আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি নিয়ে ঐকমত্য

| শুক্রবার , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছেছে প্রথম কিস্তির অর্থের ব্যবহার দেখতে আসা রিভিউ মিশন। এখন আইএমএফ বোর্ডের অনুমোদন পেলে দ্বিতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আজ আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনায় আমাদের সঙ্গে তাদের এগ্রিমেন্ট হয়েছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরে আইএমএফ বোর্ড মিটিং তা অনুমোদন করবে।

মুখপাত্র বলেন, আমাদের প্রস্তাবে তারা রাজি হয়েছেন। দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার আগামী ডিসেম্বরে পেতে আমরা আশাবাদী। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আইএমএফ এর বিবৃতিতে বলা হয়, প্রথম কিস্তির রিভিউ সম্পন্ন করার জন্য যেসব নীতি গ্রহণ প্রয়োজন, সেসব বিষয়ে আজ বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আইএমএফ কর্মকর্তাদর বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

আইএমএফর মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ বলেন, কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকের এই সিদ্ধান্ত এখন আইএমএফ বোর্ডে তোলা হবে অনুমোদনের জন্য। প্রথম রিভিউ সম্পন্ন হলে এঙটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এঙটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এর আওতায় ৪৬ লাখ ২০ হাজার ডলার (কোটার ৩৩ শতাংশ) এবং রেসিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় ২১ কোটি ৯০ লাখ ডলার (কোটার ১৫.৮ শতাংশ) ছাড় করা হবে।

৪৭০ কোটি ডলারের এই ঋণ চুক্তি অনুমোদনের পর গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার হাতে পায় বাংলাদেশ। ঋণের শর্ত হিসেবে বেশ কিছু আর্থিক ও নীতি সংস্কারে মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বাংলাদেশকে।

এর মধ্যে ছিল বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারমুখী করা, ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া, ব্যাংক ঋণের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রিজার্ভের হিসাব আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী করে প্রকাশ, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ইত্যাদি। প্রথম কিস্তির অর্থ ব্যবহারের অগ্রগতি দেখে পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের জন্য আইএমএফ এর আর্টিকেলফোর এর অধীনে রিভিউ মিশনের প্রতিনিধি দলটি গত ৪ অক্টোবর বাংলাদেশে আসে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে তাদের সর্বশেষ বৈঠকে দ্বিতীয় কিস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছন, অর্থিক সংস্কারে নেওয়া বাংলাদেশের পদক্ষেপে আশ্বস্ত হয়েছে আইএমএফ রিভিউ মিশন। ঋণ চুক্তির ছয়টি শর্তের মধ্যে চারটি পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। দুটিতে ব্যর্থতা থাকলেও তা দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ে বাধা হবে না। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ে নতুন কোনো শর্তও দিচ্ছে না আইএমএফ। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে একক দরে নিয়ে আসা, মুদ্রানীতির আধুনিকায়ন, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রিজার্ভের হিসাব করার ক্ষেত্রে আইএমএফ এর পদ্ধতি অনুসরণ এবং রাজস্ব আদায় ও সুদহার বাজারভিত্তিক করা শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। এর মধ্যে রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায় দুটিতে ঘাটতি রয়েছে। আমরা এর ব্যখ্যা দিয়েছি। কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে তা বলেছি। এতে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন।

ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফিতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চেষ্টা থাকবে জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, প্রয়োজনে আবারও নীতি সুদহারে পরিবর্তন আসবে। সকালের ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। অন্যদিকে ১৩ সদস্যর আইএমএফ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইসরায়েলি হামলায় শিশুসহ আরও ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের ও কক্সবাজারের ৪টিসহ একদিনে রেকর্ড দেড়শ’ সেতু উদ্বোধন