দৈনন্দিন জীবনে আইন

জিয়া হাবীব আহসান | শনিবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৪:৩৬ পূর্বাহ্ণ

 

 

আসামীর পুলিশ হেফাজতে স্বীকারোক্তির মূল্য কতটুকু

পুলিশের নিকট আসামীর স্বীকারোক্তির কোনো সাক্ষ্যগত মূল্য নেই। পুলিশ অনেক সময় নির্যাতন দ্বারা তার কৃতিত্ব জাহির করার জন্য কিংবা অন্য কোনো অনুচিত কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষ স্বীকার করতে বাধ্য করতে পারে। ভয়-ভীতি, প্রলোভন, প্রতিশ্রুতি, নির্যাতন ছাড়াও যদি স্বেচ্ছা প্রণোদিত হয়ে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তি কোনো পুলিশের নিকট কোনো দোষ স্বীকার করে তথাপিও তা গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন অবস্থায় যদি সম্পূর্ণ পুলিশমুক্ত পরিবেশে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে আসামী ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট কোনো দোষ স্বীকার করে তবে তার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্যে তা ব্যবহার করা যাবে। তবে পুলিশ অফিসারের নিকট স্বীকৃতির যতটুকু আলামত উৎঘাটিত হবে ততটুকুই (তার বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যাবে। যখন আসামীর দোষ স্বীকারের ফলে কোনো পদার্থ খুঁজে পাওয়া যায় তখনও ঐ দোষ স্বীকারকে মিথ্যা বলার আর কোনো কারণ থাকে না।

মহিলাদের দেহ তল্লাশীর নিয়ম কী

(ক) মেয়েদের দেহ তল্লাশি মেয়েদের দিয়েই করাতে হবে; পুরুষের এ অধিকার নেই। (খ) দেহ তল্লাশির সময় সকল শালীনতা রক্ষা করতে হবে, সে সময় কোনো পুরুষ লোক সেখানে থাকা উচিৎ নয়।

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কোনো মহিলা যদি গর্ভবতী হয় তবে তাকে মৃত্যুদণ্ড

দিলে দুজনের ফাঁসি কার্যকরী হওয়ার সমতুল্য নয় কি

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কোনো মহিলা আসামী যদি গর্ভবতী জানা যায় তবে তাকে ফাঁসি দেয়া যায় না। উচ্চ আদলত এমতাবস্থায় গর্ভবতী আসামীর মৃত্যুদণ্ড স্থগিত রাখার আদেশ দিবেন অথবা উপযুক্ত মনে করলে দণ্ড হ্রাস করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারবে।

দেহ এবং সম্পত্তির আত্মরক্ষার জন্য আক্রমণকারীর মৃত্যু ঘটানো যায় কিনা

বাংলাদেশ দণ্ড বিধির বিধান মতে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু কিংবা গুরুতর আঘাত প্রাপ্তির আশঙ্কা থাকলে, অস্বাভাবিক লালসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে কিংবা ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কাউকে আক্রমণ করা হলে, শিশু ও নারী হরণের উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা হলে, অবৈধ আটক করার উদ্দেশ্যে হামলা করলে (যদি আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করেন যে, কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষের আশ্রয় নেওয়া যাবে না) প্রভৃতি ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি আত্মরক্ষার্থে আক্রমণকারীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারেন। এক্ষেত্রে আইনে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। অনুরূপভাবে একজন নাগরিক তার সম্পত্তিরক্ষার্থে (দস্যুতা প্রতিরোধে), রাত্রিকালে গৃহভঙ্গ করে কেউ গৃহে প্রবেশের চেষ্টা করলে, অগ্নি সংযোগ দ্বারা মানুষের বসতগৃহ, সম্পদ রাখার স্থান হিসাবে ব্যবহৃত গৃহ, তাঁবু কিংবা যানবাহনের ক্ষতি সাধন করলে, চুরি, ক্ষতি কিংবা গৃহে অনধিকার প্রবেশের ফলে যদি কারো মৃত্যু বা গুরুতর জখমের আশঙ্কা থাকে তবে এসব ক্ষেত্রে আক্রমণকারীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যেতে পারে। পৃথিবীর সর্বত্র ‘রাইট অফ প্রাইভেট ডিফেন্স’ বা আত্মরক্ষার অধিকার একটি সর্বসম্মত মৌলিক মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার। তবে আত্মরক্ষার এই অলংঘণীয় অধিকারকে কেউ যেন মানুষ খুনের লাইসেন্স কিংবা আক্রমণের অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করতে না পারে তার জন্যে আইনে এর সীমা বর্ণনা করা হয়েছে। যুক্তিসংগতভাবে মৃত্যু বা গুরুতর আঘাতের আশঙ্কা ব্যতীত এ অধিকার প্রয়োগ করা যায় না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সরকারি কর্মচারী রাস্তার পাশ থেকে বেআইনী দখল উৎখাত করতে গেলে তার বিরুদ্ধে সম্পত্তি রক্ষার জন্য কোনো অধিকার জন্মায় না। তাছাড়া আক্রমণকারী যখন পরাজিত, ভূপতিত, অস্ত্রচ্যুত হয় কিংবা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তখন তাকে খুন করা যাবে না। নিজে কাউকে উত্তেজিত করে আক্রমণ করে পরে আক্রমণকারীকে হত্যা করে ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অজুহাত তোলা যায় না। অর্থাৎ এ অধিকারের ক্ষেত্র খুবই সংকীর্ণ। সততা এবং সদ বিশ্বাসের সাথে এটা ব্যবহার্য।

কে ফৌজদারী মামলা দায়ের করতে পারেন

আহত-ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে কিংবা অপরাধ সম্পর্কে অবহিত আছেন এরূপ যে কোনো ব্যক্তি নালিশ রুজু করতে পারবেন। নালিশকারী ভিকটিম বা অপরাধটি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে আইনে এমন কোনো কথা নেই।

ফৌজদারী আইনে অভিযোগ দায়েরের সময়সীমা কত দিন

ফৌজদারী আইনে কোনো অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করার কোনো নির্দিষ্ট সময় সীমা নেই। তবে বিলম্ব ন্যায় বিচারকে বাধাগ্রস্ত করে। ‘অধিক বিলম্বের কারণে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে, ফলে ইবহবভরঃ ড়ভ ফড়ঁষনঃ আসামীর পক্ষে যেতে পারে, উচ্চ আদলতের বিভিন্ন নজীরে উল্লেখ আছে, DELAY LODGING F.I.R NOT EXPLAINED SATISFACTORY, HELD ALWAYS FATAL TO PROSECUTION’ তবে যুক্তিযুক্ত কারণে বিলম্ব ফৌজদারী আইন মওকুফ করে, এফ আই আর এ বিলম্বের যথাযথ কারণ অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। যেমন-গুরুতর আহত, নিহত ব্যক্তিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা, থানায় এজাহার গ্রহণে অস্বীকার করায় সরাসরি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আসতে বিলম্ব হওয়া ইত্যাদি অথবা বিলম্বের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা বা পর্যাপ্ত কারণ এজাহারে উল্লেখ থাকতে হবে।

লেখক : আইনজীবী, কলামিস্ট, সু-শাসন ও মানবাধিকার কর্মী

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমার বাবা
পরবর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে