তিন চিকিৎসক দিয়েই চলছে ওয়ার্ড

আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস চমেক হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ রাতের বেলায় থাকেন না চিকিৎসক

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ১০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ

বহুমুখী সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ। চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রায় সময় ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পুরো ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেয়ার জন্য একজন সহকারী রেজিস্ট্রারই ভরসা। এছাড়া রেজিস্ট্রারের পদই নাই। এর বাইরে অনেক বছর ধরে অধ্যাপক পদ খালি। সহযোগী অধ্যাপকের দুটি পদ থাকলেও সেই পদ দুটিও শূন্য। সহকারী অধ্যাপকের তিনটি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন দুইজন। বলা যায়, তিনজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের পুরো ওয়ার্ড। বর্তমান অবস্থায় জরুরির্ ভিত্তিতে ৩ জন ইনডোর মেডিকেল অফিসার (আইএমও) এবং একজন রেজিস্ট্রারের দরকার বলে মত দিয়েছেন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ২৩টি। তবে প্রায় সময় শয্যার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে। মনোরোগ বিভাগে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকার কারণে অনেক রাতের বেলায় চিকিৎসক কেউ থাকেন না। মানসিক রোগীরা যেহেতু ভাঙচুরমারামারি কিংবা অস্বাভাবিক আচরণ করেন, তাই চতুর্থ শ্রেণীর লোকবলের সংকটের কারণেও ওয়ার্ডে প্রায় সময় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। বর্তমানে ওয়ার্ডে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আছে ৬ জন।

চমেক হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন স্থানে গাদাগাদি করে রোগীরা শুয়ে আছেন। কেউবা চিৎকার করছেন আবার কেউ গলা ছেড়ে গান গাইছেন। রোগীর স্বজনরা জানান, রাতের বেলায় অনেক সময় রোগীরা চিৎকার চেঁচামেচি করেন। কিন্তু ওই সময় ওয়ার্ডে কোনো ডাক্তার থাকেন না। এতে প্রায় সময় অন্য রোগীদের ঘুম ভেঙে যায়। ফলে তারাও ওয়ার্ডে হট্টগোল করেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মমর্যাদাবান, অন্যের প্রতি আস্থাবোধ, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক তৈরি, গভীর অনুভূতি, অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়ার শক্তিসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের বৈশিষ্ট্য। অপরদিকে চরিত্রে এসব বৈশিষ্ট্যের অনুপস্থিতিতে একজন মানুষের ভিতের ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া বর্তমানে শিশুকিশোরদের মধ্যেও মানসিক রোগ তৈরির ক্ষেত্র বেড়েছে বহুগুণ। ইন্টারনেন্ট ভিত্তিক বিভিন্ন গেমস, শারীরিক পুষ্টিজনিত অভাব এবং বংশগত কারণেও শিশু কিশোররা মানসিক রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন কারণে মানসিক রোগী তৈরি হতে পারে। গর্ভাবস্থা ও প্রসবের পর নারীদের হরমোন সংক্রান্ত কারণসহ বিভিন্ন কারণে অনেক সময় মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তা থেকে জন্ম নেয় মানসিক রোগ। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের শরানাপন্ন হলে প্রতিটি রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়।

চমেক হাসপাতাল মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হিমাদ্রি মহাজন বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে সিজোফ্রোনিয়া এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত রোগীরাই বেশি ভর্তি রয়েছেন। মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষ বেশি অসচেতন। তাই এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

চমেক হাসপাতাল মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. পঞ্চানন আচার্য্য দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। চিকিৎসকের সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। চিকিৎসক সংকট ঘুচে গেলে রোগীদের সেবার পরিধি বাড়বে। তবে রোগীদের বিষয়ে বলতে হয়, আমাদের দেশে মানসিক রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরণের সংকোচ রয়েছে। অথচ এটি অন্য যেকোনো রোগের মতোই একটি রোগ। রোগী খুব বেশি খারাপ না হলে দেখা যায়, চিকিৎসকের কাছে আসেন না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিউজিল্যান্ডের টানা দ্বিতীয় জয়
পরবর্তী নিবন্ধচন্দনাইশে বিএনপির ২৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা