জুম্‌’আর খুতবা

মসজিদুল আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা ও ইয়াহুদী ষড়যন্ত্র

অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি | শুক্রবার , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

আল কুরআনের আলোকে মসজিদুল আকসা:

মসজিদুল আকসা প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের পনের পারার সূরা বনী ইস্রাঈলের প্রথম আয়াতে উল্লেখ হয়েছে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, “পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি আপন বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার আশে পাশে আমি বরকতময় করেছি তাঁকে আমার মহান নিদর্শনসমূহ দেখানোর জন্য নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা: ১৭:)

বর্ণিত আয়াতে “মসজিদুল আকসা” যা বায়তুল মুকাদ্দাস নামে পরিচিত। এটি আলকুদস ফিলিস্তিনের পুণ্যভূমি জেরুজালেম এ অবস্থিত। আকসা অর্থ দূরত্ব, যেহেতু এ মসজিদ মক্কা মুকাররমার হেরম থেকে বহুদূরে যার দূরত্ব এক মাসের রাস্তা সেহেতু এটাকে মসজিদুল আকসা বলা হয়। (তাফসীর নূরুল ইরফান, পৃ: ৪৩)

আল্লাহর নবী হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কর্তৃক বায়তুল্লাহ শরীফ তথা কাবা ঘর নির্মাণের চল্লিশ বছর পর তদীয় পুত্র হযরত ইসহাক আলাইহিস সালাম এর পুত্র হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে আল আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র নবুয়ত প্রকাশের একাদশ সনে প্রায় ৬২১ খ্রিস্টাব্দে ২৭ রজব সোমবার শেষ রজনীতে স্বশরীরে জাগ্রতাবস্থায় মিরাজ তথা উর্র্ধ্বজগতের পরিভ্রমণ হয়েছিল মসজিদুল আকসা থেকেই নবীজির আসমানী প্রত্যাদেশ ওহী লাভ ও নবুওয়ত প্রকাশের সময় বায়তুল মুকাদ্দাসই মুসলমানদের কিবলা ছিল। মিরাজ গমনের পূণ্যময় রজনীতে মসজিদুল আকসাতে আমাদের নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইমামাতিতে সকল সম্মানিত নবী রসূলগণ নামায আদায় করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। সকল নবী রসূলগনের সর্দার হিসেবে এতে আমাদের মহান রাসূল ইমামুল আম্বিয়া ও সৈয়াদুল মুরসালীন উপাধিতে স্বীকৃত হন। অসংখ্য নবী রাসূলগণের স্মৃতি বিজড়িত ও বরকতময় পদধূলিতে ধন্য এ বায়তুল মুকাদ্দাস তথা মসজিদুল আকসা। ইসলামী শিক্ষা আদর্শ সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রচার কেন্দ্র মসজিদুল আকসা। পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত রয়েছে এ পবিত্র ভূমির প্রতি নিরন্তর বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ইসলামে তিনটি মসজিদের বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্বের কথা বিঘোষিত হয়েছে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, মক্কা মুকাররমার মসজিদুল হারামে এক রাকাত নামায আদায়ে রয়েছে এক লাখ গুণ সওয়াব। মদীনা মুনাওয়ারার মসজিদে নববীতে এক রাকাত নামায আদায়ে পঞ্চাশ হাজার গুণ সওয়াব। বায়তুল মুকাদ্দাস তথা মসজিদুল আকসা তে নামায আদায়ে রয়েছে পচিশ হাজার গুণ সওয়াব।

হাদীস শরীফের আলোকে মসজিদুল আকসার ফযীলত:

তিনটি মসজিদ ছাড়া পৃথিবীর সব মসজিদ ফযীলতের ক্ষেত্রে সমান। হাদীস শরীফে তিনটি মসজিদের গুরুত্ব ফযীলত ও নির্মাণ ইতিহাস বিশেষভাবে আলোকপাত হয়েছে। হযরত আবু যর গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদুল হারাম, অতঃপর আরজ করলাম এরপর কোনটি? তিনি বললেন মসজিদুল আকসা, আমি জিজ্ঞেস করলাম এ’দুয়ের মধ্যে কতদিনের ব্যবধান রয়েছে, তিনি বললেন চল্লিশ বছর। (মুসলিম শরীফ)

মুজাহিদ (.)’র বর্ণনামতে মসজিদে আকসা হযরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম নির্মাণ করেছন। (তাফসীরে কুরতুবী, খন্ড: , পৃ: ১২৭)

তিন মসজিদে অধিক অধিক সওয়াবের আশায় সফর করার অনুমতি রয়েছে:

ইসলামে তিনটি মসজিদে অধিক সওয়াবের প্রত্যাশায় সফর করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিন মসজিদের মর্যাদা বুঝানোর উদ্দেশ্যেই এ হাদীস এরশাদ হয়েছে, হযরত আবু সায়ীদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, এই তিন মসজিদ ভিন্ন অপর কোনো দিকে (অধিক সওয়াবের আশায় ) সফর করা যাবেনা, মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসা ও আমার মসজিদ। (বুখারী ও মুসলিম)

অথচ মুসলমানরা আজ কতো অসহায় নির্মম নির্যাতনের শিকার মুসলমানদের প্রথম কিবলা মসজিদুল আকসাতে আজ তারা নিষিদ্ধ। বর্বর জালিম অত্যাচারী ইয়াহুদী কর্তৃক প্রতিনিয়ত নিস্পেষিত, ফিলিস্তিনের পুণ্যভূমি আজ মজলুম মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, এবং তার চেয়ে অধিকতর যালিম আর কে? যে আল্লাহর মসজিদগুলোতে বাধা দেয়, সেগুলোতে আল্লাহর নামের চর্চা হওয়া থেকে আর সেগুলোর ধ্বংস সাধনে প্রয়সী হয়। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১১৪)

ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃনিত ও কলংকিত জাতি ইসরায়েলী ইহুদীরা:

ইহুদীরা বায়তুল মুকাদ্দাসকে আজ বিরান ভূমিতে পরিণত করেছে আল কুদস নগরী ফিলিস্তিনকে মুসলিম শূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। ফিলিস্তিনি মুসলমানদের জনজীবন ইতিহাসের এক কঠিন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে, সম্মিলিত ইহুদী ও খৃষ্টানচক্র আজ ফিলিস্তিনের জনগনকে তাদের আবাসভূমি প্রিয় মাতৃভূমি থেকে উৎখাত করার জন্য মার্কিনীদের মদদপুষ্ট পশ্চিমা বিশ্ব ও ইসরায়েলি ইহুদীরা আজ ঐক্যবদ্ধ। বিশ্বের মাঝে খোদা প্রদত্ত অপরিসীম প্রাকৃতিক সম্পদের বিপুল সমারোহে মুসলমানরা গর্বিত হওয়া সত্বেও মুসলিম উম্মাহ আজ শতধা বিভক্ত। মুসলিম রাষ্ট্র সমূহ নানা শ্রেণি মত এবং দ্বন্দ্ব সংঘাত ও বিভেদে লিপ্ত। বিশ্ব ব্যাপী মার্কিনী আগ্রাসনের মুখে মুসলমানদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ঐতিহ্য সভ্যতা সংস্কৃতি শিক্ষা আদর্শ ও অস্তিত্ব ক্রমাগতভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে। মুসলমানদের অনৈক্য ও ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের সুযোগে আমেরিকা ও তার তাবেদার ইহুদী খৃষ্টান চক্র আজ পৃথিবীর দেশে দেশে অবৈধ কর্তৃত্ব দখলদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তারে তৎপর। পৃথিবীর প্রায় দুইশত কোটি মুসলমানদের পারস্পরিক অনৈক্য বিকৃত মানসিকতা, বিলাসিতার কারণে মুসলমানদের পবিত্র স্থান ফিলিস্তিনের মসজিদুল আকসা বায়তুল মুকাদ্দাস আজ ইহুদীদের দখলে। আবর দেশ ও মুসলিম রাষ্ট্র গুলোতে সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক সর্বক্ষেত্রে খৃষ্টান ও ইহুদীদের প্রভাব বিস্তৃত। ইসলামী আদর্শ ও ইতিহাস, ঐতিহ্য পৃথিবীর মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ইসরায়েলী ইহুদী পশ্চিমা বিশ্ব, মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ ক্রুসেড শুরু করেছে। কেবলমাত্র ফিলিস্তিন নয় পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিম অধ্যূষিত জনপদে প্রতিনিয়ত মুসলমানদের রক্ত ঝরছে। ফিলিস্তিনিদেরকে আজ তাদের বসতবাড়ী থেকে উচ্ছেদ করে ইসরায়েলিরা দখল করে নিচ্ছে। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত নিপিড়ীত মুক্তিকামী জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা সন্ত্রাসী কার্যক্রম বলে অ্যাখ্যা দিচ্ছে পক্ষান্তরে ইসরায়েলী বর্বরতা, নৃশংসতা নারকীয় বীভৎসতাকে আত্মরক্ষার অধিকার বলে উৎসাহিত করেছে।

মুসলিম উম্মাহর ঐক্য আজ সময়ের অপরিহার্য দাবী:

ফিলিস্তিনি মুসলমানদের আন্দোলন জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের আন্দোলন। আল আকসা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক, মুসলমানদের ঈমানী চেতনার বাতিঘর। ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে যে সব মুসলিম রাষ্ট্র এখনো নিরব নির্বিকার তাদেরকেও শীঘ্রই এ অপকর্মের খেসারত দিতে হবে। ইসরায়েল শুধুমাত্র ফিলিস্তিন ভূখন্ড নিয়েই সন্তুষ্ট নয় বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইহুদী রাষ্ট্র গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা নিয়েই ইহুদীদের সন্ত্রাসী তান্ডব ক্রমেই দীর্ঘ ও জোরদার হচ্ছে। মুসলিম উম্মাহর এ ক্রান্তিকালে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি আজ সময়ের অপরিহার্য দাবী। ফিলিস্তিন ইস্যূতে মুসলমানদের ঈমান আক্বিদার রক্ষাকবচ মসজিদুল আকসার পবিত্রতা রক্ষা ও সংরক্ষণ মুক্তিকামী ফিলিস্তিনীদের প্রতি কার্যকর রাষ্ট্রীয় সমর্থন পক্ষান্তরে ইসলামের শত্রু, মানবতার শত্রু, অভিশপ্ত ইহুদীদের ঘৃণ্য কর্মকান্ডের প্রতি ঐক্যবদ্ধ জনমত সৃষ্টি করা ইহুদী চক্রের চক্রান্ত থেকে দেশ জাতির সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন ও পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ ঈমান ও ইসলামের দাবী। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন, তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে মজবুতভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিভক্ত হয়োনা। (সূরা: আলে ইমরান, ১০৩)। আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহকে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাওফিক দান করুন।

লেখক : অধ্যক্ষ, মাদরাসাএ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী), বন্দর, চট্টগ্রাম; খতীব, কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ।

আবদুল করিম মাসুদ

ও আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন: নামাযরত অবস্থায় কান্না করলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে কিনা?

উত্তর: দুঃখ যন্ত্রণা বিপদাপদ ইত্যাদি কারণে নামাযরত অবস্থায় মুখ থেকে উহ্‌ আহ্‌ উফ ইত্যাদি শব্দ বের হলে অথবা কান্না করার আওয়াজ সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। যদি কান্নার সময় শব্দ বের না হয় শুধু চোখের পানি বের হয় সেক্ষেত্রে নামায ভঙ্গ হবেনা। (ফতওয়ায়ে আলমগীরি, খন্ড: ১ম, পৃ: ১০১)

তবে নামাযের মধ্যে ইমাম ছাহেবের তিলাওয়াতের কারণে যদি কান্না করে থাকে এ অবস্থা একাগ্রতা ও বিনয়ের কারণে হওয়ার কারণে এতে নামাযের কোন ক্ষতি হবে না। (দুররে মুখতার, রদ্দুল মুখতার, খন্ড:৪৫৬, রাসায়িলে আত্তারীয়া ১ম অংশ)

পূর্ববর্তী নিবন্ধইতিহাসের বরকর্মী আহমদ মমতাজ
পরবর্তী নিবন্ধরিজার্ভ কমে ২০ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলারে