পরিবারের অনুশাসন থেকে রক্ষা পাওয়া এবং ‘স্বাধীন’ জীবনযাপনের ইচ্ছায় ঘর ছেড়েছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে নগরীর হাজী মুহম্মদ মহসিন স্কুলের ছাত্র হৃদয় বড়ুয়া (১৪)। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় তাকে নগরীর জয়নগর এলাকা থেকে উদ্ধার করে মা–বাবার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছে চকবাজার থানা পুলিশ। এর মাধ্যমে শুধু তার পরিবারই নয়, উৎকণ্ঠিত নগরবাসীও হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। কারণ এর আগে গত ২৯ আগস্ট একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির আরেক ছাত্র অদ্রিপ অহন সায়ান (১৩) নিখোঁজ হয়েছিল। দুইদিন পর বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) দুপুর ২টায় কর্ণফুলী নদীর অভয়মিত্র ঘাট এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে নৌ–পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, তার সাথে অন্য স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীর সম্পর্ক ছিল। সেই বিষয়টি পরিবার জেনে গিয়েছিল। পরিবারের শাসনের ভয়ে সায়ান আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে। হৃদয়ের নিখোঁজ রহস্য নিয়ে এমন কিছু সন্দেহ ছিল পুলিশের। চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনজুর কাদের মজুমদার আজাদীকে বলেন, পড়ালেখার চাপ সইতে না পেরে এবং পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে বাসা থেকে চলে যায় হৃদয়। খুব ভালো লাগছে যে তার মা–বাবার বুকে ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি।
হৃদয়ের মা সুবর্ণা বড়ুয়া তার নিখোঁজের সংবাদ জানাতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেন, চকবাজার এলাকায় ভাড়া বাসায় বাবা–মায়ের সঙ্গে থাকতো হৃদয়। সোমবার বিকেল তিনটার দিকে তিনি হৃদয়কে তার বোনকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতে বলেন। হৃদয় নিমরাজি হয়ে বোনকে নিয়ে আসে। এরপর মাকে বলে বাসার নিচে খেলতে নামে। এর কিছুক্ষণ পরে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে সুবর্ণা বড়ুয়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনে যাওয়ার সময় হৃদয়কে বাসার চাবি দিয়ে বলে যান যে, বাসায় তার বোন একা আছে। অন্যদিনের মতো মায়ের কাছে জানতে চায়নি সে, ‘কখন আসবে, কতক্ষণ লাগবে’! কিছুক্ষণ পর তাঁর মেয়ের গৃহশিক্ষক তাঁকে ফোন দিয়ে জানান, হৃদয়ের গৃহশিক্ষক এসে বসে আছেন, কিন্তু সে বাসায় নেই।
এ ঘটনায় চকবাজার থানায় একটি জিডি করা হয়। পরবর্তীতে পুলিশের অনুসন্ধানে দেখা যায়, সে তার দশ হাজার টাকা মূল্যের সাইকেলটি ৩ হাজার ৭৫০ টাকা দিয়ে বিক্রি করে সেই টাকা নিয়েই উধাও হয়েছে। দুই দিন পর গতকাল বুধবার তাকে কাজীর দেউড়ি এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ফেনীতে রাত পোহানোর পর নগরে ফিরে সে ঘুরে বেড়াচ্ছিল বিভিন্ন এলাকায়।
ওসি বলেন, আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল হৃদয়ের সে সেদিনই চলে যাবে। বাসার নিচ থেকে মাকে বিদায় দেওয়ার পর সে সেখান থেকে সোজা চলে যায় রেল
স্টেশনে। আর রাতের ট্রেনে করে ফেনীতে চলে যায়। সেখানে রাত কাটিয়ে পরদিন ট্রেনে চড়ে চট্টগ্রামে চলে আসে। সাইকেল বিক্রির টাকা দিয়েই সে ফেনী আর চট্টগ্রাম ঘোরাঘুরি করে। তবে তার কাছে আর টাকা না থাকায় চট্টগ্রামে এসে ঘোরাঘুরি করে।
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহজালাল বলেন, চট্টগ্রামে এসে বাসায় না গিয়ে সে বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করছিল। পরে খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।