অপুষ্টি আর খর্বাকৃতির শিশু জন্ম হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে উন্নতি অব্যাহত থাকায় ক্ষুধামুক্তির লড়াইয়ে আরো একটু এগিয়েছে বাংলাদেশ। কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে চলতি বছরের যে ‘বিশ্ব ক্ষুধা সূচক’ প্রকাশ করেছে, তাতে বাংলাদেশের স্কোর গতবারের ১৯.১ থেকে কমে ১৯ পয়েন্ট হয়েছে। এই সূচকে ১৯ স্কোর মানে হলো, যেসব দেশে ক্ষুধার সংকট মাঝারি পর্যায়ে, সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। খবর বিডিনিউজের।
অপুষ্টির হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশুর হার, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার এই চারটি মাপকাঠিতে প্রতিটি দেশের পরিস্থিতি বিচার করে তৈরি হয় গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেঙ (জিএইচআই) বা বিশ্ব ক্ষুধা সূচক।
এই সূচকে সবচেয়ে ভালো স্কোর হলো শূন্য। আর সবচেয়ে খারাপ স্কোর হলো ১০০ পয়েন্ট। স্কোর বাড়লে ক্ষুধা পরিস্থিতির অবনতি আর কমলে পরিস্থিতির উন্নতি। স্কোরের মধ্যে দেশগুলোর অবস্থানকে মোটা দাগে পাঁচটি ধাপে ভাগ করে খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতি বোঝানো হয় : স্কোর ৫০–এর বেশি হলে ‘অতি উদ্বেগজনক’। স্কোর ৩৫ থেকে ৪৯.৯–এর মধ্যে থাকলে ‘উদ্বেগজনক’। স্কোর ২০ থেকে ৩৪.৯–এর মধ্যে থাকলে ‘গুরুতর’। স্কোর ১০ থেকে ১৯.৯–এর মধ্যে থাকলে ‘মাঝারি’ (বাংলাদেশের অবস্থান)। স্কোর ৯.৯৯–এর নিচে হলে পরিস্থিতি ‘নিম্ন’।
ক্ষুধার সূচকে গত বছর ১১৬টি দেশের মধ্যে ৭৬তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। আর এ বছর ১২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশর অবস্থান ৮১তম। ২০১২ সালের পর থেকে ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। তীব্র ক্ষুধা সংকটের পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচিত স্কোর ২৮.৬ থেকে মাঝারি মাত্রার ১৯ স্কোরে নেমেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের পর থেকে যে সাতটি দেশ এই সূচকে স্কোর ৫ পয়েন্ট বা তার বেশি কমাতে পেরেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বিশ্বকে গত কয়েক বছরে যে ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, তার মধ্যেও এই উন্নতিকে ‘বড় অগ্রগতি’ হিসেবে দেখানো হয়েছে প্রতিবেদনে।
ক্ষুধার সূচকে আঞ্চলিক পর্যায়েও বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হয়েছে। স্কোরের দিক দিয়ে প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান (৪৯.৬) মিয়ানমার (৪০.২) ভারত (৩৮.৪), নেপাল (৩৭.২), পাকিস্তান (৩৬.৭) ও শ্রীলঙ্কার (২১.৭) চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। গত বছর আফগানিস্তান, মিয়ানমার, ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে ছিল। নেপালের স্কোর ছিল সমান। এই ছয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া সবগুলো দেশের অবস্থারই অবনতি হয়েছে এ বছরের সূচকে।
এবারের সূচকে সবচেয়ে কম ক্ষুধার শীর্ষ দশ দেশ হলো বেলারুশ, বসনিয়া–হার্জেগোভিনা, চিলি, চীন, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, জর্জিয়া, হাঙ্গেরি, কুয়েত, লাটভিয়া। তালিকার তলানিতে থাকা নয়টি দেশে ক্ষুধার মাত্রা রয়েছে ‘উদ্বেগজনক’ পর্যায়ে। দেশগুলো হলো সাউথ সুদান, বুরুন্ডি, সোমালিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, মাদাগাস্কার, ইয়েমেন, ডি আর কঙ্গো, লেসোথো ও নাইজার।