কিশোরী ধর্ষণ মামলায় বাবার মৃত্যুদণ্ড

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:০০ পূর্বাহ্ণ

উত্তর পতেঙ্গার ডেবারপাড় এলাকায় ১২ বছরের কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে বাবা মো. নাছির মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল৭ এর বিচার ফেরদৌস আরা এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় মো. নাছির মোল্লা কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মো. নাছির মোল্লা ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়ার শৌলজালিয়া এলাকার মৃত জলিল মোল্লার ছেলে। তিনি উত্তর পতেঙ্গার ডেবারপাড় এলাকার মনছুরের ভাড়া ঘরে স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ বসবাস করতেন।

ট্রাইব্যুনালের পিপি খন্দাকার আরিফুল আলম আজাদীকে বলেন, আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মো. নাছির মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় আটজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে নিজের মেয়ে বলে স্বীকার করছিলেন না মো. নাছির মোল্লা। কিন্তু আদালতের নির্দেশে করা ডিএনএ পরীক্ষায় কিশোরী যে তার মেয়ে তা প্রমাণিত হয়। ঘটনার পর পুলিশ মো. নাছির মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে। তখন থেকে তিনি কারাগারে আছেন বলেও জানান পিপি খন্দকার আরিফুল আলম। মো. নাছির মোল্লার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল তার নিজের কিশোরী মেয়ে পতেঙ্গা থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ঘটনার পাঁচ মাস আগে নানার বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে আসে কিশোরী। তার আরেক বোন আছে। তার মা ইপিজেডের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। মা গার্মেন্টসে থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে সুযোগ বুঝে নাছির মোল্লা তাকে একাধিক বার ধর্ষণ করেন।

কিশোরী মামলার এজাহারে বলেন, ঘটনার সময় সে তার পিতাকে বলে তুমি আমার পিতা, তুমি আমার সাথে এ কাজ করলে কেন? তখন তিনি বলেন, তোর জন্মদাতা পিতা কে, তার গ্যারান্টি কি? তোর প্রকৃত পিতা কে, তা তোর মা জানে। আদালত সূত্র জানায়, কিশোরীর মামলাটি পতেঙ্গা থানা পুলিশ তদন্ত শেষ করে একই বছরের ২৪ জুন কিশোরীর বাবা মো. নাছির মোল্লার বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। এরই ধারাবাহিকতায় পরের বছরের ৬ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু হয় আদালতে।

আদালতের পর্যবেক্ষণ : কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে বাবাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় আদালত একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বাবার কাছে ধর্ষণের ফলে পৃথিবীর সকল পুরুষের প্রতি কিশোরীর ক্ষোভ এবং অবিশ্বাস সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যার কারণে তার স্বাভাবিক জীবন যাপন ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আসামি মো. নাছির মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, শুধু বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবীতে পিতা এবং কন্যার সম্পর্ক পবিত্র এবং শাশ্বত। কন্যা তার পিতার কাছে সর্বাধিক নিরাপদ হিসাবে বিবেচিত হয়। অথচ মো. নাছির মোল্লা শাশ্বত পবিত্র এই সম্পর্ককে কলুষিত করেছেন এবং পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন ও আস্থার বিশ্বাসে আঘাত করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষের সংস্পর্শে আসায় শাবকটি ফেরত নিতে হাতির পালের অনীহা!
পরবর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে একজন গ্রেপ্তার