সাধারণত পৃথিবীর সব নারীই অন্তত একবার হলেও মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চান। অবশ্যই প্রতিটি নারীই মা ডাক শোনার অধিকার রাখেন। কারণ এই মা শব্দটি এক অক্ষরের হলেও তার তাৎপর্য অতুলনীয়। তাই মা হওয়ার স্বপ্নটা প্রতিটি নারীর।
আচ্ছা একটি নারীর মা হওয়া কি সত্যি এতটা সহজ? সত্যি বলছি এতটাও সহজ নয়। একদম নিজেকে নিংড়ে দেওয়া লাগে এই ছোট্ট প্রাণটাকে। গর্ভে চল্লিশ সপ্তাহ আর দুধ পানে দুই বছর এই সময়টুকুতে ছোট্ট প্রাণটা মায়ের থেকে খেয়ে খেয়ে মায়ের মাঝে বড় হয়। আর সেই সময়টুকুতে মা থাকে রক্ত স্বল্পতা, হাঁটু ব্যথা, ফ্যাকাশে চোখ, ঠোঁট, খসখসে গায়ের চামড়া, মুঠে মুঠে চুল পড়া, ভুলোমন, একরাশ বিরক্তি আর খিটখিটে মেজাজ নিয়ে আরো কত শত সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় তার অন্ত নেই। তবুও মাতৃত্ব ভয়ংকর রকমের সুন্দর, আর ভয়ংকর সুন্দর মাতৃত্বের জন্যে মেয়েরা তাদের স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, ক্যারিয়ার, চাওয়া পাওয়া, ভালো লাগা মন্দ লাগা সব কিছু নিমেষেই বিষর্জন দিতে দুবার ভাবে না। মাতৃত্বের অনুভূতি একটি নারীকে সাধারণ থেকে সত্যি অসাধারণ করে তোলে। মা হওয়া কেবল অবিশ্বাস্য সুন্দর অনুভূতি নয়, নিঃশর্ত ও পবিত্র ভালোবাসার অভিজ্ঞতা, তা যদি হয় দ্বিতীয় সন্তানের মা হওয়ার অনুভূতি তবে তো আর কথাই নেই।
গত ৫ সেপ্টেম্বর আমি দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়েছি। আমার এই মা হওয়ার জার্নিটা ছিলো একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। সংসার, বাচ্চা সামলানো, পড়াশুনা, সব কিছু সামলে আবার গর্ভকালীন নানা জটিলতা যেনো আকড়ে ধরেছিলো আমাকে। সেই সব কিছুকে ঠেলে সেই ছোট্ট প্রাণটাকে পৃথিবীর আলো দেখানোর সৌভাগ্য হয়েছে আমার। গর্ভকালীন সময়ে আমার কাছের মানুষগুলোকে আমি বরাবর পাশে পেয়েছি। তাই হয়তো এমন কঠিন সময় পাড়ি দিয়ে এখন সুখ পাখির দেখা পেয়েছি। আমি আমার পরিবার, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমার সহপাঠী, সাহিত্য পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষকে আমি কাছে পেয়েছি। তারা আমাকে এই কঠিন সময়ে মানসিক শক্তি দিয়েছে। তাই হয়তো পুনরায় আমার মা হওয়ার জার্নিটা এতটা সুন্দর হয়েছিলো। তাই আমার মনে হয় গর্ভকালীন পুরো সময় যদি সকলে সেই অনাগত সন্তানের মায়ের পাশে থাকে তাহলে সেই সময়ে মায়ের যে মানসিক স্ট্রেস থাকে তা বলে আর কিছুই থাকবে না।
সত্যি মাতৃত্বের মত সুন্দর আর কিছু হতেই পারে না। তাই যারা অনাগত সন্তানের মা হতে চলেছেন এবং যারা এই মায়ের গুরুদায়িত্বটি ইতিমধ্যে পালন করছেন তাদের সকলের প্রতি আমার শুভকামনা রইলো।