অজ্ঞান পার্টি–মলম পার্টির দিন শেষ; বাজারে এসেছে ভয়ংকর মাদক স্কোপোলামিন, যা ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের শ্বাস’ নামে পরিচিত। এটির মাধ্যমে টার্গেট ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে অর্থাৎ হাতের পুতুল করে সর্বস্ব লুটে নেয় অপরাধীরা। বর্তমানে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এই ভয়ংকর মাদকের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় রয়েছে এ ধরনের মাদক–সংশ্লিষ্ট অপরাধী চক্র। এই মাদকের সংস্পর্শে এলে টার্গেট ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অপরাধীদের কাছে। মাদক স্কোপোলামিনের ব্যবসায় দেশীয় চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকরাও। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র বলেন, যে কেউ যেকোনও সময় এ ধরনের মাদকের অপব্যবহারের ফাঁদে পড়তে পারেন। তিনি বলেন, স্কোপোলামিন নামের এই মাদকটি হ্যালুসিয়েশন সৃষ্টি করে থাকে। মাদক মাখা কোনও কাগজ টার্গেট ব্যক্তির সামনে ধরলে শ্বাস–প্রশ্বাসের মাধ্যমে তার শরীরে ঢুকে যায়। তখন ওই ব্যক্তি অপরাধীর ‘হাতের পুতুল’ হয়ে যায়। এক কথায় রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে যেভাবে কোনও কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়, ঠিক সেভাবেই টার্গেট ব্যক্তিদের এই মাদক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এভাবে অপরাধী চক্রগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। এমনকি টার্গেট ব্যক্তিকে দিয়ে যেকোনও ধরনের অঘটনও ঘটানো সম্ভব।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী দেশে এখন পর্যন্ত ২৫ ধরনের মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, চোলাই মদ, দেশি মদ, বিদেশি মদ, বিয়ার, রেক্টিফাইড স্পিরিট, ডিনেচার্ড স্পিরিট, তাড়ি, প্যাথেড্রিন, বুপ্রেনরফিন (টি.ডি. জেসিক ইঞ্জেকশন), ভাং, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড ওয়াশ (জাওয়া), বুপ্রেনরফিন (বনোজেসিক ইঞ্জেকশন), মরফিন, আইস পিল, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টলুইন, পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ও মিথাইল–ইথাইল কিটোন ও এলএসডি। কিন্তু এর থেকেও ভয়াবহ মাদক হচ্ছে স্কোপোলামিন বা ডেভিলস ব্রেথ।
জানা গেছে, বাংলাদেশে যে ধুতরা ফুল পাওয়া যায় এটিও অনেকটা একই রকম দেখতে এবং একই প্রজাতিভুক্ত। ভয়ঙ্কর সুন্দর স্কোপোলামিন মূলত নাইটশেড পরিবারভুক্ত ফুলের গাছ। একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই গাছের বীজ থেকে তৈরি করা হয় ভয়ংকর ড্রাগটি।
অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, শ্বাস–প্রশ্বাসের মাধ্যমে টার্গেট করা নারী বা পুরুষের শরীরে এই মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে অপরাধী চক্র তাদেরকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এছাড়া পানির সঙ্গে মিশিয়েও পান করানো হচ্ছে এই মাদক। শ্বাস–প্রশ্বাস কিংবা পানি খাওয়ার মধ্য দিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তি অপরাধীদের ‘হাতের পুতুলে’ পরিণত হয়। দেশে এ ধরনের মাদকের সন্ধান পায়নি অধিদফতর। তবে এটি ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়–এমন তথ্য রয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে। তারা জানায়, স্কোপোলামিন বা ডেভিলস ব্রেথের ভয়াবহতা ঠেকাতে এরইমধ্যে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সতর্কতা বাড়িয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্কোপোলামিন মাদকটি অপরাধী চক্রের কাছে ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের শ্বাস’ নামেও পরিচিত। এই মাদকটি হ্যালুসিয়েশন সৃষ্টিতে কাজ করে। মাদকটি বেশি তৈরি হয় কলম্বিয়ায়, যার বড় বাজার রয়েছে মেঙিকোতে। মাদকসেবীরা এটি সেবন করে নিজেদের চিন্তাশক্তি হারিয়ে অপার্থিব কল্পনার শক্তিতে চলে যায়। দেশে এই মাদক ব্যবহার করে অপরাধ কর্মকাণ্ডে সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন অপরাধী চক্র। তারা প্রথমে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে তার কাছ থেকে মূল্যবান স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা নিয়ে নেয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন্স ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের অভিযানে এ ধরনের কোনও মাদকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের কাছে যেসব গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যখনই যে ধরনের মাদকের বিষয়ে তথ্য আসে, আমরা সে অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করছি।