অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বঙ্গবন্ধু টানেল

চট্টগ্রাম চেম্বারের গোলটেবিল বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি পরিপূর্ণ সুফল পেতে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে গুরুত্ব

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২৩ at ৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টারসএর মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করবে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা বঙ্গবন্ধু টানেল নিয়ে গতকাল নগরীর আগ্রাবাদ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু যেমন দেশের জিডিপিতে অবদান রাখছে। তেমনি এই টানেলও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ঘিরে যে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে তার পরিপূর্ণ সুফল পেতে হলে ঢাকাচট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের বিকল্প নেই। বিনিয়োগকারীরা ঢাকা থেকে একদেড় ঘণ্টায় চট্টগ্রামে বিমানযোগে এসে চট্টগ্রাম থেকে দুই ঘণ্টায় মীরসরাই যেতে চাইবেন না। এজন্য ঢাকাচট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে করা গেলে মাত্র দুই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে মীরসরাই শিল্পনগরে আসা যাবে, যা দেশের অর্থনীতির গতিকে ত্বরান্বিত করবে। আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানেল চট্টগ্রামের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধি তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তনে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়ে চট্টগ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ, সুশীল সমাজ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত জানতে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল পদ্মা সেতুর পর দেশীয় সক্ষমতার অন্যতম দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের দায়িত্ব নিজের হাতে নিয়ে একের পর এক মেগা প্রকল্প উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। ওয়ান সিটি টু টাউন হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে কর্ণফুলীর দুই পাড়ের মধ্যে বিকল্প সংযোগের অপরিহার্যতা উপলব্ধি করে এই টানেল বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, বহুল প্রত্যাশার বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হচ্ছে। এটি অনেক বড় একটি খবর। চট্টগ্রামের মানুষের জন্য এটি বিশাল প্রাপ্তি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। তৈরি হচ্ছে পাওয়ার হাব। গভীর সমুদ্র বন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু টানেলের মাধ্যমে এখন আমরা নদীর তলদেশও ব্যবহার শুরু করছি। যা আমাদের অর্থনীতিকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

এম এ মালেক বলেন, বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করা ও ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির দেশে রূপান্তর করার জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে এ টানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রামের বিস্তৃত এলাকার শিল্পায়ন, আবাসন, পর্যটন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে এই টানেল বহুমুখী ভূমিকা রাখবে। শুধু চট্টগ্রামের নয়, দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই টানেলের সুফল পাবে।

এফবিসিসিআই সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি দেশের ব্যবসায়ীদের নেতা। ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করে দেশের বাজার পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে যদি ভূমিকা রাখেন, তাহলে সাধারণ ভোক্তারা উপকৃত হবেন। সাধারণ ভোক্তাদের ভোগান্তি কমাতে সফল হলে আপনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

চেম্বারের সহসভাপতি রাইসা মাহবুব বলেন, নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সবাইকে সচেতন করা। দেশে বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পগুলো কিভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে তা সাধারণ জনগণকে জানাতে ব্যবসায়ী সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন চুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য ফাইন্যান্স মোহাম্মদ শহিদুল আলম, চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, বিকেএমইএর সহসভাপতি ফজলে শামীম এহসান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহসভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী, রিহ্যাবের সহসভাপতি আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী, কক্সবাজার চেম্বার সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী, শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ, আইইবি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এম এ রশিদ, আইএবি চট্টগ্রাম চেয়ারম্যান আশিক ইমরান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক সদস্য জাফর আলম, বিএসআরএম চেয়ারম্যান আলী হুসেইন আকবর আলী, টোয়াব সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী, লুবরেফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ এবং আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থার উপদেষ্টা সিরাজুল হক।

উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল শিপিংয়ের চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল, চেম্বার পরিচালক এ কে এম আকতার হাসেন, মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর, অঞ্জন শেখর দাশ, মো. রকিবুর রহমান টুটুল, মাহফুজুল হক শাহ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, ইঞ্জিনিয়ার ইফতেখার হোসেন, আবু সুফিয়ান চৌধুরী, মাহবুবুল হক মিয়া, মো. রেজাউল করিম আজাদ, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, মোহাম্মদ মনির উদ্দিন, আখতার উদ্দিন মাহমুদ ও ওমর মুক্তাদির।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাদকের বিনিময়ে স্ক্র্যাপ চুরি
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬