এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন লেখক ও নাট্যকার ইয়ন ফসে। তিনি নরওয়ের বাসিন্দা। সুইডেনের নোবেল একাডেমি গতকাল বৃহস্পতিবার এই পুরস্কার ঘোষণা করে। ৬৪ বছর বয়সী ইয়ন ফসের লেখা নাটক ও সাহিত্যের প্রশংসা করে সুইডিশ একাডেমি বলেছে, তিনি তার লেখায় তুলে এনেছেন অনুচ্চারিত থেকে যাওয়া বহু কথা। বিশ্বজুড়ে তার লেখা নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। যে সব নাট্যকারদের নাটক এখন পৃথিবীতে সব থেকে বেশি অভিনীত হয়, তাদের মধ্যে ফসে এক জন। পাশাপাশি তার গদ্যও বহুল জনপ্রিয়। ফসের লেখার শৈলী একেবারেই তার নিজস্ব।
সাহিত্যজগতে এই শৈলী ‘ফসে মিনিমালিজম’ নামে পরিচিত। কোনো একক লেখার জন্য নয়, নোবেল কমিটি ইয়ন ফসেকে বেছে নিয়েছে তার সমগ্র সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমির ভাষায়, ইয়ন ফসের সাহিত্যকর্মের সংক্ষিপ্ত তালিকা করতে যাওয়াও কঠিন কাজ।
নোবেল পাওয়ার খবরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ইয়ন ফসে বলেছেন, তিনি অভিভূত এবং একভাবে ভীতও। তবে এও বলেছেন, একদিন যে এমন এক দিন তার জীবনে আসতে পারে, সেজন্য তিনি নিজের মনকে প্রস্তুতও করেছিলেন।
১৯৫৯ সালে জন্ম নেওয়া ইয়ন ফসে নাটক লিখেছেন ৪০টির মত। বেশ কিছু উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, শিশু সাহিত্য এবং অনুবাদগ্রন্থও এসেছে তার হাত দিয়ে। নোবেল কমিটি বলেছে, নরওয়েতে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতাকে ফসে তার লেখায় তুলে ধরেছেন শৈল্পিক সুষমায়। মানব মনের উৎকণ্ঠা আর দোদুল্যমানতার চিত্রায়ণ তিনি যেভাবে সাহিত্যে করেছেন, তারও প্রশংসা করেছে নোবেল কমিটি।
ইয়ন ফসের লেখা বিশ্বজুড়ে নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। নোবেলের আগে বহু পুরস্কার জমা হয়েছে তার ঝুলিতে। বিশ্বে যাদের নাটক এখন সবচেয়ে বেশি মঞ্চস্থ হয়, ইয়ন ফসে তাদের একজন। নোবেল কমিটি তাকে তুলনা করেছে স্যামুয়েল বেকেট, ফ্রানৎস কাফকা, টমাস বার্নহার্ড, জর্জ ট্র্যাকলের মত গ্রেটদের সঙ্গে।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান আন্দ্রেস ওলসনের ভাষায়, অনেক দিক দিয়েই চমৎকার একজন লেখক ইয়ন ফসে। কেউ যখন তার লেখা পড়বে, তা এমনভাবে তাকে ছুঁয়ে যাবে যে, তার আরও বই পড়তে হবে। তার লেখায় যেটা বিশেষ, সেটা হল নৈকট্যের অনুভূতি। উৎকণ্ঠা, নিরাপত্তাহীনতা, জীবন–মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন, এরকম যত ধরনের গভীর অনুভূতির মুখোমুখি মানুষকে হতে হয়, তার সবগুলোই ছুঁয়ে যায় তার লেখা।
বরাবরের মতই চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার চলতি বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। কোভিডের বিরুদ্ধে এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণার জন্য হাঙ্গেরিয়ান–আমেরিকান বায়োকেমিস্ট কাতালিন কারিকো এবং মার্কিন চিকিৎসক ড্রিউ ওয়াইসম্যান এবার চিকিৎসায় নোবেল জিতেছেন। মঙ্গলবার ঘোষণা হয় পদার্থবিদ্যার নোবেল। পদার্থের ভেতরে ইলেক্ট্রন কীভাবে শক্তি বিনিময় করে সেই রহস্য বুঝতে আলোক তরঙ্গের অ্যাটোসেকেন্ড পালস তৈরির পদ্ধতি নিয়ে গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পিয়েরে আগোস্তিনি, জার্মানির ফেরেন্স ক্রাউস এবং সুইডিশ গবেষক আন লিয়ের চলতি বছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল পেয়েছেন। এরপর বুধবার ঘোষণা করা হয় রসায়নের নোবেল। ন্যানো টেকনোলজির গবেষণায় কোয়ান্টাম ডটস নামের অতি ক্ষুদ্র ন্যানো পার্টিকেল উদ্ভাবন ও উন্নয়নের স্বীকৃতিতে এ বছর রসায়নের নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মুঙ্গিয়া জি বাবেন্দি, লুইস ব্রুস এবং অ্যালেক্সি একিমভ।
আজ শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ৯ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। ১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নোবেল পুরস্কার।