চকরিয়া পৌরশহর চিরিঙ্গা থেকে হাইয়েজ যোগে ডুলাহাজারায় যাওয়ার সময় গাড়ির ভেতরই সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের খপ্পরে পড়ে সদ্য এসএসসি পাস করা আবদুল্লাহ আল লাবিব নামের এক স্কুলশিক্ষার্থী। এ সময় ডুলাহাজারা স্টেশনে নামার চেষ্টা করলে গাড়ির ভেতরই কয়েকজন তাকে মুখ চেপে ধরে। এরপর সে অজ্ঞান হয়ে পড়লে লুটে নেওয়া হয় পকেটে থাকা ১৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে তাকে ফেলে দেওয়া হয় কক্সবাজার সদর থানা এলাকার একটি সড়কের ধারে। শুধু তাই নয়, লাবিবের জ্ঞান ফেরার পর সে দেখতে পায় অচেনা জায়গায় তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। এই অবস্থায় তাকে ছিনতাইকারী দলের সদস্য অপবাদ দিয়ে এক নারীর নেতৃত্বে পেটানো হয়। সেই দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
লাবিবের পরিবারের পক্ষে গতকাল শনিবার দুপুরে চকরিয়া উপজেলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরেন চাচা সরওয়ার কামাল। তাদের বাড়ি ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের গাবতলী বাজার এলাকায়।
সংবাদ সম্মেলনে চাচা সরওয়ার কামাল বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে লাবিব তার মায়ের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেনার জন্য ১৫ হাজার টাকা নিয়ে চকরিয়া পৌরশহরে আসে। মোবাইল কিনতে আরও টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তার নানার বাড়ি ডুলাহাজারা যাওয়ার জন্য পৌরশহরের আজাদ লাইব্রেরীর সামনে থেকে হাইয়েজ (মাইক্রো) গাড়িতে ওঠে। এরপর সারাদিন বাড়িতে না ফেরায় সম্ভাব্য বিভিন্নস্থানে খোঁজ নেওয়া হয়। কিন্তু হদিস না পাওয়ায় চকরিয়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। এর পর পুলিশ লাবিবের সন্ধানে তৎপরতা শুরু করে।
চাচা সরওয়ার আরও বলেন, পরের দিন দুপুরে কঙবাজার সদর থানার ফোন পেয়ে সেখানে উপস্থিত হলে থানা থেকে লাবিবকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু লাবিবকে হস্তান্তরের কয়েক ঘন্টা পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, এক নারীসহ কয়েকজন মিলে লাবিবকে ছিনতাইকারী বলতে বলতে মারধর করছে। তখন তাকে কোনো কথা বলারও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এরপর কঙবাজার সদর থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাবিবকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়।
ঘটনার বিষয়ে লাবিব জানায়, ২১ সেপ্টেম্বর সকালে যখন আমার জ্ঞান ফেরে তখন আমি দেখতে পাই একটা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আমি বসে আছি অপরিচিত একটা জায়গায়। আমি বসা থেকে ওঠে একটা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকি। তখনো আমি পুরাপুরি বুঝতে পারছিলাম না আমি কোথায়। তখন আমার পেছন থেকে একটা ছেলেকে ধাওয়া করে এক নারী দৌঁড়ে এসে আমাকে অতিক্রম করে। পরে একই নারী হঠাৎ আমার সামনে এসে শার্টের কলার চেপে ধরে বলতে থাকে এই ছেলেটাও ছিনতাইকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত। তখন আমি কিছু বলতে চাওয়ার আগেই আমাকে নির্মমভাবে মারধর করতে থাকে। লাবিব বলে, আমি পরিস্থিতির শিকার হয়েছি। আমি চকরিয়া গ্রামার স্কুল থেকে এই বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এ প্লাস নিয়ে এসএসসি পাস করেছি। কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য চট্টগ্রাম চলে যাব, তাই মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মোবাইল কিনতে গিয়ে এতবড় ঘটনার শিকার হয়েছি। আমি এই ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি।
চাচা সরওয়ার কামাল বলেন, আমার ভাইপো লাবিবকে অপহরণ ও ছিনতাই ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে শনাক্ত করা প্রয়োজন। তাই আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা কামনা করছি আমরা। এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, লিখিত অভিযোগপ্রাপ্তি সাপেক্ষে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।