বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের হারের তালিকাটা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে। আগের ম্যাচে ইংলিশদের কাছে লজ্জার হারের পর এবার নিউজিল্যান্ডের কাছে হারল। এবারের বিশ্বকাপটা হবে ব্যাটারদের খেলা। সেটা টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদশে যেন হাঁটছে সে স্রোতের বিপরীতে। দলের ব্যাটাররা পারছে না নিজেদের দায়িত্বটা পালন করতে। আর তাতেই হারের মঞ্চ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো দলের টপ অর্ডারই মূল ভরসা। বাংলাদেশের সে ভরসাটাই ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। ফলে শুরুতেই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে পরের ব্যাটাররা। শেষে সে চাপ থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারে না। যার ফলে গড়া হয় না বড় স্কোর। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল আরো একটি ম্যাচে হারল বাংলাদেশ। বোলাররা যে আহামরি কিছু করেছে তাও কিন্তু নয়। তবে বোলারদের লড়াই করার মত পুঁজি দিতে পারেনি ব্যাটাররা। পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটার এবং বোলাররা দেখিয়েছে শতভাগ পেশাদারিত্ব। ইনজুরি থেকে ফিরে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমেই বাজিমাত করলেন উইলিয়ামসন। সে সাথে কনওয়ে, মিচেলরা দিয়েছেন দারুণ দায়িত্বশীলতার পরিচয়। আর তাতেই আরো একটি সহজ জয় পেল নিউজিল্যান্ড।
গতকাল চেন্নাইতে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়ে টুর্নামেন্টে টানা তৃতীয় জয় তুলে নিল নিউজিল্যান্ড। আর বাংলাদেশ পেল টানা দ্বিতীয় হারের স্বাদ। ক্রিকেটের তিন বিভাগের কোনোটিই গতকাল বাংলাদেশের ঠিকঠাক মত যায়নি। ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিন বিভাগেই বলতে গেলে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। এতগুলো ব্যর্থতা এক হলে হার ছাড়া আর কিইবা জুটতে পারে ভাগ্যে। বাংলাদেশের বেলায়ও ঠিক তাই হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যাটাররা যেখানে রানের জন্য যুদ্ধ করেছে সেখানে রানের ফুলঝুরি ছড়িয়েছে নিউজিল্যান্ড ব্যাটাররা। আর তাতেই টানা তৃতীয় জয় তাদের।
চেন্নাই চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে টসে জিতে বাংলাদেশকে কেন ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক টম ল্যাথাম সেটা বুঝা গেছে ইনিংসের প্রথম বলেই। তানজিদ তামিমকে নিয়ে ইনিংসের সূচনা করতে নেমেছিলেন লিটন দাশ। কিন্তু প্রথম বলেই লিটন গেলেন পুল করে ছক্কা মারতে। কিন্তু ঠিকঠাকমত হলো না। বাউন্ডারির কাছেই ধরা পড়লেন লিটন। এরপর মেহেদী মিরাজ যোগ দেন তানজিদ তামিমের সাথে। যোগ করেন ৪০ রান। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না তামিমও। ফার্গুসনের বলে কনওয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ১৭ রান করে। আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটিং নিয়ে অনেক কথা বলা নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরলেন অবিবেচকের মত ৮ বলে ৭ রান করে। ৫৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দল যখন বেশ চাপের মুখে তখন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সাকিব এবং মুশফিক। ৯৬ রানের জুটিও গড়েছিল দুজন। এই দুজনের ব্যাটে চড়ে যখন বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ তখন আবার ছন্দ পতন। ফার্গুসনের বলে ফিরলেন সাকিব। ৫১ বলে ৩টি চার আর দুটি ছক্কায় ৪০ রান করেন টাইগার অধিনায়ক। আগের বলে ছক্কা মেরে আবার মারতে গেলেন সাকিব। কিন্তু এবার আর হলো না। বল উঠে গেল আকাশে। অনেকটা দূর দৌড়ে গিয়ে ক্যাচটা লুপে নেন ল্যাথাম। এরপর আর বেশিদূর এগুতে পারেননি মুশফিকও। নিজের ক্যারিয়ারের ৪৮ তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর রণে ভঙ্গ দিয়েছেন মুশফিকও। ফিরেছেন ৭৫ বলে ৬৬ রান করে হেনরীর বলে বোল্ড হয়ে। ইনিংসে ৬টি চারের সাথে ২টি ছক্কা মেরেছেন মুশফিক। এরপর অপয়া ১৩ রানে ফিরেন তৌহিদ হৃদয়ও। ১৮০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে দুইশ রান হবে কিনা সে শংকায় যখন বাংলাদেশ দল তাসকিনকে নিয়ে সে শংকা দূর করে দলের রান দুইশ পার করে দেন মাহমুদুল্লাহ। অষ্টম উইকেটে ৩৪ রানের জুটি গড়ে তাসকিন ফিরেন ১৯ বলে ১৭ রান করে। এরপর বাকি ১২ বল কাটিয়ে দেন মাহমুদুল্লাহ এবং শরীফুল মিলে। শেষ ওভার থেকে ১১ রান নিতে পারে বাংলাদেশ। আর তাতে টাইগারদের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ২৪৫। মাহমুদুল্লাহ ৪৯ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন। যেখানে তিনি ২টি চার এবং ২টি ছক্কা মেরেছেন। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন লুকি ফার্গুসন। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট এবং ম্যাট হেনরী।
জবাব দিতে নামা নিউজিল্যান্ডকে শুরু থেকেই বেধে রেখেছিল বাংলাদেশের পেসাররা। নিজের দ্বিতীয় এবং ইনিংসের তৃতীয় ওভারে কিউইদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজ। সে ওভারে দুটি চার হজম করলেও ওভারের চতুর্থ বলে ইনফর্ম রাচিন রবীন্দ্রকে ফেরান মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৩ এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৫১ রান করা রবীন্দ্র ফিরেছেন ৯ রান করে। ব্যক্তিগত ৪ রানে ফিরতে পারতো ডেভন কনওয়ে। কিন্তু মোস্তাফিজের বলে পয়েন্টে দুরুহ ক্যাচটি নিতে পারেননি মিরাজ। এ দুজন প্রতিরোধটা বেশ ভালই গড়ে তুলেছিলেন। যদিও আরো একবার ভাঙতে পারতো এই জুটি। কিন্তু দলীয় ১৯ তম এবং সাকিবের তৃতীয় ওভারে উইলিয়ামসনের ক্যাচ ছাড়েন তাসকিন। ২৮ রানে ছিলেন তখন উইলিয়ামসন। অবশ্য নিজের পরের ওভারেই শেষ পর্যন্ত এ জুটি ভাঙেন সাকিব। ডেভন কনওয়েকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফেরান সাকিব। ভাঙে ৮০ রানের জুটি। কনওয়ে করেন ৫৯ বলে ৪৫ রান। এরপর উইলিয়ামসনের সাথে জুটি বাঁধেন ড্যারিল মিচেল। এ দুজন আরো সাবলিল গতিতে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। এরই মধ্যে দুজনেই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ইনজুরি থেকে ফিরে প্রথম ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন উইলিয়ামসন। মিচেলের সাথে ১০৮ রানের জুটি গড়ে ইনজুরির শিকার হয়ে অবসরে যান উইলিয়ামসন ১০৭ বলে ৭৮ রান করে। হয়তো সেঞ্চুরিটাও পেয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু ইনজুরি তা হতে দিল না। তবে দলকে জয়ের শক্ত ভিত গড়ে দিয়ে গেছেন তিনি। এরপর ফিলিপকে নিয়ে বাকি কাজটা বেশ ভালভাবেই সেরে আসেন ড্যারিল মিচেল। ৪৩ বল হাতে রেখে ছক্কা মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন মিচেল। তিনি অপরাজিত থাকেন ৬৭ বলে ৮৯ রান করে। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেয়া লুকি ফার্গুসন হয়েছেন ম্যাচসেরা।