মশক নিধন, রাজস্ব আদায় ও জলাবদ্ধতা ইস্যুতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে সমন্বয় সভা করলেও সভাগুলোর ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি। এ সময় তিনি চসিক রাজস্ব খাতে যে আয় করে এবং মশক নিধন খাতে যে ব্যয় করে তার হিসাব চান। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব আয় থেকে খাল রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলেও চসিক কেন পারছে না সে প্রশ্ন করেন। এছাড়া বন্দর থেকে কর্পোরেশনের জন্য প্রস্তাবিত রাজস্ব আদায়ে চসিককে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন।
গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন কার্যক্রম সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি। সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সভার আলোচ্য বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন কার্যক্রম থাকলেও এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প থাকলেও সেটা আলোচনার বাইরে ছিল। জলাবদ্ধতা নিয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রসঙ্গ : স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, এখন যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটা দিয়ে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন হবে? সেটা নিয়ে আপনাদের সংশয় আছে, আমার নিজেরও আছে। এটা ছাড়াও তো আরো অনেক কারণ আছে। এটা নিয়ে আপনাদের কোনো স্টাডি আছে? আপনারা তো ওয়াসাকে ডেকে নিয়ে বসতে পারেন।
তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ ঠিকভাবে না হলে কষ্ট পাই। কাজের মান গুণগত না হলে, মানুষের কল্যাণে না হলে কষ্ট পাব। মানুষের জন্য আমাদের করার অনেক কিছু আছে। কিন্তু যথাযথ সেবা দেওয়া হবে না। নালা করব, কিন্তু সেটা টেকসই হবে না, মানুষের কাজে আসবে না। তাই জনগণের জন্য কাজ করার সময় বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, যাতে টেকসই হয়।
তিনি বলেন, হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এত টাকা ব্যয় করার পরেও কেন জলাবদ্ধতা হবে? এটা আমাকে যন্ত্রণা দেয়। বারবার দগ্ধ হই। কী কাজ হচ্ছে তার আউটপুট চাই। শুধু মিটিং করলাম, রেজুলেশন করলাম; এগুলো শুনতে শুনতে বিরক্ত। জলাবদ্ধতা নিয়ে কোনো স্টাডি বা সমীক্ষা আছে কি আপনাদের?
তিনি বলেন, ঢাকার দুই মেয়র নিজেরাই অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ করেছে জলাবদ্ধতা নিয়ে। অনেকগুলো খাল খনন করেছে। এখন আর সাত আট দিন পানি জমে থাকে না। দুই–তিন ঘণ্টা পর নেমে যায়। দুই মেয়রকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে দুই মেয়র কাজ করেছেন।
এ সময় চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জলাবদ্ধতার জন্য অপরিকল্পিত নগরায়নের কথা বলেন। তখন মন্ত্রী বলেন, এটা ঢাকায়ও আছে। সারা পৃথিবীতে প্রথম নগরায়ন এভাবে হয়েছে। পরিকল্পনা হয়েছে পরে। আগেরটা বাদ দেন। এখন কি করছেন?
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, আমরা স্যুয়ারেজ এবং ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান করি। চট্টগ্রাম শহরে কয়টা খাল আছে কেউ জানে না। আমাদের মাস্টার প্ল্যানের কারণে জানতে পারি ৭৫টা খাল ছিল, এখন আছে ৫৭টি। এই ৫৭–এর মধ্যেও অনেকগুলো দখল হয়েছে। খাল কতটুকু হওয়া উচিত, খালের গভীরতা কত হওয়া উচিত সবগুলো আমাদের মাস্টার প্ল্যানে দেওয়া আছে। সে আলোকে কাজ করলে জলাবদ্ধতা হবে না। এটা একটা যুগান্তকারী মাস্টার প্ল্যান।
তখন তাজুল ইসলাম বলেন, আপনাদের তো মাস্টার প্ল্যান দিয়ে দিছে। এটার বাস্তবায়নের কী অবস্থা? এরপর রফিকুল ইসলাম বলেন, ৫৭ খালের জন্য মাটি উত্তোলন করতে হবে ১৪ দশমিক ৭ লক্ষ ঘনমিটার। সিডিএর প্রকল্পে ৩৬ খাল থেকে সাড়ে ৯ লক্ষ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করবে। আরো ৪ দশমিক ৭ লক্ষ ঘনমিটার মাটি কিন্তু রয়ে যাবে। আমরা সম্প্রতি ২১ খাল নিয়ে কনসালটেন্ট নিয়োগ করেছি।
মিটিংয়ের আউটপুট নিয়ে প্রশ্ন : সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবরের সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সংস্থার মধ্যে সমন্বয় ও মনিটরিংয়ের জন্য বিভাগীয় কমিশনারকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটি প্রতি মাসে সভা করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত ছিল।
তখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী করে বলেন, প্রতি মাসে সভা করেছেন? নিয়মিত প্রেরণ করেছেন? উত্তরে রফিক বলেন, প্রায় করা হয়। এরপর মন্ত্রী বলেন, কয়টা সভা করেছেন ঠিকভাবে বলেন।
এ সময় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের মধ্যে ডিজাইনে কোনো কারিগরি ত্রুটি আছে কিনা সেটা নিয়ে একটা নির্দেশনা ছিল। এটা নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। উনারা একটা কারিগরি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। ওটা সাবমিট করা হয়েছে।
তখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, এরপর সলিউশন কি হলো, মন্ত্রণালয় কি করল? তখন আনোয়ারা পাশা বলেন, ওটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমাদের কাছে নেই।
তাজুল ইসলাম বলেন, সিডিএ বা পানিসমপদ মন্ত্রণালয় যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করুক নগরপিতার তো সব জায়গায় এঙেস করার সুযোগ আছে। প্রকল্প যে বাস্তবায়ন করুক উনাকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা কিন্তু উনাকে ধরব।
এ সময় চসিকের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তখন মন্ত্রী বলেন, মিটিং করেছেন, আউটপুট কী? আমি আউটপুট দেখতে চাই। সত্যি করে বলেন, আমরা কি আনুষ্ঠানিক মিটিং করি নাকি আসলেই অর্থবহ মিটিং করি। তিনি বলেন, আমি নিজেও বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে সভা হওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছি। তখন মেয়রও ইলেকটেড ছিলেন না। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আছে এখানে, পলিটিক্যাল কন্ডিশনের কারণে সমন্বয় করা কঠিন হয়ে যেত। তাই উনাকে (বিভাগীয় কমিশনার) কো–অর্ডিনেটর করা হয়। কিন্তু দায়িত্বটা আপনাদের, নগরপিতা হিসেবে সকল দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের।
রাজস্ব আয়ের হিসাব চান মন্ত্রী : এলজিআরডি মন্ত্রী চসিকের রাজস্ব আয়ের হিসাব চেয়ে বলেন, এখানে রাজস্ব আয়ের সুযোগ কত আছে? এ তথ্য আছে? তখন চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গত বছর ৩৫৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়। এর বাইরে প্রকৌশল, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিভাগের সামান্য কিছু আয় আছে। মন্ত্রী ডিমান্ড কত জানতে চাইলে নজরুল বলেন, ৮০০ কোটি টাকার উপরে ছিল। এ সময় মন্ত্রী বলেন, তথ্যগুলো তো আপডেট নেই। এগুলো তো থাকা উচিত ছিল। এরপর সিআরও বলেন, এ বছর ডিমান্ড হচ্ছে ৪২৪ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত ১০০ কোটির টাকার বেশি আয় হয়েছে। এতে সন্তোষ প্রকাশ করে তাজুল রাজস্ব বৃদ্ধিতে সোর্স বৃদ্ধিতে কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন।
মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়েও অসন্তোষ : স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করে বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আপনাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ঢাকায়ও কিন্তু আমরা একেবারে নিঃশেষ করতে পারিনি। আপনাদের এখানে তৎপরতা কী? আপনাদের অবস্থান থেকে এডিস মশা নির্মূলে চেষ্টা করছেন কী? সেটার জন্য যদি কেবল অনুষ্ঠান করেন তাহলে হবে না। তিনি এ বিষয়ে সচেতনতার ওপর জোর দেন এবং কাউন্সিলদেরও এ জায়গায় দায়িত্ব আছে বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের চেষ্টার বিষয়ে অভিযোগ আছে, ওরা ঠিকভাবে করছে না। সময় পেলে আমি নিজেও কয়েক জায়গা ভিজিট করতাম। এজন্য তো আমরা আপনাদের টাকা দিই। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে অত টাকা দিই। এখন আপনার কোথায় কীভাবে খরচ করেন বলেন।
এ সময় চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কমর্তকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম চসিকের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন। তিনি কীটনাশক ছিটানোর পাশাপাশি খালে কালো তেল দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান। এনফোর্সমেন্ট টিম দিয়ে কীটনাশক ছিটানো এবং গ্রোথ সেন্টারে মশক নিধনে জোর দেওয়ার কথা বলেন। এছাড়া হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে আক্রান্ত ব্যক্তির এলাকায় কীটনাশক ছিটানোর কথা বলেন।
মন্ত্রী গ্রোথ সেন্টার কী জানতে চান। তখন আবুল হাশেম বলেন, যেখানে জনসমাগম বেশি হয় সেখানে ছিটানো হয়। মন্ত্রী বলেন, এডিস মশা তো সেখানে হয় না। তিনি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দেন।
এর আগে সভার সূচনা বক্তব্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, কেন চট্টগ্রাম শহর হাসবে না? কোথায় ভিন্নতা আছে? কেন আমারা মানুষের ধোঁকামি করব? কেন এডিস মশা মানুষকে কামড়াবে? হ্যাঁ, ঢাকাতেও এডিস মশা নির্মূল করতে পারিনি, সেটার জন্য বলতে পারেন। কিন্তু ৯০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। ব্রাজিলে একদিনে ১১ হাজার আক্রান্ত হয়েছে। পরশু ঢাকা সিটিতে হয়েছে ৫৬৯ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়েছে চট্টগ্রাম শহর। চট্টগ্রামে আমরা কী করি? মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আরে ভাই, আপনি যদি একবার হেঁটে যান তখন মানুষের মধ্যে একটা মুভমেন্ট সৃষ্টি হবে। এই কাজগুলো কী আমরা করি? আপনার সকল নাগরিক যদি স্ব স্ব বাড়িটা পরিষ্কার রাখে, এডিস মশা তো হবে না। তিনি বলেন, আমরা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব, আমাদের দায়িত্বটা পালন করছি?
মন্ত্রী বলেন, কেন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পর ওয়াটার ড্রেনেজ ঠিকভাবে হবে না? পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্প আছে, অথচ শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে জলাবদ্ধতা হবে। কেন হবে? আমার বিবেক কী নাড়া দিবে না?
বন্দর থেকে রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে : ২০ নং দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মোহাম্মদ হাসনী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সরকার নেয়। এক হাজার কোটি টাকা আমাদের দিলে বন্দর গরিব হয়ে যাবে? আমরা তো কারো কাছ থেকে ট্যাঙ বাড়াতে পারছি না। আমরা যদি ট্যাঙ বাড়াতে যাই, এই শহরের মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। পার্টির বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। আমার মেয়র জোর করে ট্যাঙ আদায় করতে পারবেন না। কাউকে জোর করে আমরাও পারব না। বন্দর হাজার হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশে খরচ করে, আমাদের কিছু দেন না।
তখন কাউন্সিলরকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন, আমরা তো আগে সিদ্ধান্ত দিয়েছি। তখন বন্দর চেয়ারম্যানও ছিলেন। আপনারা আদায় করেন না কেন? আদায় করার বহু পথ আছে। আমি কী সব কথা এখানে বলে দেব নাকি? আপনার রেভিনিউ ইনকামের জন্য আপনি চিন্তা করবেন না? এজন্য যে ধরনের এফোর্ট দেওয়া দরকার, তা আপনি করবেন না? আপনারা রাস্তা ব্যবহার করে, তাতে বছরে হাজার কোটি টাকা খরচ হয়, এগুলো মেটাবে কোত্থেকে? এখানে সব কথা তো মন্ত্রী বলবেন।
তখন মন্ত্রীকে কাউন্সিলর বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আমাদের এক হাজার কোটি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থাটা করেন।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বন্দর চসিকের সড়ক ব্যবহারের বিষয়ে একটি এজেন্ডা পড়ে শোনান। ওই এজেন্ডা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু বন্দরের মালামাল পরিবহনে সিটি কর্পোরেশনের রাস্তাঘাট, অবকাঠামো ব্যবহার করা হয়, তাই বিষয়টিতে সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ভারী যানবাহন চলাচলে করে বিধায় সিটি কর্পোরেশনের রাস্তাগুলো দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উক্ত ক্ষতি পূষণে চট্টগ্রাম বন্দরের মালামাল পরিবহনকারী পরিবহন হতে আদায়কৃত নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল বন্দর থেকে কর্পোরেশনকে প্রদানের জন্য এলজিআরডি মন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে চসিকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন–২০২২ এর খসড়ায় বন্দরের মোট আয়ের এক শতাংশ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে প্রদানের বিষয়ে প্রস্তাবনা হিসেবে থাকলেও পরবর্তীতে চুড়ান্ত আইনে তা সন্নিবেশিত হয়নি। এটা খুব দুঃখজনক।
মন্ত্রী বলেন, আপনারা যদি দায়বদ্ধতা মনে করতেন, আপনারা যদি দায়িত্ব নিতেন, তাহলে এমন হতো না। সিদ্ধান্ত দেওয়া আছে, তা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না কেন? আপনারা সিটি কর্পোরেশন, আপনারা বাস্তবায়ন করেন। বন্দর চেয়ারম্যানকে বলেন। যদি এটা না হয়, বলেন, রাস্তাঘাট তো অনেকে বন্ধ করে দিয়েছে। আমিও বন্ধ করে দেব। আপনারা আমার মুখ দিয়ে কথা বলাতে চাইছেন কেন? উদ্দেশ্য হলো, আপনারা ভেতরে ভেতরে সব ঠিক থাকবেন। আপনার রাস্তা ব্যবহার করে, আপনারা রাস্তা ব্যবহার করতে দিলেন কেন? আপনারা চেয়ারম্যানের কাছে মেয়রসহ একবার গিয়ে বলেন। ধরেন না কেন? যুক্তিতে আসেন। মিডিয়াতে যান, প্রেস হোক, সবাই জানুক। স্বাভাবিকভাবে সরকার যে সাপোর্ট দরকার দেবে।
সিডিএকে দোষারোপ : চৌধুরী হাসান মোহাম্মদ হাসনী বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হলো, উনারা ১৭টি খালের কাজ শেষ করেছেন। আমরা এলাকায় বসবাস করতে পারি না পানির জন্য, মানুষের কষ্টের জন্য। উনারা বলছেন ২০১৮ সাল থেকে কাজ করছেন, আজকে ২০২৩ সাল। খালে আগে যে রকম মাটি ছিল এখন আরও বেশি আছে। আমার প্রশ্নটা হলো, কখন সেটা পরিষ্কার হবে? এই সিদ্ধান্তটা আমরা সুস্পষ্ট জানতে চাই। কারণ খালগুলো থেকে তারা যে পরিমাণ মাটি উত্তোলন করেছে, তার চেয়ে খালে এখন পাঁচ গুণ বেশি মাটি আছে। এই মাটি সিটি কর্পোরেশনের টাকা দিয়ে পরিষ্কার করতে পারবে কিনা মেয়র মহোদয় জানেন। তবে আমি এই ওয়ার্ডের ১৭ বছর কাউন্সিলর, আমাদের একটা কাজির খাল আছে। ২০১৮ কি ১৯ সালে এক সপ্তাহ মাটি পরিষ্কার করা হয়েছিল। এখন ওই খালে পাহাড় পরিমাণ মাটি হয়েছে। কেউ কোনোদিন পরিষ্কার করতে পারে না।
তিনি বলেন, সিডিএ বিল্ডিংয়ের প্ল্যান দেন। আমার বাসার পাশে ৬ মিটার রাস্তা দিয়ে প্ল্যান দিলেন ১০ তলা। যখন আমি গেলাম দেখলাম রাস্তা আছে ৪ মিটার। অ্যাপ্রোচ পর্যন্ত ৬ মিটার, বিল্ডিং হলো ১০ তলা। তারা যখন প্ল্যান দেন, তখন সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের সাথে কোনো কথাই বলেন না। আমাদের মেয়রের সাথে বলেন না, আমাদের সাথেও বলেন না। ওই এলাকায় গিয়ে রাস্তা মাপলাম। দেখলাম ৬ মিটার রাস্তা হলে উনার বিল্ডিংয়ের মধ্যে পড়ে। এখন আমরা যাব কোথায়? এই শহরে যত্রতত্র বিল্ডিং হচ্ছে। কোনো ভবনে কেউ রাস্তায় ছাড়ে না। কেউ এক ফুট রাস্তাও ছাড়ে না। আরও বরঞ্চ ৪ মিটারের জায়গায় সিডিএ ৬ মিটার লিখে প্ল্যান দিয়েছে।
এ সময় মন্ত্রী বলেন, আমরা নতুন করে আইন বানাতে পারব না। তাদের (সিডিএ) আইন বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি ড্যাবের সভাপতি ছিলাম। তখন যখন সমস্যা হলো সকলের সাথে আমি বসে কথা বলেছি। এখন আপনারা এই শহরের। আপনারা বসে সিডিএর সাথে কথা বলেন। এই শহরে থাকবেন, কথা বলবেন না, পাশ কাটিয়ে চলবেন।
মন্ত্রী বলেন, সব কথাই আমার সামনে বলবেন নাকি। কিছু কাজ গোপনে করেন না। মানুষকে দেখিয়ে দেখিয়ে করার দরকার কী। ভালো কাজ কিছু করেন। আমরাও কি সবকিছু এভাবে বলি নাকি?
কাউন্সিলর বলেন, আমি যদি ওই লোকের সাথে হেচিংয়ে যাই, আমিও তো আগামীবার ভোটে দাঁড়াব। তখন মন্ত্রী বলেন, ভালো কাজ করলে ভোট কমে না। আমি তো ছাত্রলীগ, যুবলীগের অনেক পোলাপানদের বের করে দিছি। আমার তো ভোট কমে নাই। আমার ভোট আরও বেড়েছে। এটা একটা ফালতু থিংস। দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করলে জনগণ এমনে ভোট দেবে। আমি তো ভোটে এমপাওয়ারমেন্ট। আমি এমপি হয়ে তো বসে থাকলে চলবে না। আর অবৈধ কাজ করলে তো আপনার ভোট করাই দরকার নাই।
সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিম, অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী, মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আলি আখতার হোসেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চসিকের সচিব খালেদ মাহমুদ, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিম এ খান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ।