অ্যাপসে অপরাধের খবর পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে সাধারণ মানুষ সত্যতা নিশ্চিতের পর চলে অভিযান

ঋত্বিক নয়ন | শুক্রবার , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেবা এখন হাতের মুঠোয়। যেকোনও মোবাইল ফোন থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হটলাইনে ফোন করে সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এতে থানায় যাওয়ার ঝক্কি অনেকাংশে কমেছে।

সামপ্রতিক বছরগুলোতে এ ধরনের সেবা বেশ জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছে। পুলিশ, র‌্যাব, সন্ত্রাসবিরোধী ফোর্সের অ্যাপে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের তথ্য দিয়ে যেমন সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে, তেমনি ছবি কিংবা ভিডিও দিয়ে এসব ফোর্সকে জনগণ সহায়তাও করতে পারছে। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, খুন, ডাকাতি, অপহরণসহ সব ধরনের অপরাধে এসব অ্যাপ ব্যবহার করে সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে। আবার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদসহ বিভিন্ন অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সংগ্রহ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে অপরাধ সংক্রান্ত এসব তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে সাধারণ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্রে জানা গেছে, অ্যাপসের মাধ্যমে পাওয়া এসব তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে যাচাইবাছাই করে এর অনুসন্ধান করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

মূলত কাজটি শুরু হয় ২০১৬ সালে। রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার পর থেকে সন্ত্রাস ও অপরাধ দমনে বেশ তৎপর হয়ে ওঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জনসম্পৃক্ততার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়াকে আরও বেগবান করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ পর্যন্ত জনকল্যাণে চালু করা গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ গুলো হলো পুলিশ সদর দফতরের ‘বিডি পুলিশ হেল্প লাইন’, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ‘হ্যালো সিটি’, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ‘রিপোর্ট টু র‌্যাব’ এবং অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) ‘ইনফর্ম এটিইউ’। ইন্টারনেটের সাহায্যে যেকোনও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করা যাবে এসব অ্যাপ। ইন্টারনেটে যুক্ত থেকে যে কোনও সময়, যেকোনও জায়গা থেকে তথ্য দেওয়া যাচ্ছে অ্যাপগুলোয়। যেকোনও বয়সী নাগরিক, যেকোনও শ্রেণি পেশার যে কেউ অ্যাপের মাধ্যমে অপরাধের তথ্য জানাতে পারছেন। অ্যাপগুলো নিজেদের মোবাইলে প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারছেন। অ্যাপগুলো থেকে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পাচ্ছেন তারা। এসব তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এরপর বিভিন্ন ধরনের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এক্ষেত্রে অভিযোগকারীর পরিচয় তারা গোপন রাখেন। তবে অনেক সময় অভিযোগকারী নিজের পরিচয়, ফোন নম্বর বা ঠিকানা না দেওয়ায় কিছু বিষয়ে তদন্তে এগোনো যায় না।

অ্যাপ ‘বিডি পুলিশ হেল্প লাইন’: পুলিশ সদর দফতর পরিচালিত ‘বিডি পুলিশ হেল্প লাইনে’ অনেকেই তথ্য দিচ্ছেন এবং অ্যাপটি তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কার্যকর বলে জানান সদর দফতরের গণমাধ্যম শাখার এআইজি মো. মনজুর রহমান। তিনি জানান, অ্যাপে নানা ধরনের অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সদর দফতরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জনগণের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধ দমনে অনেকাংশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কার্যকর হয়ে উঠছে অ্যাপগুলো।

অ্যাপ ‘হ্যালো সিটি’: ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপটি মূলত জঙ্গি তথ্যের সন্ধানে তৈরি করা হয়েছিল। তবে এর মাধ্যমে জঙ্গি বিষয়ক তথ্য আসে কম। সাইবার ক্রাইম বিষয়ক তথ্য আসে বেশি। এ কথা জানান সাইবার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন। তিনি জানান, প্রতিনিয়ত হ্যালো সিটি অ্যাপে অভিযোগ আসছে। অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনায় আমলে নেওয়া হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনগত (জিডি) ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অ্যাপের বাইরে ফেসবুক এবং ইমেইলের মাধ্যমেও অভিযোগ পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।

অ্যাপ ‘রিপোর্ট টু র‌্যাব’ : র‌্যাবের ‘রিপোর্ট টু র‌্যাব’ অ্যাপের সংশ্লিষ্ট কর্মকতাগণ বলেন, কেউ অভিযোগ করলে তা নির্দিষ্ট থানার সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়নে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যায়। যারা তথ্য দিয়ে থাকেন, এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করতে র‌্যাব সেগুলো যাচাইবাছাই করে থাকে। অভিযোগে দেওয়া তথ্যের সত্যতা পেলে সেসব বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

র‌্যাব জানায়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জঙ্গি বিষয়ক অভিযোগ ছাড়াও নানা অপরাধের বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে থাকি। সংশ্লিষ্ট র‌্যাব ব্যাটেলিয়ানসহ গোয়েন্দা শাখা এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে কাজ করে। সত্যতা পেলে অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।

অ্যাপ ‘ইনফর্ম এটিইউ’ : অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) পরিচালিত অ্যাপ ‘ইনফর্ম এটিইউ’তে প্রতিনিয়ত জমা পড়ছে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ। প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের অপরাধের তথ্য আসছে অ্যাপটিতে। অপরাধের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এবং অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের এখতিয়ারভুক্ত অপরাধগুলো বেছে নিয়ে কাজ করা হয়। জঙ্গি তৎপরতা সংশ্লিষ্ট অভিযোগ করছেন অনেকে। সেসব বিষয় খতিয়ে দেখে অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করাও সম্ভব হচ্ছে। অভিযোগকারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে।

জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি হ্যাক, ফেইক আইডি, অনলাইন ব্যবসায় প্রতারণা, মোবাইল ব্যাংকিং বিষয়ক প্রতারণা, ব্যক্তিগত ছবি কিংবা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, রাজনৈতিক অপপ্রচার, ধর্মীয় উগ্রবাদ বিষয়সহ নানা ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে অ্যাপের মাধ্যমে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীর সাব-রেজিস্ট্রার কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধদারুণ শুরুর পর মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় হার লিটনদের