চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নগরকে বাসযোগ্য, ঝলমলে এবং দৃষ্টিনন্দন পর্যটন শহরে পরিণত করতে স্বল্পমেয়াদী ১২টি প্রকল্পসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা অচিরেই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বলে ১৬ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়। টাইগারপাস নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এসমেক বাংলাদেশ নামে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর নানা দিক তুলে ধরে। এতে চট্টগ্রামকে পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তুলতে যেসব সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বা কীভাবে চট্টগ্রাম শহরকে পর্যটনবান্ধব করা যায় তা উঠে এসেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির প্রস্তাবনায়। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়ন করার সুযোগ রয়েছে তা আরো যাচাই–বাছাই করা হবে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কয়েকদিনের মধ্যে চসিকের আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর চূড়ান্ত করে প্রস্তাবনাগুলোর ডিপিপি তৈরি করা হবে।
সভায় প্রধান অতিথি সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, নদী–সাগর, পাহাড়সহ নানা সুবিধা থাকার কারণে পুরো চট্টগ্রামই পর্যটন শহর। এখানে কী নেই? শুধু নেই ফ্যাসিলিটি। একজন পর্যটক এসে এখানে যে সুবিধা পাওয়ার কথা সেগুলো পাচ্ছে না। যে প্রস্তাবনা এসেছে তা একটু চেষ্টা করলে বাস্তবায়নে তেমন বেগ পেতে হবে না।
স্বল্পমেয়াদী ১২ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ফিরিঙ্গিবাজার থেকে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত নদীকে ঘিরে বিভিন্ন পার্ক স্থাপন এবং পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি করা। প্রস্তাবিত পার্কের মধ্যে মেরিনা পার্ক, মনুমেন্ট পার্ক, স্পোর্টস এবং কমিউনিটি পার্ক, ইকোপার্ক, ফরেস্ট পার্ক ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়া চর বাকলিয়ায় রিসোর্ট এবং চট্টগ্রাম আই স্থাপন, শহরে ক্যাবল কার স্থাপন এবং ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিসের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব রয়েছে। আগ্রাবাদ ঢেবাসহ শহরের সমস্ত প্রধান জলাশয়কে ঘিরে সৌন্দর্যবর্ধন, পার্ক তৈরি, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ওয়াটার ফ্রন্ট ডাইনিং পানির ফোয়ারা স্থাপন। বাটালি হিল ও সিআরবির মধ্যে ইকোব্রিজ নির্মাণ এবং শহরে আন্তর্জাতিক মানের ৪৫টি মেগা মল নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে একটি আন্তর্জাতিক মানের শহরে রূপান্তরিত করা যায়। এছাড়া পেইড কার পার্কিং বিল্ডিং নির্মাণ এবং অন্যান্য সড়কে পার্কিং স্থাপন প্রকল্পেরও প্রস্তাবনা রয়েছে।
নগরে সৌন্দর্যবর্ধন কর্মসূচি নিয়ে অনেক কথা। এই সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো ২০১৬ সালে জামালখান রোড ডিভাইডারে সবুজায়নের মাধ্যমে। পরবর্তীকালে আরো কিছু জায়গায় স্পন্সরের বিনিময়ে বাগান ও ম্যূরালনির্ভর সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম হাতে নেয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কাজগুলো সব মহলে প্রশংসাও পায়। অভিনন্দন জানানো হয় মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য নগরবাসীর, সময়ের সাথে সাথে বাগানের সৌন্দর্য আড়াল হতে থাকে বাণিজ্যের থাবায়। দোকানই যেন মুখ্য হয়ে উঠে, আড়ালে চলে যায় বাগানবিলাস!
সিএনএ’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, ‘গ্রিন সিটি’ ও ‘ক্লিন সিটি’ স্লোগান দিয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। কিন্তু সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রমের এক পর্যায়ে ফুটপাত দখল করে দোকান, অ্যাকুরিয়ামের নামে অ্যাকুরিয়াম সরাঞ্জামাদির দোকান, রেস্টুরেন্ট নির্মাণসহ অপরিকল্পিত যাত্রী ছাউনির নামে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের ধুম লেগে যায়।
স্বার্থসিদ্ধির সেসব স্থাপনা এখন নগরীর নানা জায়গায় বেশ দৃষ্টিকটু রূপ নিয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন নেই। সবুজকে প্রাধান্য দেয়া হলে সবাই খুশি। কিন্তু সবুজকে প্রাধান্য না দিয়ে দোকান নির্মাণকে যদি প্রাধান্য দেয়া হয়, তাহলে সে ব্যাপারে সেখানেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তাঁরা বলেন,‘নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম দেখে মনে হয় দোকানের জন্যই সৌন্দর্য, সৌন্দর্যের জন্য দোকান নয়। কিন্তু এই কার্যক্রমটি হওয়ার কথা ছিল উল্টো। সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজাইন করে এবং অগুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে দোকান নির্মাণ করা, যেখানে সৌন্দর্যের কোনো হানি হবে না। তবেই এই কার্যক্রমটি প্রশংসিত হতো। এখন দোকানের আড়ালে পড়ে গেছে সৌন্দর্য।’
নগরকে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন শহরে পরিণত করতে এখন সিটি করপোরেশন যে কাজটি বাস্তবায়ন করছে, তাতে আমরা আশা করবো, এতে সৌন্দর্যের দিকটাই প্রাধান্য পাবে। বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও তা যেন দৃষ্টিকটূ না ঠেকে।