২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “শাপলা চত্বরে থেকে কী হলো শেষ রাতে? পালিয়ে গেল না? আমি বলতে চাই না, আরও করুণ পরিণতি হবে বিএনপির। শেখ হাসিনা মাথা নত করে না, আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না।”
সরকারবিরোধী ‘চূড়ান্ত আন্দোলনে’ বিএনপি ঢাকা অবরোধের মতো কর্মসূচি দিতে চাইলে ‘পরিণতি’ ভালো হবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন ।
আজ সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকালে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবলীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
কাদের বলেন, “আমরাও প্রস্তুত আছি, অবরোধ করলে বিএনপি অবরোধ হয়ে যাবে। লুকিয়ে, চুরি করে ঢুকছ? এরপরে পালাবার পথ পাবে না।”
১৩ দফা দাবিতে ঢাকা অবরোধ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শেষে ২০১৩ সালের ৫ মে বিকেলে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় হেফাজতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত সেখান থেকে ‘না সরার’ ঘোষণাও দেয়। তবে মধ্যরাতে র্যাব, পুলিশ, বিজিবির যৌথ অভিযানে হেফাজত-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ধর্মভিত্তিক সংগঠনটি ঢাকায় আর বড় কর্মসূচি নিয়ে আসতে পারেনি।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় এবং সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে দুর্গা পূজার পর থেকে ‘চূড়ান্ত আন্দোলনে’ নামতে বিএনপি যে ঘোষণা দিয়েছে, সেখানে ঢাকা অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
সরকার পতনের দাবিতে গত বছরের ডিসেম্বরে বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গও উঠে আসে কাদেরের বক্তব্যে।
বিএনপিকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না তিনি বলেন, “খেলা হবে, ছাড় দেব না ফখরুল। ডিসেম্বরের চেয়েও কড়া খেলা হবে। আওয়ামী লীগের অ্যাকশান, যুবলীগের অ্যাকশান, ডাইরেক্ট অ্যাকশন।”
আগামী ১৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগও রাজধানীতে জমায়েত করবে বলেও জানান কাদের।
তিনি বলেন, “‘চুরি করে’ এসে ঢাকায় আত্মীয় স্বজনের বাসায়, অতিরিক্ত কাপড় আনতে বলেছেন ফখরুল। তখন আমরা কি ললিপপ খাব?”
নেতা-কর্মীদের কাদের বলেন, “১৮ তারিখ আরও বেশি করে আসতে হবে। আন্দোলনের নবতর পথযাত্রার সূচনা করব, আন্দোলনের মিছিল নিয়ে বয়ে যাব বিজয়ের বন্দরে।”
পশ্চিমা দেশগুলো থেকে ‘সাহস পাওয়ার’ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “ফখরুল বলেন পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন আন্দোলনে নাকি বিএনপিকে সাহস যোগাচ্ছে? আমরা এটা জানি না, এখবর হাছা না মিছা? মিথ্যা কথা আর কত বলবা ফখরুল? পশ্চিমা বিশ্বের যারা বাংলাদেশে এসেছে, যারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে, যারা বিদেশে কথা বলেছে, তারা বলেছে বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। এ কথা আমেরিকাও বলেছে, এ কথা ইউরোপও বলেছে। ফখরুল কোথা থেকে মিছা, আজগুবি খবর নিয়ে আসল?”
আগের দিন রাজধানীতে দলীয় এক কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল বলেন, “একটা কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যেটা আমি আগেই বলেছি আপনাদেরকে যে, আমরা একা নই। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমা বিশ্ব তারা কমিটেড টু ডেমোক্রেসি… এটার ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। তাদের যে কমিটমেন্ট আছে গণতন্ত্রের প্রতি, সেই কমিটমেন্ট আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই।”
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, “ফখরুল সাহস পাচ্ছেন বিদেশ থেকে, আমরা বাংলাদেশের জনগণের সমর্থনে সাহস পাচ্ছি। আমরা কাউকে ভয় পাই না। যতক্ষণ জনগণ সঙ্গে আছে, ততক্ষণ ভয় নেই। বিদেশি সমীক্ষা এসে পড়েছে, বাংলাদেশের ৭০ ভাগ লোক আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে।”
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান নিখিলও বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী।