সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রেরণা

খনরঞ্জন রায় | বৃহস্পতিবার , ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাটিমানুষপ্রকৃতি, অণুপরমাণুতে মিশে যাওয়া এক সাহসী রাজনৈতিক। সংকটে সন্তাপে সহমর্মিতায় ঢেউ তোলা জননী সাহসীকা। তিনি মহাশক্তি ধারণ করা এক মমতাময়ী নারী। চেহারায় স্বর্গীয় আনন্দের আভা ছড়ানো পূর্ণপ্রাণে আত্মস্বার্থহীন বোধের অকুণ্ঠ অঞ্জলী। তীক্ষ্ণ গণতান্ত্রিক চেতনা, গভীর অসাম্প্রাদায়িক বোধ, অকৃত্রিম বাঙালিত্বের গৌরব বহন করা আমাদের জননেত্রী। তিনি অনেক বেশি সচেতন, অনেক বেশি আঘাতদীর্ণ এবং সার্বিক কল্যাণ এষণায় উন্মুখ। অহংকার কিংবা আত্মগৌরবের নিশান তোলার লেশমাত্র চেষ্টা নেই। জীবনের সাদামাটা পঙক্তি ছড়িয়ে অনুপমের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে বৈচিত্র্যময় কীর্তি তাঁর।

১৫ ই আগস্টের মতো অমোচনীয় স্মৃতি নিয়ে সময়ের বেদীমূলে ব্যাতিক্রমী এক স্বাধীন স্বপ্নদ্রষ্টা। বাঙালির অস্তিত্বের মর্মমূলে ঢেউ তোলা এত বড় ঘটনার পরও তাঁকে নির্ভয় হতে দেখা যায়। শেখায় সংকীর্ণ অমানবিক আদর্শের দাসত্ব থেকে দূরে থাকতে। সময়ের অস্থিরতা, নৈরাজ্য, প্রতিবাদ, আক্রোশেও উন্নয়নের ফল্লুধারা বইয়ে দেন। স্বকীয় আর অনন্য বৈশিষ্ট্যতায় সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এক সাহসী বিদ্রোহী। গতানুগতিকতার বাইরে আগুনমাথা ঘোরলাগা এক গোপন রহস্য। বাংলা ভাষার অন্যতম যশস্বী শেখ হাসিনা প্রতি মুহূর্তে স্বয়ম্ভূ। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতির আশ্চর্য এক প্রেরণার নাম তিনি। বৈরী আর সন্দিগ্ধ এই সংকটময় জগতে তিনি চির প্রেমময় ডাক দেন। চারপাশে উষ্ণতা ছড়িয়ে বিচিত্ররূপে নিজেকে আবির্ভাব ঘটান। প্রকৃতির মতো রহস্যময় বাস্তব ও বহুদ্বান্দ্বিক পরিস্থিতিও সৌন্দর্যময়দীপ্তিময় করে তোলেন। তাঁর উপরের অভিঘাত আর নিষ্পেষণের নির্যাস নিংড়ে সকলের প্রতি নিসর্গের নির্লিপ্ত নয়নে তাকান। ঐতিহাসিকঐতিহ্য থাকার পরও বাড়তি বীরত্ব ফলাবার লেশমাত্র চেষ্টা করেন না। ক্ষমতার নির্লজ্জ অত্যাচার সহ্য করে অপার মহিমার শিখর চূড়া স্পর্শ করেছেন। বিতর্কিত বা নিন্দিত হওয়ার মতো কাণ্ডজ্ঞানহীন স্বেচ্ছাচারতাঁর অনুভবঅস্তিত্বে নেই। আছে বিচিত্ররূপের অভিব্যক্তি আর প্রচেষ্টার বিদ্যুৎচ্চমক। কত বিচিত্র ক্ষেত্রে সাহসী পদচারণার পরও তাঁর মধ্যে ন্যূনতম ক্লান্তির ছাপ নেই। আছে কেবলই বোধের অতলস্পর্শী স্বর্গীয় সব কল্পনা।

নমনিয়তা আর কমনিয়তার রসে ভরা মহীয়সী এই জননীর শৈশব কেটেছে গ্রামে। সেখানকার আলোবাতাস গায়ে মেখে বেড়ে উঠেছেন। বিনয়ের বৈষ্ণব সাজার অফুরন্ত সম্ভাবনার ছত্র সাজিয়েছেন পারিবারিকভাবেই। জন্মেছিলেন এই ভূখণ্ডে ইসলামের শাশ্বত বাণী নিয়ে আসা এক দরবেশ পরিবারের অষ্টম অধস্তন সন্তান হিসাবে। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয়া তাঁর গর্বিত পিতা আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মাতা মানবঅস্তিত্বনির্ভর মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেসা। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার জন্মস্থানেই তিনি বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে পরিবারের সাথে ঢাকায় আসেন। মোগলটুলির রজনী বোস লেন, মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবন হয়ে ১৯৬১ সালের ১লা অক্টোবর ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়িতে ওঠেন।

পারিবারিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডল ছাড়াও শিক্ষা জীবনেই তিনি রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত হন গভীরভাবে। তাঁর পিতার জীবনের উত্থানপতনের উদ্ভূত খেলায় তিনিছায়াময় যুক্ত ছিলেন। রাজনীতির সৃষ্টি ও ধ্বংস অর্জন ও বিসর্জনের কালাণুক্রমিকসূচীর গভীর মনোযোগী সঙ্গী ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাসে কোন অপরিচিত গন্ধ অনুভব করেননি। করেছেন চূড়ান্ত সার্থকতার নিদর্শন। দেশ স্বাধীনের আনন্দ বেদনা, দুঃখহাহাকার, প্রাপ্তি প্রত্যক্ষ করেছে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার বহুবিচিত্র করণকৌশল অনন্যভাবে তার সামনে ভেসে ওঠে। একের পর এক বাঁক বদল করা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সূচনা আর সমাপ্তিবিন্দুঅনুসন্ধানীদৃষ্টি নিয়ে উপলব্ধি করেছেন।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাত্রে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার সময়ও তিনি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে পিতার পাশেই ছিলেন। পরবর্তীতে মাসহ সবাইকে নিয়ে এখানেই বন্দিত্বে বসবাস করেন। বন্দিদশা থাকা অবস্থায় ২৭ জুলাই প্রথম সন্তান জয় জন্মগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু তখন হুকুমের আসামি হয়ে ফাঁসির রজুর সামনে পাকিস্তানের কারাগারে। ১৯৬৭ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে যখন বিয়ে হয় তখনো পিতা শেখ মুজিব ছিলেন চট্টগ্রামের কারাগারে। ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের অল্প কয়দিন আগে ২৯ জুলাই তিনি স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার জেদাজেদিতে জার্মানি যান। দারুণ কৌতূহলোদ্দীপক এই ঘটনা। অনাবিষ্কিৃত এক আনন্দের হাতচ্ছানি। মনোহরসুন্দরমনোরম এই যাত্রা। এই এক বিচিত্র পৃথিবীকে ভ্রু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করা। মুক্তির অসাধারণ টানাপোড়েন নিয়ে শেখ হাসিনার সাথে শেখ রেহানাও বিদেশযাত্রার সঙ্গী হয়েছিল। জীবন জিজ্ঞাসার চাবুকের সামনে এক বিষাদময় রূপকথার গল্প এখান থেকেই শুরু। বেঁচে যাওয়া দুই বোন পড়ে যান স্থায়ী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে।

পিতামাতাভ্রাতানিকটাত্মীয়সজনহীন শেখ হাসিনার জীবন নানা অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলতে থাকে। এ এক আলোকছায়ার অদ্ভুত খেলা। কখনো ভারত, কখনো বেলজিয়াম কিংবা জার্মানির অচেনা রাস্তার চৌমাথা এসে ঠেকে তাঁর জীবন। ঘোর কাটে যখন ১৭ মে ১৯৮১ সালে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেও দেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে ১৪, ১৫, ১৬ ফেব্রুয়ারির বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন সর্বসম্মতিক্রমে। শুরু করেন নতুন কিছু আবিষ্কারের আনন্দ। দেশ গঠনের নতুন পরিকল্পনার নকশা আঁকেন। স্মৃতিবিস্মৃতি, কল্পনা ও বাস্তব স্বপ্ন ও স্বপ্নহীনতার অসাধারণ সব আখ্যান রচনা করতে থাকেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে তিনি ঐতিহাসিক ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শুরু হয় দেশ গড়ার দ্বিতীয় বিপ্লব। তিনি পুনঃজাগরিত বাংলাদেশের এথেনা। এথেনা গ্রীক দেবী। সাহস, প্রজ্ঞা, কৌশল, ধৈর্য্য, ন্যায়, সংস্কৃতি প্রেরণাপ্রসূত গুণাগুণের দেবী এথেনা। এখানে গৎবাঁধা কোনো গল্পের বন্ধ বারান্দা নয়। সাহস আর মনোবলের যোগান দেয়া শক্তি। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা সেই দেবীরূপে আবির্ভূতা। সৌর্যবীর্যের বাঙালির সৌরভ ও গৌরবকে পুন:প্রতিষ্ঠায় বিপন্ন জীবন নিয়ে দণ্ডায়মান হন। দ্বিতীয় মেয়াদে ৬ জানুয়ারি ২০০৯এ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। দেশমার্তৃকার মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার পবিত্র দায়িত্ব অর্পিত হয় জাতির পিতার কন্যার কাঁধে।

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার বাংলাদেশকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার রূপকল্প ২০২১, উন্নত সমৃদ্ধ, দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য ২০৪১, ডেল্টা প্ল্যানের মতো শতবর্ষ মেয়াদি সাহসী উন্নয়ন পরিকল্পনার রূপকার শেখ হাসিনা বন্ধুর পথ অতিক্রম করছেন। সফল হচ্ছেন। দেশের জনগণ সফলতা ভোগ করছে। এখানে কোন দোদুল্যমনতা নেই। নিজের গড়া ইতিহাস অন্ধকার পটে ফেলে সাফল্যের আরেক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করছেন নিজেই। এখানেই নেত্রীর নেতৃত্বগুণ, সহনশীলতা, উদারতা আর দেশপ্রেমের রোমান্টিকতা।

লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, সমাজকর্মী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রিয় নবী
পরবর্তী নিবন্ধ‘আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতি’ জননেত্রী শেখ হাসিনা