বিষয় যখন নারী

প্রকৌশলী পুলক কান্তি বডুয়া | মঙ্গলবার , ৩ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ

একসময় পুরুষ নিজেকে শক্তি, দৃঢ়তা ও আগ্রাসনের দিক থেকে টিরেঙ মনে করেছিল। তারা মনে করেছিল একমাত্র তাদের মস্তিষ্কেই টেস্টোস্টেরন আছে। আর তাই তারা শক্তিমান ও প্রভাবশালী।

টেস্টোস্টেরন রেঙ নামক একটি বিখ্যাত বইতে লেখক কর্ডেলিয়া ফাইন এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘টিরেঙ যেমন ডায়নোসরের রাজা নয়, পুরুষও নারীর দেবতা নয়। যদিও হাজার হাজার মানুষ একসময় টিরেঙকেই ডায়নোসরের রাজা ভেবে ভুল করেছিল’। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, নারী ও পুরুষ দুজনের মস্তিষ্কেই টেস্টোস্টেরন আছে। আর একা টেস্টোস্টেরন পুরুষকে আগ্রাসী, প্রভাবশালী ও ঈশ্বরে পরিণত করে না।

ডোরা হরওয়ে বলেছিলেন, আমি দেবী হতে চাই না। আমি সাইবর্গ হতে চাই। কথাটি আমার কাছে দুর্দান্ত লেগেছিল। আসলেই তো তাই! পুরুষ আমাকে দেবী বলে পূজা করবে, আর পূজার নামে আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করবে, আমাকে সে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে গড়ে তুলবে, যেখানে খুশি সেখানে স্থির করে রাখবে, এইটা আমি মানতে পারি না। আমি ডায়নামিক, আমি মাল্টিডায়মেনশনাল, আমি দেবীর মতো স্থির কোনো এন্টিটি না। আমার কোনো মন্দির দরকার নেই, আমার কোনো উপাসনা বা পূজার দরকার নেই। আমি সাইবর্গ হব, আমার অর্ধেক হবে রোবটিক এবং অর্ধেক হবে ফেমিনিস্ট। আমার যা খুশি আমি তাই হব, আমি চাইলে রোবট হব, আমি চাইলে কম্পিউটার আপলোডেড কনসাসনেস হব, আমি চাইলে মেট্রিওস্কা ব্রেন হব, আমি চাইলে আমি ওয়ার্মহোল ফুটো করে এক ইউনিভার্স থেকে অন্য ইউনিভার্সে চলে যাব! আমি তোমার দেবী হতে চাই না, আমি কোনো ধর্মীয় অবজেক্ট হতে চাই না।

আমি যা কিছু করব তা আমার নিজের ইচ্ছায়, পুরুষ সবসময় নারীর কাছে নিজেকে দেবতা প্রমাণ করতে চেয়েছে, কিন্তু নারীর উচিত নয় এই পুরুষতান্ত্রিক হর্মোনকে রেসপন্স করা। তোমার যদি দেবীর দরকার হয়, তুমি পাথর দিয়ে একটা তৈরি করে নিতে পার। আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের বলছে, নারীর দেহ সন্তান উৎপাদনের জন্য মারাত্মক সব প্রকৌশল ও ক্ষমতা নিয়ে বিবর্তিত, তাদের দুর্দান্ত শারীরিক দৃঢ়তা ও ধৈর্যশীলতা। ২০১৯ সালে এলিউড কিপচোগ(পুরুষ) দুই ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিল, যেখানে ব্রিগিড কোসগেই নামক একজন নারী ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট শেষ হওয়ার পূর্বেই ম্যারাথন দৌড়ে প্রথম হয়। এগুলোই নারীর শারীরিক ক্ষমতার প্রমাণ। নারীকে তুচ্ছ একজন সেবিকা অথবা গৃহিণী বলার সময় শেষ হতে যাচ্ছে। কারণ বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানও ধীরে ধীরে নারীবাদী হয়ে উঠছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআসুন ইতিবাচক হই
পরবর্তী নিবন্ধভূগোলের গোল