একটা শিশু জন্মগ্রহণ করার ৮ মাস পর থেকেই ‘হা’ ‘বা’ ‘তা’ ইত্যাদি শব্দগুলো আধো আধো বুলিতে বলতে থাকে। দশ মাস পর থেকে সে বাবা দাদা ইত্যাদি বলতে পারে। তারপর এক বছর হতে না হতেই শিশু বাবা–মায়ের কথা বলাকে অনুসরণ করে, তাদের মুখে বারবার বলা বিভিন্ন শব্দ বলার চেষ্টা করে, এ সময় তার চারপাশের দাদু দাদী, মা বাবার নাম, ছড়িয়ে থাকা বস্তুর নাম কিংবা প্রাণীর নাম বলার চেষ্টা করে। শিশুটি দ্বিতীয় বছরে পরতেই তিনটা শব্দ মিলিয়ে একটা বাক্য বলার চেষ্টা করে যেমন ‘আমি পানি খাবো’। তারপর আপনার সোনামণি তিন বছর গড়াতেই তার সব কথা মোটামুটি বুঝা যায়। এ হচ্ছে জন্ম থেকে একটা শিশুর কথা বলার ধরন।
কিন্তু আজকাল যুগে শহুরে দম্পতিদের বেশিরভাগ বাচ্চাদের একটা বিশাল সমস্যা দেখা যাচ্ছে। সেটা হচ্ছে ঠিক বয়সে কথা না বলা। এ সমস্যার পিছনে মূল কারণ হচ্ছে বাবা মায়ের দুজনের ব্যস্ততা। হয়তো কর্মজীবীর বাবা মারা সন্তানকে নিজের কাছের মানুষদের কাছে রেখে যাচ্ছেন কিংবা কাজের লোকদের কাছে রেখে যাচ্ছেন, তারাও হয়তো ঘরে ব্যস্ততায় সময় পার করছেন তখন সন্তানের হাতে মোবাইল ডিভাইস তুলে দিচ্ছেন, না হলে টিভি ছেড়ে বাচ্চাকে বসিয়ে রাখছেন। এতে করে বাচ্চার যে স্বাভাবিক কথা বলার সমস্যাটা হয়ে যাচ্ছে সেটা বেশিরভাগ বাবা মা কিংবা যাদের কাছে রেখে যাচ্ছেন তারা অনুধাবন করছেন না। অথবা চারপাশের আত্মীয়–স্বজন ওভাবে বুঝতে পারছেন না। বাচ্চার যখন মুখে কথা ফুটবার সময় তখন আপনারা কিন্তু বাচ্চাকে সময় দিচ্ছেন না, বাচ্চার সাথে সময় নিয়ে কথা বলছেন না, মনের ভাব আদান–প্রদান করছেন না, চোখে চোখ রেখে কথা বলা হচ্ছে না, বাচ্চার দিকে তাকিয়ে হাসা হচ্ছে না, যার কারণে বাচ্চার সবকিছু ঘিরে আছে এই মোবাইল কিংবা টিভি ডিভাইস। সে টিভি কিংবা মোবাইলে যায় দেখছে সেটাকেই মনে করছে পারিপার্শ্বিক আচার–আচরণ। সেখানে শুধু শোনার ধরনটা দেখছে কিন্তু কথা বলার প্রক্রিয়াটা সে জানছে না। যার ফলে বাচ্চার যে বয়সে যে যে শব্দগুলো বলার সময়, সে সময়ের কথাগুলো বলছে না। এটা সত্যিই একটা দুশ্চিন্তার বিষয়। আমার মনে হয় প্রত্যেকটা নতুন বাবা মাকে এ ব্যাপারে এখন থেকে চিন্তাভাবনা করে এগুতে হবে। সন্তান যখন কথা বলা শিখতে শুরু করবে তখন সন্তানের হাতে মোবাইল কিংবা টিভি ছেড়ে দেয়া যাবে না। সন্তানের সাথে অনবরত কথা বলে যেতে হবে। বাবা মা চাকরিজীবী হলে সন্তান যার কাছে রেখে যাবেন তাকেও যেন এই নিয়মটা মানতে হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে সন্তানের সঠিক বয়সে কথা না বলাটা বাবা মার জন্য একটা মানসিক যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়াবে।