চকরিয়ায় লিজ নেওয়া বদ্ধ জলমহাল থেকে চুরি করে মাছ ধরার অভিযোগে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে লাশ লুকানোর জন্য বেছে নেওয়া হয় মহালের কচুরিপানাকে। সেই কচুরিপানার নিচ থেকে গতকাল বুধবার সকালে স্থানীয় জনতার সহায়তায় পুলিশ ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে। এরপর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের শুকর মরা বদ্ধ জলমহালে। হত্যাকাণ্ডের শিকার যুবকের নাম মো. রাহাত হোসেন (২৪)। তিনি কোনাখালী ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল হাকিম পাড়ার মো. আলী হোসেনের পুত্র।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, খুনের শিকার রাহাতের বড় ভাইসহ কয়েকজন মিলে শুকর মরা বদ্ধ জলমহালটি লিজ নিয়ে মৎস্যচাষ করে আসছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে সেই জলমহালে চুরি করে মাছ ধরতে নামে রাহাত হোসেন। এ সময় মাছ ধরার দৃশ্য দেখে ফেলে লিজের শেয়ারদার ছৈয়দ হোসেনের ছেলে বোরহান উদ্দিন। এই অবস্থায় বোরহানের সঙ্গে তুমুল কথা কাটাকাটি হয় রাহাতের। একপর্যায়ে বোরহান তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে মাথায় সজোরে কোপ দিলে গুরুতর আহত হয়ে মারা যান রাহাত। এরপর রাহাতের লাশ গুম করার জন্য বেছে নেওয়া হয় জলমহালের কচুরিপানাকে। সেই কচুরিপানার ভেতরেই লুকিয়ে রাখা হয় রাহাতের মরদেহ।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ কচুরিপানায় লুকিয়ে রাখে বোরহান। এরপর রাহাতের বড় ভাইয়ের কাছ থেকে বোরহান জানতে চায় তার ছোট ভাই বাড়ি পৌঁছেছে কী না। তবে রাহাতের খোঁজ না পাওয়ায় তখন থেকেই সন্দেহ হয় পরিবারের সদস্যদের মাঝে। এক পর্যায়ে খুনি বোরহান পরিবার সদস্যদের নিয়ে রাতেই এলাকা ত্যাগ করে।
নির্মম খুনের শিকার রাহাতের বাবা আলী হোসেন বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে রাহাত মাছ ধরতে গেলেও আর ফিরেনি। রাত বেশি হওয়ায় খোঁজ নিতে স্টেশন এলাকায় গেলে খুনি বোরহান উদ্দিন তাকে জানায়, মাছ ধরা নিয়ে রাহাতের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয় এবং তাকে থাপ্পড় মারে বলে স্বীকার করে। এরপর সেই রাত থেকে অনেক খোঁজাখুঁজির পর বুধবার সকাল ৭টার দিকে জলমহালের কচুরিপানার ভেতর থেকে লুকানো অবস্থায় লাশের সন্ধান পাই।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ মাহমুদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় কচুরিপানার ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। এই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ প্রাপ্তিসাপেক্ষে থানায় মামলা রুজু করা হবে।
ওসি বলেন, মাছ ধরার অপরাধে রাহাতকে ধারালো দা দিয়ে কোপানোর ঘটনায় বোরহান নামের একজন জড়িত রয়েছে। তারা সম্পর্কে নিকটাত্মীয় এবং একে অপরের তালতো ভাই বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে চকরিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রকীব উর রাজা দৈনিক আজাদীকে বলেন, চুরি করে মাছ ধরার অপরাধে মাথায় দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা করা হয় কচুরিপানায়। প্রাথমিকভাবে এই তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে। তবে অন্য কোনো ঘটনা রয়েছে কী না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি ঘাতক বোরহানকে ধরতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে তৎপর রয়েছে।