দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নকলের প্রবণতা আশানুরূপ কমে যাওয়ায় বহিষ্কারের সংখ্যাও কমেছে। একসময় পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে শত শত পরীক্ষার্থী বহিস্কৃত হলেও গত ক’বছরে এই সংখ্যা সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে এসেছে। গতকাল সম্পন্ন হওয়া চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় মাত্র ১২জন পরীক্ষার্থী বহিস্কৃত হয়েছে। আগের বছর যে সংখ্যা ছিল মাত্র ৫জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২৭ আগস্ট থেকে। দেশের অন্যান্য বোর্ডে ১৭ আগস্ট থেকে পরীক্ষা শুরু হলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে চট্টগ্রামের প্রথম চারটি পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। এতে করে প্রথম দিন বাংলার পরিবর্তে চট্টগ্রামের পরীক্ষার্থীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে শুরু করতে হয়েছিল এবারের পরীক্ষা।
শিক্ষাবোর্ডের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার ১ লাখ ২ হাজার ৪৬৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ছাত্র অংশ নিচ্ছে ৪৭ হাজার ৫৩২ জন, ছাত্রীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ৯২৯ জন। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০ হাজার ৭৪৫ জন, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৩৪ হাজার ৯৭০ জন ও মানবিক বিভাগ থেকে ৪৬ হাজার ৭৪৬ জন এবং গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে ৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। মোট ২৭৯টি কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে এবার। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলাধীন মোট ১১৩টি পরীক্ষা কেন্দ্রে এবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এবারের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এবার পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ১২ জন পরীক্ষার্থী বহিস্কৃত হয়েছে। লক্ষাধিক পরীক্ষার্থীর মাঝে এই সংখ্যা একেবারে নগণ্য বলে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়ন হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ভিজিলেন্স বাড়ানো হয়েছে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। আগে যেমন অভিভাবকেরাই পরীক্ষার হলে নকল সাপ্লাই দেয়ার যুদ্ধে নামতেন এখন আর তা দেখা যায় না। সবকিছু মিলে শিক্ষার মানোন্নয়নই নকলের প্রবণতা কমিয়ে দিয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তাফা কামরুল আখতার বলেন, পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষা বোর্ডের সাধারণ ও বিশেষ ভিজিলেন্স টিমের প্রত্যক্ষ ও নিবিড় তদারকি, পরীক্ষা সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক ভূমিকা, হল পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণ মান, সর্বস্তরে সামাজিক সচেতনতা তৈরি, অভিভাবকদের সচেতনতা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নকল বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে নকল প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতিতে নকলের সুযোগ কমে গেছে বলে মন্তব্য করে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, সর্বোপরি, প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষায় বর্তমান সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কঠোর ভূমিকা ও কার্যকর তত্ত্বাবধান, জাতীয় মনিটরিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন স্তরের এজেন্সির সমম্বয়ে কঠোর ও নিবিড় পরিচর্যার ফলে নকল প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে বহিস্কারের সংখ্যা কমে গেছে বলে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার উল্লেখ করেন।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, শিক্ষার মানোন্নয়নে আমরা নানাভাবে কাজ করেছি। বহুমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরো বেশ কিছু পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের আলাদা মনোযোগ রয়েছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, নকল প্রতিরোধে সরকার শক্ত অবস্থান নিয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। যার কারণে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে এখন আর আগের মতো নকলের মহোৎসব দেখা যায় না। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কোচিং সেন্টারগুলোর নিয়ন্ত্রণ এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী সামনের দিনগুলোতে শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘নকল’ বলে যাতে আর কিছু না থাকে সেই লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে জানিয়ে বলেন, আমরা বহিস্কৃতের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনবো।