দুর্গা পূজার ছুটির মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকায় এক ছাত্র কনভেনশনে তিনি এই পরামর্শ দেন। ছাত্রদলের নেতৃত্বে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যে’র উদ্যোগে এই কনভেনশন হয় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। এতে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন জোটের মুখপাত্র ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল। খবর বিডিনিউজের।
পূজার পর কঠোর আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এখনো বলছি, সময় আছে। আমাদের মান্না সাহেব বলেছেন, দুর্গা পূজার কথা। ভালো কথা। দুর্গা পূজার সময় যে ছুটি থাকবে এর মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনি দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেন। লেঠা চুটে যাবে। মানুষ ভোট দিতে যাবে, আপনার তো আর প্রয়োজন নেই। হাই কোর্টের একটি মামলার শুনানিতে এক বিচারকের মন্তব্য নিয়েও বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, আমরা একটা বড় যুদ্ধে নেমেছি। সেই যুদ্ধটা হচ্ছে একটা ভয়াবহ শক্তি, যাকে আপনারা–আমরা ফ্যাসিবাদী শক্তি বলছি, যারা… বাংলাদেশটাকে তাদের বিচারকের ভাষায় জাহান্নাম বানিয়েছে, তাদেরকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার যুদ্ধে আমরা নেমেছি। এই যুদ্ধে হাত গুটিয়ে না থেকে জেগে উঠতে ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল। তিনি বলেন, মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। আপনারা যদি নিজেরা বাঁচতে চান, দেশকে বাঁচাতে চান, আপনাদের বাবা–মা–ভাই–বোনকে বাঁচাতে চান, তাহলে জেগে উঠতে হবে এবং ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে রাজপথে। লড়াই করে, সংগ্রাম করে তাদেরকে পরাজিত করতে হবে। আমাদের আজকে দৃপ্ত শপথ নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং ভয়াবহ দানবের হাত থেকে আমাদের দেশকে, আমাদের মানুষকে মুক্ত করতে হবে। আমরা আশাবাদী যে ছাত্র ঐক্য তৈরি হয়েছে এই যুবক–তরুণদের ঐক্যের মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে এই দানব ফ্যাসিবাদের পরাজয় ঘটবে।
বিএনপি নেতা বলেন, অনেকে বলেন, এখন তরুণদের সব ক্ষোভটা মোবাইল সেটে। স্ট্যাটাস দিলেই ক্ষোভ শেষ। ক্ষোভ মোবাইল সেটে দিলে শেষ হবে না। ক্ষোভ রাজপথে আসতে হবে। রাজপথে এসে তাদেরকে পরাজিত করতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে।
সরকারের বিরুদ্ধে ৬৪৮ জনকে গুম ও সহস্রাধিক নেতা–কর্মীকে হত্যার অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, এক বছরের মধ্যে ২২ জন যুব নেতা, ছাত্রনেতা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করেছে। এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কোথায়? আপনাদের মধ্যে সেই বিদ্রোহ জাগিয়ে তুলতে হবে।
সাবেক ছাত্রনেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে গত বুধবার গভীর রাতে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ফখরুল বলেন, এটা আমাদের সবার জন্য লজ্জার। বিশেষ করে তোমাদের মতো ছাত্রদের জন্য লজ্জার যে, তোমাদের একজন নেতাকে এভাবে পুলিশ অফিসার বেআইনিভাবে তার ওপর হাত তুলে তাকে আহত করেছে। কোন অবস্থায় এ্যানির মতো একজন সাহসী ছেলে আদালতে দাঁড়িয়ে বলে যে, চোর–ডাকাতকে মানুষ এভাবে মারে না, আমাকে তারা (পুলিশ) যেভাবে মেরেছে। এখান থেকে আপনারা একটা বার্তা পাবেন। সেই বার্তা হচ্ছে মুখে কুলুপ কেটে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। সবাইকে জেগে উঠতে হবে। অন্যথায় তারা আপনার মাথার ওপর চেপে বসবে। আজকে এ্যানিকে যেভাবে মেরেছে কাল আপনাদের সকলকে মারবে। সুতরাং সেই বোধটা নিয়ে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফর ও ব্রাসেলস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদরদপ্তরে আসন্ন সফর নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। তিনি বলেন, উনারা খুব আনন্দে আছেন। আমেরিকায় ১৮ দিন ঘুরে আসলেন, এখন ব্রাসেলস যাবেন। চতুর্দিকে ঘুরাঘুরি শুরু হয়েছে। এই ঘুরে ঘুরে যদি কোনো রকমে সামাল দেয়া যায়, এই চেষ্টা করছেন। আমি বলতে চাই আর ঘুরাঘুরি করে লাভ হবে না। চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ দেশের সকল মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। বাঁচতে চায় আপনাদের হাত থেকে। আপনাদের নির্যাতন–অত্যাচার–চুরি–দুর্নীতি, রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেওয়া, সব কিছু থেকে মানুষ এখন বাঁচতে চায়।
ছাত্র ঐক্যের এই কনভেনশনে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার নেতা–কর্মী অংশ নেয়। তাদের ভিড় ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গন ছাড়িয়ে বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। জোটের সমন্বয়ক ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের সভাপতিত্বে কনভেনশনে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাগপার একাংশের রাশেদ প্রধান, আরেক অংশের খন্দকার লুৎফুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূরও বক্তব্য রাখেন।