যাচ গুলোর তুলনায় এই ম্যাচটি নিয়ে একটু বেশিই চিন্তা করতে হচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। বাংলাদেশ দলের তিনজন ছাড়া বাকিরা প্রথমবার এসেছেন ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। সাকিব, মোস্তাফিজ আর লিটন দাশ আইপিএল খেলার সুবাধে মুম্বাইয়েল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আসার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু বাকিরা এসেছে প্রথমবারের মতো। তাই নতুন ভেন্যু, নতুন পরিবেশ আর বিশ্বকাপে আরেকটি নতুন প্রতিপক্ষ। কাজেই একটি নতুন শুরুই যেন চাইছে বাংলাদেশ দল।