প্রচারণার অভাবে চসিকের ই-রেভিনিউ কার্যক্রমে ধাক্কা

অনলাইনে এক শতাংশেরও কম আদায়

মোরশেদ তালুকদার | সোমবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২৩ at ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

চলতি ২০২৩২০২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৫ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৮৭ টাকা পৌরকর আদায় করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর মধ্যে মাত্র ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩৮০ টাকা আদায় হয়েছে অনলাইনে ইরেভিনিউ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ মোট আদায়ের ১ শতাংশেরও কম ইরেভিনিউ পদ্ধতিতে আদায় হয়েছে।

অথচ ঘরে বসে অনলাইনে পৌরকর পরিশোধ করতে পারেন করদাতারা। এতে তাদের ভোগান্তি কম হয় এবং পরিশোধকৃত পৌরকরের স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হয়। এরপরও করদাতারা অনলাইনের পরিবর্তে ম্যানুয়ালি গৃহকর পরিশোধ করছেন। এর কারণ হিসেবে করদাতারা বলছেন, রেভিনিউ পদ্ধতিতে পৌরকর পরিশোধের সুবিধার বিষয়ে চসিকের পক্ষ থেকে তেমন প্রচারণা চালানো হয় না। তাই তারাও ইরেভিনিউর বিষয়ে তেমন অবহিত নন। তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে চসিকের কর আদায়কারীরাও অনলাইনে হোল্ডিং ট্যাঙ পরিশোধে নিরুৎসাহিত করেন। ম্যানুয়ালি আদায়ে ‘অনিয়ম’এর সুযোগের পাশাপাশি নিজের বার্ষিক আদায়ের টার্গেট পূরণের জন্য এমনটি করেন বলে কর আদায়কারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইনে পৌরকর আদায় কার্যক্রম শুরু করে চসিক। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আরবান পাবলিক এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এ কার্যক্রম শুরু হয়। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালে সাতটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল চসিক। পরে হোল্ডিং মালিক এবং ট্রেড লাইসেন্স গ্রহীতাদের তথ্য নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে এন্ট্রি করা হয়। সবগুলো তথ্য আপলোড শেষ হওয়ার পর ২০২২ সালে অটোমেশন কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি।

এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালিত করায় চসিকের হোল্ডিং ট্যাঙের আলোচিত অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম স্থগিত করেছিল মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে হোল্ডিং ট্যাঙ কার্যক্রম বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের পাঠানো একটি পত্রে হোল্ডিং ট্যাঙের পুনর্মূল্যায়নে (রিঅ্যাসেসমেন্ট) প্রথাগত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে অনুসরণ না করার নির্দেশনা ছিল। একইসঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে অনলাইনভিত্তিক অটোমেশন পদ্ধতি চালু করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, শতভাগ অটোমেশন করতে পারিনি। আমাদের কিছু সমস্যা আছে। নতুন ট্রেড লাইসেন্স অনলাইন ছাড়া দিচ্ছি না। নবায়নের ক্ষেত্রেও অনলাইন অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সবসময় সম্ভব হয় না। কেউ কেউ আগের মতো লাইসেন্স বই নিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তাদের চাহিদামতো বই দিতে হয়। হোল্ডিং কিছু কিছু অনলাইনে আদায় হচ্ছে। তবে প্রথমবার অবশ্যই রাজস্ব সার্কেল অফিসে যেতে হবে ইহোল্ডিং নম্বর নেওয়ার জন্য। পরবর্তীতে করদাতা নিজে নিজে অনলাইনে ট্যাঙ দিতে পারবে ও ইট্রেড লাইসেন্স নিতে পারবে। আমাদের কিছু লজিস্টিকের চাহিদা কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছি। সেগুলো পেলে কয়েকটি সার্কেলে শতভাগ অনলাইন চালু হবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরে বর্তমানে সরকারিবেসরকারি দুই লক্ষ ৯ হাজার ১৬৯টি হোল্ডিং আছে। এসব হোল্ডিংয়ের বিপরীতে বকেয়া এবং হাল মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে পৌরকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২৪ কোটি ৬৯ লাখ ৮৯ হাজার ৭৩০ টাকা।

রেভিনিউ বাড়াতে ১৬ মডেল ওয়ার্ড : পৃথক আটটটি রাজস্ব সার্কেলের আওতায় ৪১ ওয়ার্ড থেকে পৌরকর ও ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় করে থাকে চসিক। অনলাইনে আদায় কম হওয়ায় তিনটি সার্কেলের (, ৫ ও ৭) আওতাধীন পৃথক ১৬ ওয়ার্ডকে মডেল হিসেবে নিয়ে ইরেভিনিউ পদ্ধতিতে শতভাগ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়। কয়েক মাস আগে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হলেও সেখানেও সাফল্য নেই।

মডেল ওয়ার্ডের মধ্যে সার্কেল৩ এর আওতাভুক্ত ওয়ার্ড হচ্ছে পশ্চিম বাকলিয়া, দক্ষিণ বাকলিয়া, দেওয়ান বাজার, আন্দরকিল্লা এবং বঙির হাট ওয়ার্ড। সার্কেল৫ এর আওতাভুক্ত ওয়ার্ড হচ্ছে লালখান বাজার, বাগমনিরাম, জামালখান, এনায়েত বাজার, উত্তর পাঠানটুলী এবং পাঠানটুলী। সার্কেল৭ আওতাভুক্ত ওয়ার্ড হচ্ছে উত্তর আগ্রাবাদ, রামপুর, উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ আগ্রাবাদ এবং গোসাইলডাঙ্গা।

রেভিনিউর অগ্রগতি : চলতি ২০২৩২০২৪ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ইরেভিনিউ পদ্ধতিতে মাত্র ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩৮০ টাকা পৌরকর আদায় হয়েছে। এর মধ্যে সার্কেল, ৬ ও ৮এ ইরেভিনিউ পদ্ধতিতে এক টাকাও আদায় হয়নি। মডেল হিসেবে থাকা সার্কেলগুলোর মধ্যে সার্কেল৩ এ ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৬৪ টাকা, সার্কেল৫ এ ৩ লাখ ৫ হাজার ৭৪ টাকা এবং সার্কেল ৭এ আদায় হয়েছে মাত্র ৮৪ হাজার ৭৬২ টাকা। এছাড়া সার্কেল২ এ ৯ লাখ ৯৫ হাজার ৪০০ টাকা এবং সার্কেল৪ এ আদায় হয় ৪৫ হাজার ৭৮০ টাকা।

রেভিনিউ পদ্ধতিতে শুধু চলতি মাসে এ পর্যন্ত (১৮ অক্টোবর) সার্কেল১ এ ১ লাখ ১ হাজার ৯৯৭ টাকা, সার্কেল৩ এ ৯ হাজার ৮৮৮ টাকা, সার্কেল৫ এ ৬ লাখ ২৬ হাজার ১০১ টাকা, সার্কেল৬ এ ৮ হাজার ২৯০ টাকা, সার্কেল৭ এ ২ হাজার ৪০৭ টাকা পৌরকর আদায় হয়। চলতি মাসে সার্কেল, ৪ ও ৮ এ ইরেভিনিউ পদ্ধতিতে এক টাকাও আদায় হয়নি।

অনলাইনে যেভাবে কর দিতে হয় : জানা গেছে, অনলাইনে পৌরকর পরিশোধের ক্ষেত্রে চসিকের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ইরেভিনিউ অপশনে যেতে হবে। সেখানে গ্রাহকের মোবাইল ও মেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এরপর ইহোল্ডিং সেবা গ্রহণ করা যায়। তবে গ্রাহকদের আগে ইহোল্ডিং নম্বর সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত যে হোল্ডিং নম্বর আছে তার পাশাপাশি ইহোল্ডিং নম্বর হবে আলাদা। অনলাইন পেমেন্টের যতগুলো সুবিধা আছে অর্থাৎ ব্যাংক, বিকাশ বা কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্টের অপশন আছে সেখানে। এ পদ্ধতিতে করদাতা তার কর সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্যও জানতে পারেন ঘরে বসে।

চসিকের রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সোনালী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক ও নগদের মাধ্যমে অনলাইনে পৌরকর পরিশোধ করা যায়। এর মধ্যে আবার সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সব ব্যাংক বা সকল পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়ে দেয়া যাচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপূজা দেখতে গিয়ে সড়কে মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপির হাঁটা, দৌড়, বসা, হামাগুড়ি কর্মসূচিতে চাপ অনুভব করি না : তথ্যমন্ত্রী