কেন বাড়ছে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড

অপরাধের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে

| রবিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

পত্রিকার পাতায় কত ধরনের নির্মমতার খবরই না আমাদের পড়তে হয়। বেশির ভাগ খবর খুবই নির্মম, লোমহর্ষক ও মর্মান্তিক। গত ২২ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক সংবাদে দেখা যায়, নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন ১২ নং ঘাটের কাছে একটি লাগেজ ব্যাগে থাকা দুই হাত ও দুই পা উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে মাথা ও শরীর পাওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা অন্যত্র খুন করে লাশের হাত পা ১২ নং ঘাটের কাছে এবং মাথা ও শরীর অন্যত্র ফেলা হয়েছে। পতেঙ্গা থানার ওসি আফতাব আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সিআইডিকে আমরা খবর দিয়েছি। ফিঙ্গার প্রিন্ট নিলে আমরা হয়তো পরিচয় জানতে পারবো।

আফতাব আহমেদ এ প্রসঙ্গে আজাদীকে বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে খবর পেয়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি লাগেজ ব্যাগ দেখতে পাই। ব্যাগটি থেকে গন্ধ বের হচ্ছিল। পরে ব্যাগ খুলে দেখা যায় সেখানে এক ব্যক্তির হাত ও পায়ের আটটি খণ্ডিত অংশ ভালোভাবে প্যাকেট করা অবস্থায় আছে। খুলতে গিয়ে দেখি, খুব শক্ত করে স্কচটেপ মোড়া। স্কচটেপ খোলার পর দেখা যায় পলিথিনে মোড়া হাত ও পায়ের আটটি খণ্ড। তিনি বলেন, ধারণা করছি তার বয়স ৫০ এর নিচে এবং তিনি পুরুষ।

আমাদের মনে স্বভাবত প্রশ্ন জেগেছে, কেন এই নির্মমতা। এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকায়। তাঁরা বলছেনসামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক বন্ধন ঢিলে হয়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব আর বিচারহীন সংস্কৃতির কারণে বাড়ছে সহিংতা। মানবের মধ্যে আজ দানবের উদয় ঘটেছে; ফলে বাড়ছে নির্মমতা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইদানীং খুনি শুধু খুন করেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না। ভিকটিমকে নির্মম যন্ত্রণা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারার পর বিভিন্ন অঙ্গহানি করছেন। ধর্ষণের পর খুনের ঘটনাগুলো আরও বিভৎস। কখনও কখনও ধর্ষিতার মুখমণ্ডল বা গোপনাঙ্গ বিকৃত করে দেয়া হচ্ছে। মানুষ নামের এই দানবদের নির্মমতা শিশুদের ক্ষেত্রেও দেখা দিয়েছে।নখুনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, স্বামীর হাতে স্ত্রী, স্ত্রীর হাতে স্বামী, মায়ের হাতে সন্তান, বাবার হাতে সন্তান, সন্তানের হাতে বাবামা, প্রেমিকের হাতে প্রেমিকা, প্রেমিকার হাতে প্রেমিক, চাচার হাতে ভাতিজা, ভাইয়ের হাতে ভাই অহরহ খুন হচ্ছেন। শুধু তাই নয় খুনের পর লাশকে বিকৃত করার পাশপাশি লাশ উদ্ধার হচ্ছে, শয়নকক্ষে, বাড়ির পাশে ঝোপঝাড়ে, নির্জন রাস্তায়, মাটিতে চাপা দেয়া, বস্তার ভেতর, কাদার ভেতর, পানির ট্যাংকে, ড্রেনে, ডাস্টবিন, খালডোবা, নদীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে। সহিংসতা থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, সমাজে কেউ অপরাধী হয়ে জন্ম নেন না। মানুষ অপরাধী হয়ে ওঠে পরিবেশপরিস্থিতির কারণে। বেশিরভাগ সময়ে সে পরিবেশ তার কাছের মানুষরাই তৈরি করে দেয়। কখনও কখনও সমাজে মানুষের আচরণ ও অসহযোগিতার কারণে সমাজে দ্বন্দ্ব সংঘাতের মাত্রা বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক যন্ত্রণা বা মনোকষ্টে ভুগলে এসব হতে পারে। এ জন্য কাউন্সিলিং দরকার। প্রত্যেককে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে মূল্যবোধের অভাব দেখা যায়। সারাক্ষণ মানুষের মধ্যে চাওয়াপাওয়ার প্রতিযোগিতা বাড়ছে। এই ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতাই মানুষের জীবনকে ধৈর্যহীন করে তুলছে। ফলে মানুষ ক্রমেই বিদ্বেষপরায়ণ ও হিংসুটে হয়ে উঠছে। তরুণ বয়সী ছেলেমেয়েরাও কাণ্ডজ্ঞান বিসর্জন দিয়ে নির্মম আচরণ করতে কার্পণ্য করছে না।’ হত্যার ঘটনার বিচার না হলে এমন হত্যাকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই । তাই দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হতে হবে এবং তাঁর শাস্তির ব্যবস্থাও করতে হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে শুধু তার ওপর নির্ভরশীল হলে হবে না, মূল্যবোধের যে চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, তা কীভাবে দূর করা যায়, সে ব্যাপারে সবাইকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। সমাজে যেন অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি না পায়, তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে