ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস সমপ্রতি যে ভয়াবহ আক্রমণ চালিয়েছে, সেটিকে নিউ ইয়র্কে হওয়া টুইন টাওয়ার হামলার (৯/১১) সঙ্গে তুলনা করেছে ইসরায়েল। এই হামলার মাস্টারমাইন্ড মোহাম্মদ দেইফ একে অভিহিত করেছেন ‘আল আকসার বন্যা’ হিসেবে, যেটি আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলের অভিযানের প্রতিশোধের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রয়টার্স হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, জেরুজালেমে ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থানে ইসরায়েলের অভিযান আরব ও মুসলিম বিশ্বকে ক্ষুব্ধ করলে ২০২১ সালের মে মাসে দেইফ পাল্টা জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ীই সর্বশেষ এই আক্রমণ; এতে ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
সূত্রটি বলছে, হামাসের এই হামলার পরিকল্পনা দীর্ঘদিনের। রমজান মাসে আল আকসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতা, ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের মারধর, তরুণ ও বয়স্কদের টেনে হিঁচড়ে মসজিদের বাইরে বের করে দেওয়ার ঘটনা থেকে পরিকল্পনার শুরু। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের সেসব দৃশ্যগুলো থেকেই হামাসের মধ্যে ক্রোধ জমাট বাঁধতে থাকে আর এটি বিস্ফোরিত হয় শনিবার ভোরে।
দেইফকে ইসরায়েল সাতবার হত্যার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০২১ সালেও তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে দেইফ কথা বলেন কম, প্রকাশ্যেও আসেন না। ফলে শনিবার হামাসের টিভি চ্যানেল যখন ঘোষণা করে দেইফ কথা বলবেন, ফিলিস্তিনিরা বুঝেছে উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটতে চলেছে।
দেইফ একটি রেকর্ড বক্তৃতায় বলেন, আজ আল আকসার ক্রোধ, আমাদের জনগণ ও জাতির ক্রোধ বিস্ফোরিত হচ্ছে। আমাদের মুজাহেদিন (যোদ্ধা), আজ তোমাদের দিন অপরাধীকে বোঝানো যে, তার শেষ সময় এসেছে।
দেইফের ছবিও আছে মাত্র তিনটি। একটি তার ২০ বছর বয়সের, অন্যটি মুখোশ পরা। তৃতীয়টি হচ্ছে তার ছায়াচিত্র, যেটি অডিও টেপটি সম্প্রচারের সময় ব্যবহার করা হয়েছে। দেইফের অবস্থান কেউ জানে না। যদিও সম্ভবত তিনি গাজার সুড়ঙ্গের গোলকধাঁধায় থাকতে পারেন। ইসরায়েলের একটি নিরাপত্তা সূত্র বলছে, দেইফ হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল।
হামাসের ঘনিষ্ঠ সূত্রটি রয়টার্সকে বলেছে, হামাসের আল কাসাম ব্রিগেড পরিচালনা করেন দেইফ। গাজায় হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের সঙ্গে যৌথভাবে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা করেছেন তিনি; তবে হামলার মূল কারিগর কে, সেটি পরিষ্কার। মাথা দুইটা, কিন্তু মাস্টারমাইন্ড একজন, বলছে সূত্রটি। এই অভিযানের তথ্য কেবল কয়েকজন হামাস নেতাই জানতেন।
১৯৪৮ সালে আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের পর তৈরি করা খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে ১৯৬৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মোহাম্মদ মাসরি, যিনি পরে ১৯৮৭ সালে ফিলিস্তিনিদের প্রথম ইন্তিফাদার সময়ে হামাসে যোগ দিয়ে হয়ে যান মোহাম্মদ দেইফ। ১৯৮৯ সালে ইসরায়েল তাকে আটক করেছিল। সেসময় তিনি প্রায় ১৬ মাস আটক ছিলেন।
গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে বিজ্ঞানের ওপর ডিগ্রি নেন দেইফ। সেখানে তিনি পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন।
শিল্পকলার প্রতি তার অনুরাগ ছিল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদন কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি। মঞ্চে কমেডিয়ান হিসেবে অভিনয়ও করেছিলেন।
হামাসের পদে এসে এই সংগঠনের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি এবং বোমা তৈরির দক্ষতার উন্নয়ন ঘটান।
হামাসের সূত্র বলছে, তাকে হত্যাচেষ্টায় ইসরায়েলের চালানো এক হামলায় একটি চোখ হারান দেইফ। এছাড়া এক পায়ে গুরুতর আঘাত পান। ২০১৪ সালে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হন দেইফের স্ত্রী, সাত মাস বয়সী ছেলে ও তিন বছরের মেয়ে।