‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়/ আয় রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়’। আজ ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ সালের এই দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হযরত মুহম্মদ (দ.) এর শুভ আবির্ভাব ঘটে। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদ–এ মিলাদুন্নবী (দ.) নামে পরিচিত। ৫৭০ সালের এই দিনে আরবের মক্কা নগরীর সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)। মহানবী হযরত মুহম্মদ (দ.) এর জন্মের আগে গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। ওই সময় আরবের মানুষ মহান আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এ যুগকে বলা হতো আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ।
তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করতো। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতাআলা রাসুলুল্লাহ (দ.)-কে দুনিয়ায় প্রেরণ করেন। মহানবী (দ.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত লাভ বা মহান রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভ করেন।
পবিত্র কোরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের (পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর) গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সমপ্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে। এদিকে, ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা মহানবী (দ.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মানবকল্যাণে ব্রতী হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিনটি সরকারি ছুটি। প্রিন্ট মিডিয়া বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসমূহে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
চট্টগ্রামে ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে ঐতিহাসিক জশনে জুলুস বের করা হবে।
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মা.জি.আ.)-এর নেতৃত্বে জশনে জুলুস বের করা হবে। এতে ৫০ লক্ষ লোকের সমাগম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে আয়োজক আনজুমান–এ–রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট। ট্রাস্ট নেতৃবৃন্দ জানান, জশ্নে জুলুস সকাল ৮টায় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা–এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া হতে আরম্ভ হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জারপুল, কাতালগঞ্জ, অলিখাঁ মসজিদ, চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারি (ডানে মোড়), খাস্তগীর স্কুল (ডানে মোড়), আসকারদিঘি, কাজির দেউড়ি (ডানে মোড়), আলমাস সিনেমা (বামে মোড়), ওয়াসা (ডানে মোড়), জিইসি, ২ নম্বর গেট হয়ে পুনরায় মুরাদপুর (বামে মোড়), বিবিরহাট প্রদক্ষিণ করে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন জুলুস ময়দানে শেষ হবে। এখানে দুপুর ১২টায় মাহফিল এবং মাহফিল শেষে যোহরের নামাজ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের সাজ্জাদানশীন আওলাদে রাসুল (দ.), রাহনুমায়ে শরিয়ত ও তরিক্বত হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্’র নেতৃত্বে প্রধান মেহমান থাকবেন আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ.)। বিশেষ মেহমান থাকবেন সাহেবজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মা.জিআ.)।
জুলুসে অংশগ্রহণের জন্য আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ (মা.জি.আ.), আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ (মা.জি.আ.) ও সাহেবজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মা.জি.আ.) গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম এসে পৌঁছেছেন।
এদিকে, ঈদ–এ–মিলাদুন্নবী (সা.)-এর জশনে জুলুস (আনন্দ র্যালি) উপলক্ষে মহানগরীর সড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ এ উপলক্ষে একটি রুট–ম্যাপ দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত জশনে জুলুসের রুটসমূহ হলো : নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন জামেয়া আহম্মদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জারপুল, পাঁচলাইশ থানার মোড়, কাতালগঞ্জ, অলি খাঁ মসজিদ মোড়, কেয়ারি মোড়, চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারি, খাস্তগীর স্কুল, আসকার দিঘি, কাজির দেউড়ি, আলমাস, ওয়াসা, জিইসি মোড় ও ২ নং গেইট সড়ক। জশনে জুলুস চলাকালে এসব রোডের মুখে ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ডাইভারশন প্রদান করা হবে। বিভিন্ন উপজেলাসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহন মুসল্লিদের নামিয়ে দিয়ে পার্কিং পয়েন্টসমূহের মধ্যে স্ব–স্ব সুবিধাজনক নিকটবর্তী স্থানে পার্কিং করবে। পার্কিং স্থানগুলো হচ্ছে : ফিরিঙ্গীবাজার বালুর মাঠ, সিআরবি সাত রাস্তার মাথা, পলোগ্রাউন্ড মাঠ, কদমতলী–শুভপুর বাস টার্মিনাল, অঙিজেন মোড়, বায়েজিদ লিংক রোড, আমবাগান শহীদ শাহজাহান মাঠ, বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এবং অলংকার মোড়। র্যালি চলাচলের রুটে কোনো প্রকার যানবাহন পার্কিং করে র্যালির পথে বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না। জশনে জুলুস চলাকালীন সাময়িক সময়ের জন্য বর্ণিত রুটে যান চলাচল বন্ধ থাকবে বিধায় স্বাভাবিক যান চলাচলের ক্ষেত্রে সকলকে উল্লিখিত রাস্তাসমূহ এড়িয়ে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিয়েছে সিএমপি।
পবিত্র ঈদ–এ–মিলাদুন্নবী (দ.)এর জশ্নে জুলুস ও মাহফিলসহ নামাজে অংশগ্রহণের জন্য কেন্দ্রীয় আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন ও সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সর্বস্তরের পীরভাই ও সুন্নী জনতাকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পর্ষদের চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনারের সভাপতিত্বে মহাসচিব শাহাজাদ ইবনে দিদারের সঞ্চালনায় গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় দফতরে আসন্ন জশনে জুলসে ঈদে মিলাদুন নবী (দ.) সকল কার্যক্রম সুচারুরুপে সম্পাদন করার জন্য সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অংশ নেন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান এম এ হামিদ, যুগ্মমহাসচিব মুহাম্মদ মাহাবুবুল হক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুব এলাহি সিকদার প্রমুখ।