প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন। টানেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে আনোয়ারায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। তবে ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছে টানেলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ শতাধিক পরিবার। মামলা ও নানা জটিলতায় আটকে আছে তাদের ভাগ্য। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে গতকাল বিকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিক ও জনপ্রতিনিধিরা।
বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী জানান, বঙ্গবন্ধু টানেল আমাদের জন্য অহংকারের। ২৮ তারিখ উদ্বোধন হবে। তবে দুঃখের বিষয়, মামলা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এখনো পর্যন্ত ৩ শতাধিক পরিবারের ক্ষতিপূরণের টাকা আটকে আছে। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সুপারিশে কয়েক মাস আগে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তিন শতাধিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ভাগ্যের জট খুলেনি। তাই এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
গতকাল প্রকল্প কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত মঞ্জুরির অর্থ প্রদান কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তির খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ শতাধিক পরিবার ক্ষতিপূরণ পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে। পরিবারগুলোর পক্ষে গতকাল বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মো. আবু রায়হান দোলনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য মো. মুছা তালুকদার, সাদ্দাম হোসেন, রুপন বসু ও আবদু রহিম, ক্ষতিগ্রস্ত আলী হোসেন, দোলন গুপ্ত, বিজন গুপ্ত প্রমুখ। একইসাথে টানেলের উপ–প্রকল্প পরিচালক (প্রশাসন) ও সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালকের কাছে পুনর্বাসনের অতিরিক্ত মঞ্জুরি কার্যক্রম চলমান রাখতে আবেদন করা হয়।
প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় পুনর্বাসনের অতিরিক্ত মঞ্জুরি কার্যক্রম স্থগিত করে টানেল কর্তৃপক্ষ। পরে ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সুপারিশে এই কার্যক্রম ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এরপর মাত্র ৭ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা হয়। মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় এখনো ক্ষতিপূরণের ১৮০ কোটি টাকা আটকে আছে। গত ৩১ আগস্ট প্রকল্প কর্তৃপক্ষ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ৩১ অক্টোবর ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত ফাইল জমা করার শেষ দিন। ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান থাকবে মর্মে নোটিশ করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি, অধিগ্রহণকৃত ভূমির অনেক দাবিদার (প্রকৃত মালিক) করোনাকালীন অফিস আদালত বন্ধ থাকা, অনেকে প্রবাসে থাকায় প্রকৃত মালিকানা ও ভুল বিএস রেকর্ড সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে মামলা মোকদ্দমা বিচারাধীন থাকায়, নাবালকদের অভিভাবক নিযুক্ত সংক্রান্ত সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে অনেকে ভূমির ক্ষতিপূরণের টাকা এখনো উত্তোলন করতে পারেনি।
এদিকে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা। ভূমির মালিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক, ইউএনওসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রীর ধারস্থ হয়েছেন তারা।
ইউপি সদস্য মো. মুছা তালুকদার বলেন, শুধু মামলার কারণে নয়, এলএ শাখার সার্ভেয়ার বদলি হওয়ার কারণেও অনেকে ক্ষতিপূরণের টাকা তুলতে পারেনি।
এ বিষয়ে টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, টানেল কর্তৃপক্ষ সবসময় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে ছিল। তাদের দফায় দফায় সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিজেদের জায়গা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ক্ষকিগ্রস্তরা মালিকানা ঠিক করতে (মামলা নিষ্পত্তি) না পারায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করব নভেম্বর পর্যন্ত টাকা উত্তোলনের সময় বৃদ্ধি করার।