নিউমার্কেট ও স্টেশন রোড এলাকা থেকে ১১ মোবাইল চোর গ্রেপ্তার

ঋত্বিক নয়ন | সোমবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

লোক সমাগম যে স্থানে যতো বেশি, সে স্থানে তাদের তৎপরতা ততো বেশি। বাসে বা টেম্পোতে উঠতে নামতে, রাজনৈতিক দলের জনসভায়, স্টেডিয়ামে খেলা চলাকালীন সময়ে, বড়ো ধরনের কনসার্টে, বিয়ে বাড়িতে বর যাত্রী বেশে, বর্ষ বরণ উৎসব কিংবা ঈদের বাজারে ভিড়ের ফাঁকে দুই আঙুলের কারসাজিতে নিমিষেই গ্রুপের অন্য সদস্যের কাছে তারা মোবাইল পাচার করে দেয়। পুরো ঘটনাটি ঘটতে সময় লাগে দুই থেকে তিন মিনিট। অভিযান শেষে সন্ধ্যায় তারা আসে রেল স্টেশনে। সেখানে আগে থেকে পূর্ব নির্ধারিত জায়গায় অপেক্ষা করতে থাকে মিডিয়াম্যান আনোয়ার ও কাউসার। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মোবাইল ফোনগুলো। তাদের সাথে অপেক্ষায় থাকে মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ী। কখনো আবার আনোয়ার ও কাউসার লোক মারফত সেগুলো পাঠিয়ে দেয় রেয়াজউদ্দিন বাজার ও তামাকুমন্ডি লেনে। ২০/২৫ মিনিটের মধ্যে চলে আসে টাকা। এভাবে দিনে ৪/৫ টি কাজ করলেই একেক জনের পকেটে ঢুকে হাজার দুয়েক টাকা। তা নিয়ে তারা কখনো ছুটে যায় অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা ইয়াবা ব্যবসায়ীর কাছে; দ্রুত কিনে দেয় সুখটান! অথবা উঠে যায় রাস্তার বিপরীতে থাকা অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে অভিযুক্ত আবাসিক হোটেলগুলোতে। সারারাত ফূর্তি শেষে পরদিন আবারো একই কাজে বের হয়। গত শনিবার রাতে থানার নিউমার্কেট ও স্টেশন রোড এলাকা থেকে এ ধরনের একটি চক্রের ১১ সদস্য ধরা পড়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশের পৃথক দুটি অভিযানে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ইয়াসিন আরাফাত (২২), মো. মাসুদ (৩২), আমিনুল ইসলাম (২০), মামুনুল ইসলাম (২২), মাঈন উদ্দিন (৩৫), ইয়াছিন হোসেন রবিন (২২), মো. সাগর (২২), জাহিদ হোসেন (২৫), মো. সোহাগ (২৫), মো. শাকিল (২৪) ও মো. ওয়াসিম (২৪)

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, পৃথক স্থান থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করে আজ (গতকাল রোববার) আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই গ্রেপ্তারকৃতরা কয়েকজন করে একেকটা গ্রুপ হয়ে আমতল, নিউমার্কেট মোড়, স্টেশন রোড এলাকা, আন্দরকিল্লা এলাকায় বাসে থাকা অফিসগামীদের মোবাইল, মহিলাদের গলা থেকে চেইন টান দিয়ে ছিনিয়ে নিতো। এছাড়া নিউমার্কেট মোড়ে যাত্রীরা যখন বাসে ওঠে তখন সবাই সংঘবদ্ধ হয়ে ঠেলাঠেলি করে মোবাইল নিয়ে নেয় এবং সন্ধ্যায় ও রাতে স্টেশনের ট্রেন যাত্রী, বাস যাত্রী ও পথচারীদের এবং রিকশায় থাকা মহিলা যাত্রীদের ছুরির ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করে। ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামি আরাফাতের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ১টি মামলা, মাসুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে ১টিসহ দুটি মামলা, ইয়াছিন হোসেন রবিনের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে এবং মাদকদ্রব্য আইনে ৩টি ও সাগরের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে এবং মাদকদ্রব্য আইনে ৫টি মামলা এবং সোহাগের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে ও মাদক আইনে ৫টি মামলা আছে। ওসি বলেন, রেল স্টেশন সংলগ্ন ৭ নম্বর বাস কাউন্টার পার্কিং, পুরাতন রেল স্টেশনের গ্রামীণ মাঠ, চোরাই মার্কেট গলি, স্টেশনের মাছের গেট, স্টেশনের জেনারেটর রুমের সামনে, সাহেদার গাঁজার স্পটসহ পুরো রেল স্টেশনে তাদের একাধিক আড্ডা রয়েছে। ডাক এলেই তারা চলে যায় কাজে।

কোতোয়ালী থানার সাবইন্সপেক্টর (এসআই) মোমিনুল ইসলাম জানান, এরা পেশাদার চোর। এদের মূল টার্গেট মোবাইল। ৪৫ জন মিলে জটলা সৃষ্টি করে মোবাইল নিয়ে চম্পট দেয়।

সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বোরহান জানান, চোরাই মোবাইল সেটের ক্রেতা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করা থাকে। মাঝে মধ্যে অগ্রিমও দিয়ে থাকে। তাই চুরির পর বিক্রি করতে তেমন সময় লাগে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটেকনাফে পরিত্যক্ত ঘর হতে হেরোইন, ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগের সাথে কোনো আপস হবে না