দক্ষিণ পাহাড়তলীতে বর্জ্যাগার স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু

৫ একর ভূমি ক্রয় করেছে চসিক, কেনা হবে আরও ৪৫ একর

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর দক্ষিণ পাহাড়তলীতে নতুন ল্যান্ডফিল (বর্জ্যাগার) স্থাপনে প্রক্রিয়া শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে ৫ একর ভূমি ক্রয় করেছে সংস্থাটি। ক্রয় করা হবে আরো ৪৫ একর। সবমিলিয়ে ৫০ একর ভূূমিতে নতুন বর্জ্যাগারটি গড়ে তুলবে চসিক। এর আগে গত ১৯ মার্চ চারটি শর্ত দিয়ে চসিককে ভূমি ক্রয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। অবশ্য ২০২২ সালের ১৩ অক্টোবর নতুন ল্যান্ডফিল স্থাপনের লক্ষ্যে দক্ষিণ পাহাড়তলী তফশীলের ৫০ একর জমি ক্রয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি পত্র দেয় চসিক। ওই পত্রে ভূমি ক্রয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমতিও চাওয়া হয়।

জানা গেছে, চসিক ভূমি ক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেছে ৫০ কোটি টাকা। এখানে প্রতি শতক জমির গড় মূল্য ধরা হয় এক লাখ টাকা। হাটহাজারী ও ফতেয়াবাদ সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয় হতে সংগৃহীত মৌজাসমূহের মূল্য তালিকা অনুযায়ী পাহাড় বা টিলা শ্রেণির মৌজামূল্য প্রতি শতক ২ লাখ ৫৭৭ টাকা এবং ছনখোলা শ্রেণির মৌজামূল্য প্রতি শতক সাড়ে ৪৯ হাজার টাকা বলে মন্ত্রণালয়কে জানায় চসিক। জমি ক্রয়ের বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম। তিনি বলেন, নতুন বর্জ্যাগারটি পরিবেশ সম্মতভাবে এবং আধুনিক পদ্ধতিতে গড়ে তোলা হবে। লোকালয় থেকে দূরে হওয়ায় মানুষেরও কোনো ক্ষতি হবে না।

ক্রয়কৃত ৫ একর ভূমির মূল্য পাঁচ কোটি বলে আজাদীকে জানিয়েছেন চসিকের এস্টেট অফিসার রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ৫০ একর ভূমি ক্রয়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি আছে। ধাপে ধাপে সবটুকু জমি কেনা হবে। এক দাগে অবিক্রিত অবস্থায় ২৫ একর জমি আছে সেখানে। তা যাচাইবাছাই করে দেখছি।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩০ টন গৃহস্থালি, ৫১০ টন সড়ক ও অবকাঠামোগত এবং ৬৬০ টন মেডিকেল বর্জ্য। উৎপাদিত বর্জ্যের মধ্যে কর্পোরেশন সংগ্রহ করে দুই হাজার টন। বাকি বর্জ্য নালানর্দমা, খালবিল, নদী ও উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকে।

চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সংগৃহীত বর্জ্য দুটি ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়। বর্জ্যাগার দুটির অবস্থান হালিশহরের আনন্দবাজার এবং বায়েজিদের আরেফিন নগরে। আনন্দবাজার ল্যান্ডফিলটি গড়ে উঠেছে ৯ একর ভূমির উপর। এ ল্যান্ডফিলে নগরের ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ২২ থেকে ২৩টি ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত বর্জ্য ফেলা হয়। এছাড়া ১১ একর জায়গার উপর গড়ে উঠা বায়েজিদ আরেফিন নগরের ল্যান্ডফিলে ১৮ থেকে ১৯টি ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত বর্জ্য ফেলা হয়। এ ল্যান্ডফিল দুটো প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে লেখা একটি পত্রে চসিক জানায়, বিদ্যমান ল্যান্ডফিল দুইটির বর্জ্য ধারণ ক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এজন্য নতুনভাবে ল্যান্ডফিল স্থাপনের পাশাপাশি বর্জ্য নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে পারিবারিক, শিল্প, বাণিজ্যিক ও স্ট্রিট বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মোট বর্জ্যের পরিমাণ প্রতিবছর বেড়েই চলছে। বিশাল জনসংখ্যার এই চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রাখতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। বর্জ্য উৎপাদন যে হারে বাড়ছে সে হারে বর্জ্যের সুষ্ঠু বিন্যাস তথা ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে না।

উল্লেখ্য, চসিক প্রতিষ্ঠার পর শুরুতে শহরে নিচু এলাকা নাসিরাবাদে ল্যান্ডফিল গড়ে তোলা হয়। এলাকাটি ভরাট হয়ে গেলে এর ওপর গড়ে তোলা হয় সুগন্ধা আবাসিক এলাকা। পরে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার রউফাবাদ এলাকায় ফেলা হতো আবর্জনা। সেটাও বর্জ্যে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর শুরু হয় আরেফিন নগরে বর্জ্য ফেলা। আরেফিন নগরের জায়গাটি চসিক কবরস্থান করার নামে ক্রয় করেছিল। তাই সেখানে ময়লা ফেলায় বিভিন্ন মহল সমালোচনাও করে চসিকের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধপানছড়িতে বিজিবির ওপর হামলা, আহত ৯