হত্যাকাণ্ডে জড়িত পুত্রবধূকে সাথে নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো শ্বশুরের কাটা মাথার সন্ধান চালিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রোর কর্মকর্তারা।
নগরীর ইপিজেড এলাকায় সম্প্রতি হাসান আলী নামের ওই ব্যক্তিকে পুত্রসহ স্বজনেরা হত্যার পর কেটে টুকরো করে পতেঙ্গার কয়েকটি স্থানে ফেলে দিয়েছিল।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত পুত্রবধূ আনারকলিকে গ্রেপ্তারের পর হাসানের কাটা মাথা খোঁজার জন্য নতুন করে অভিযান শুরু করে পিবিআই। গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দিনের মতো চালানো হয় তল্লাশি কার্যক্রম। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কাটা মণ্ডুর কোনো হদিশ মিলেনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইলিয়াস খান সাংবাদিকদের বলেছেন, হাসান আলী হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তার পুত্রবধূ আনারকলিকে গত শুক্রবার কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন শনিবার তাকে আদালতে হাজির করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পুত্রবধূ আনারকলি শ্বশুর হাসান হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত নয়। তবে তিনি হত্যার আলামত গোপনে সহযোগী। প্রথমে তাকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা বাসার পাশে থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর রোববার ও সোমবার তাকে নিয়ে ভুক্তভোগী হাসানের কাটা মাথা উদ্ধারে অভিযানে যায়। পতেঙ্গার সাগর পাড়ের বিভিন্নস্থানে তন্ন তন্ন করেও হাসানের কাটা মাথার সন্ধান পাওয়া যায়নি। আজ আবারো অভিযান পরিচালনা করা হয় বলে উল্লেখ করে মোহাম্মদ ইলিয়াস খান জানান, জোয়ারের কারণে দুপুরে তল্লাশি কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। আজ (মঙ্গলবার) আবারো তল্লাশি অভিযান চালানো হবে বলেও তিনি জানান।
পিবিআই ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ ইলিয়াস খান আরও জানান, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় আনারকলির স্বামীর বাসায়। তার স্বামী সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীর। হাসানের ছোট ছেলে সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরের বাসায় হত্যাকাণ্ডের পর হাসানের মরদেহ খণ্ডবিখণ্ড করে আনারকলির লাগেজে করে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর আরেকটি থলেতে করে কাটা মাথা ফেলে দেওয়া হয়। এছাড়া শরীরের কিছু অংশ আকমল আলী রোডের একটি খালে ফেলে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায়, ইতোমধ্যে হাসান আলীর মরদেহের আঙুলের ছাপ নিয়ে তার পরিচয় শনাক্ত করে পিবিআই। গত ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে নগরের ইপিজেড থানার আকমল আলী রোড এলাকায় একটি বস্তা ভর্তি অবস্থায় মাথা ছাড়া শরীরের অবশিষ্ট অংশ উদ্ধার করা হয়।
পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তার স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও সন্তান মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করে পিবিআই। আনারকলিকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এই ঘটনায় মোট তিনজন গ্রেপ্তার হলো।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে লাগেজের ভেতর থেকে মরদেহের হাত–পা ও আঙুলের ৮ টুকরা খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। ওই সময় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা রুজু করে। মামলার এজাহারে কোনো আসামির নাম নেই। একেবারে ক্লু লেস মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয় পিবিআইকে।
পিবিআই তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে ঘটনা উদঘাটনের পাশাপাশি আসামিদেরও গ্রেপ্তার করছে।
পিবিআই ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ ইলিয়াস খান জানান, ঘটনার পর থেকে স্বামী সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরের সাথে আনারকলি পালিয়ে যায়। শুক্রবার আনারকলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তার স্বামী সফিকুর রহমান জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। জাহাঙ্গীরও অচিরেই ধরা পড়বে বলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।